ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে সাগরে প্রাণ গেল সাবেক ডব্লিউডব্লিউই তারকার

প্রকাশ | ২২ মে ২০২০, ০৮:২৪ | আপডেট: ২২ মে ২০২০, ০৯:৩০

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

পরিবার আগে, পরে সবকিছু- শ্যাড গ্যাসপার্ডের কাছে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় সত্যি। সেখানে ছেলের জন্য জীবনও বাজি রাখবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই বাজি আর জেতা হলো না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রেসলার গ্যাসপার্ডের। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে সাগরে ডুবে প্রাণ হারালেন ডব্লিউডব্লিউই-এর সাবেক এই তারকা। 

গত রোববার স্রোতের কারণে সমুদ্রে ভেসে যান গ্যাসপার্ড। পরিবার আশায় ছিল, জীবন যুদ্ধে লড়াকু গ্যাসপার্ড ফিরে আসবেন। তিনদিন ধরে অপেক্ষায় থাকলেও এমনটি হয়নি। বুধবার সমুদ্র তীরে খুঁজে পাওয়া গেছে তার মৃতদেহ। 

করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন লকডাউন অবস্থায় ছিল। সব জায়গার মতো সমুদ্র সৈকতও বন্ধ ছিল। লকডাউনের পর সমুদ্র সৈকত খুলে দেওয়া হয়। রোববার ছেলে আরিয়েহকে নিয়ে সৈকতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন গ্যাসপার্ড।

১০ বছর বয়সী আরিয়েহকে নিয়ে কোমর পানিতে নেমে যান সাবেক এই রেসলার। সাতার কাটছিলেন তারা। এ সময় হঠাৎ তীব্র এক স্রোত তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তীর থেকে প্রায় ৭৫ গজ দূরে গ্যাসপার্ড ও তার ছেলেকে দেখতে পান এক লাইফগার্ড। 

তাদের বাঁচাতে ছুটে যান তিনি। কিন্তু ২ মিটারেরও বেশি বড় ঢেউয়ের মাঝে রেসকিউ ক্যান বাঁধাটা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। গ্যাসপার্ডের ছেলে আরিয়েহ রেসকিউ ক্যান বাঁধতে পারছিল না। পরিবারের জন্য অন্তপ্রাণ গ্যাসপার্ড তখন ছেলেকে আগে বাঁচানোর জন্য লাইফগার্ডকে বলেন।

ঢেউয়ের মাঝে ছেলেকে অমন অবস্থায় দেখে সহ্য হচ্ছিল না বাবা গ্যাসপার্ডের। নিজের কথা ভুলে লাইফগার্ডকে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে বাঁচান, শুধু ওকে বাঁচান।’ এরপর গ্যাসপার্ড আর কোনো কথা বলার সুযোগ পাননি। ভেসে চলে গেছেন সাগরে। 

গ্যাসপার্ডকেও বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন লাইফগার্ড। আরিয়েহকে তীরে রেখেই আবার ছোটেন লাইফগার্ড। ফিরতে মাত্র ৬০ সেকেন্ড সময় নেন তিনি। ফিরে গ্যাসপার্ডকে দেখতেও পান তিনি। কিন্তু এর মধ্যে বিশাল এক ঢেউয়ের আঘাতে ডুবে যান গ্যাসপার্ড। আর দেখা মেলেনি তার। 

রোববার নিখোঁজের পর গ্যাসপার্ডের সন্ধানে সাতটি উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। কিন্তু প্রায় ১৬০ ঘন্টার উদ্ধার কার্যক্রমে কোনো লাভ হয়নি। এরপর উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিখোঁজের তিনদিন পর সমুদ্র তীরে একটি মৃতদেহ খুঁজে পায় পুলিশ। এরপর নিশ্চিত করা হয়, এটা গ্যাসপার্ডের শরীর। 

ওই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ বলেছে, ‘লাইফগার্ড যখন গ্যাসপার্ডকে শেষবারের মতো দেখতে পায়, তখনই বিশাল একটি ঢেউ আছড়ে পড়ে। তাতে ডুবে যান গ্যাসপার্ড।’

গ্যাসপার্ডের স্ত্রী সিলিয়ানা গ্যাসপার্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা তাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, যিনি প্রথমে এগিয়ে গিয়ে আরিয়েহকে বাঁচিয়েছেন। আমাদের প্রিয় শ্যাডকে খোঁজার কার্যক্রম চালানোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই সব লাইফগার্ড, কোস্ট কার্ড, চালক ও পুলিশ বাহিনীকে।’

স্কুলে থাকা অবস্থায় সব ধরনের খেলাধুলা করতেন গ্যাসপার্ড। একটা সময়ে এসে পেশাদার রেসলার হবেন বলে মনকে স্থির করেন তিনি। ২০০২ সালে ‘টাফ এনাফ’ নামে এক টেলিভিশন রিয়েলিটি শো-এর ফাইনালে ওঠেন তিনি। যদিও লড়াইটি জেতা হয়নি তার।

এরপর ডব্লিউডব্লিউই- এর জন্য স্কাউট করা টম প্রিচার্ডের চোখে পড়েন গ্যাসপার্ড। প্রিচার্ডই তাকে পেশাদার রেসলার হয়ে উঠতে সাহায্য করেন। ২০০৩ সালে ডব্লিউডব্লিউইতে অভিষেক হয় গ্যাসপার্ডের। ক্রাইম টাইম জুটি দিয়ে ডব্লিউডব্লিউইতে জনপ্রিয় হন তিনি। 

২০০৮ সালে জনপ্রিয় রেসলার জন সেনার সঙ্গে কিছুদিনের জন্য জুটি বাঁধেন গ্যাসপার্ড। ২০১০ সালে রেসলিং থেকে অবসর নেন তিনি। এরপর ছোট পরিসরে টিভি ও চলচ্চিত্রে অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন গ্যাসপার্ড। বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা কেভিন কার্টের ‘গেট হার্ড’- এ কাজ করেছেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২২ মে/এআইএ)