বাংলাদেশ-পাকিস্তানের প্রেমিকযুগলের বিয়ে থামাতে পারেনি করোনা

প্রকাশ | ২১ মে ২০২০, ২১:৫৩

শামীম কাদির, জয়পুরহাট

করোনাভাইরাস বিশ্বকে উলট-পালট করলেও ভালোবাসার কাছে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশের জয়পুরহাট ও পাকিস্তানের প্রেমিকযুগল অনলাইনে বিয়ে করার মধ্যদিয়ে সেই সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় জয়পুরহাট পৌর শহরের কাশিয়াবাড়ি এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

তাদের পারিবারিক সূত্র জানায়, মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে মুরসালিন সাবরিনা আমেরিকান অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি অফ দ্য পিপল’-এ লেখাপড়া করছেন ২০১৮ সাল থেকে। সেখানে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন সাবরিনা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা অবস্থায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ইয়েমার-এর মাধ্যমে পরিচয় ঘটে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান শাহরুখনে আলম কলোনির যুবক মুহাম্মদ উমেরের সাথে। উমেরের বাবা বিলাল আহম্মেদ বড় ধরনের সবজি ও ফল ব্যবসায়ী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনলাইনে তাদের পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৯ সালে তাদের এই প্রেমের সম্পর্ক জানাজানি হয় উভয় পক্ষের অভিভাবকদের মাঝে। এরপর উভয় পরিবারের অভিভাবকরা তাদের বিবাহ সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক উমের এবং তার পরিবার বাংলাদেশে আসার জন্য ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ভিসার জন্য আবেদন করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জয়পুরহাটে সাবরিনা এবং তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেয় স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ভিসা নিয়ে মার্চ মাসেই উমেরের পরিবার বাংলাদেশে এসে বিয়ে সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু বাধ সাধে করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে স্থগিত হয়ে যায় তাদের ভালোবাসার বিয়ে। বিয়ে স্থগিত হলেও সাবরিনা এবং উমের অনলাইনে তাদের প্রেমের সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন।

তাদের প্রেমের এই সম্পর্ক উভয় পরিবার মেনে নিলেও মুসলিম শরিয়ত মতে অবৈধ হওয়ায় আপত্তি তোলেন উমেরের বাবা বিলাল আহম্মেদ। তিনি তাদের যোগাযোগের বৈধতা দিতে সাবরিনার বাবার সাথে যোগাযোগ করে অনলাইনে বিয়ের প্রস্তাব করেন। বিষয়টি মেনে নিয়ে উভয় পরিবার বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় অনলাইনে তাদের বিয়ে সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী বিকাল ৫টায় সাবরিনার বাড়িতে স্বজন ও স্থানীয় প্রতিবেশীদের নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিয়ের আয়োজন করা হয়। অনলাইনে তাদের বিয়ে পড়ান মাওলানা মোস্তাফিুজর রহমান। এ সময় অনলাইনে সাবরিনার কবুল পড়া শোনানো হয় বর উমের এবং তার বাবা বিলাল আহম্মেদকে। একইভাবে অনলাইনে উমেরও তার প্রেমিক মুরসালিন সাবরিনাকে স্ত্রী হিসেবে কবুল করে নেন।

মুরসালিন সাবরিনার বাবা ব্যাংক কর্মকর্তা মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, মেয়ের সাথে পাকিস্তানি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক প্রথমে তিনি মেনে নিতে চাননি। কিন্তু পরে তাদের খোঁজ নিয়ে খুব ভালো লেগেছে। তাদের পরিবার খুবই ভালো। তাই মেয়ের বিয়ে দিতে সম্মত হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই বিয়ে সম্পন্ন করেছি।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই জামাই এবং তার পরিবার দেশে এসে অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মেয়েকে নিয়ে যাবেন। তিনি মেয়ে-জামাইয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।

(ঢাকাটাইমস/২১মে/এলএ)