লোক জীবনের চরিত্রের প্রস্থান

প্রকাশ | ২২ মে ২০২০, ১৬:৩৫

ইমরান উজ-জামান

২০১৫ সালে একটা স্বীকৃতি পেয়েছিলাম। সেই স্বীকৃতির কথা আজকে মনে পড়ার কারনটাই বলতে চাই।

আমার লোক ভাবনা আর লোক প্রীতির আতুরঘর হলো মাঝিবাড়ির অশ্বথ গাছ, রমির বাড়ির গাব গাছ, প্রাণের কালিদাস সায়র, রজতরেখা নদী।

বর্ষার দিনে টরকী গ্রামসহ অত্র এলাকার মানুষ পুরাই গৃহবন্দী থাকতেন। চারদিকে পানি থৈ থৈ। দু-দন্ড ফুরসতের জায়গা ছিলো, রমির বাড়ির(রমি ফুফু) গাব গাছ, আখ খেতের উইক্কা(তাবু বলা যায়, যা কিনা আখ খেতে পানির মধ্যে অনেক লম্বা লম্বা বাঁশের গাথুনি দিয়ে তার মাথায় ছোট ঘর) আর মাঝি বাড়ির অশ্বথ।বর্ষায় ভরা দুপুরে কোথাও কেউ নেই, আমি একা মাঝিবাড়ির অশ্বথ গাছের মগডালে শুয়ে শুয়ে গাছের পাতা দিয়ে চশমা, ঘড়ি বানাই। আর অসীম আকাশ, টেকের কালিদাসের জল, বিস্তীর্ন মেঘনার চিকচিক জল দেখি আর ভাবি ইস কিভাবে বলা যায় এত সুন্দরের কথা!!

আজ আমি লিখতে পারি সেই সুন্দরের কথা। কিন্তু সেই মাঝিবাড়ির অশ্বথের কাছে যাওয়ার, দু-দন্ড বসার সময় নাই আমার।মাঝিবাড়িটি যার, তার নাম সোনামিয়া মাঝি। আসলে তিনি পেশায় একজন জাহাজের সারেং ছিলেন। তার দুই ছেলে আব্দুল আজিজ ও আব্দুল হামিদ।হামিদ মাঝির সঙ্গে মাঝি বাড়ির কাঠের পুুলে নানা স্মৃতি। বর্ষায় আড্ডার বিশেষ জায়গা ছিলো এই ব্রীজ আর হামিদ মাঝি। আরেকজন ছিলেন আলি আহম্মদ। তার পিঠে একটা বিশাল কুজো ছিলো।

আমাদের পাড়ার খুব পরিচিতজন হাওয়ামন বুজি। সকলে তাকে এই নামেই চিনতেন। বুজি মানে আপা।বাপ -বেটা-কন্যা সকলের কাছে তিনি হাওয়ামন বুজি। আমাদের ছোট বেলার রূপকথার চরিত্র।প্রতিদিন একবার মায়ের কাছে না আসলে ওনার ভাত হজম হতো না।

ঘরের দরজায় পা দিয়েই বলতেন ‘ও আম্মা আপনের পুইন্না(পালক) পোলাডা কিছু খাইছে? ‘ আমার কান্না দেখে কে! আরো কেউ কেউ এই কথাটা বলতো। এক সময় কিন্তু আমি মনে করা শুরু করলাম আামাকে পালক আনা হয়েছে। কি যে কষ্ট পেতাম। পরে অবশ্য বুঝেছি ওনারা মজা করার জন্য এটা বলেন।

সকাল আর বিকাল হামিদ মাঝি আর হাওয়ামন বুঝি এই দুইজন মানুষ করোনায় বিদায় নিলেন। যদিও গত আড়া্ই দশক তাদের সঙ্গে দেখা নাই। তবু মনের গহীনে একটা বেদনা অনুভব করছি। আমার লোক জীবনের পাত্র-পাত্রীরা বিদায় নিতে শুরু করেছেন।

লেখক: সাংবাদিক বিটিভি

ঢাকাটাইমস/২২মে/এসকেএস