কলাপাড়ায় বেড়িবাঁধ না থাকায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ মে ২০২০, ১৭:৪৫

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় সুপার ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে আট শতাধিক ঘড়বাড়ি ও পাঁচ হাজার পরিবারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গোটা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেড়িবাধ সংলগ্ন মানুষগুলোর।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে সুপার ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রচণ্ড বাতাসের গতি ও স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধিতে এ ইউনিয়নের শত শত ঘড়বাড়ি ও কয়েক হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের পশরবুনিয়া, চাড়িপাড়া, নাওয়াপাড়া ও হাছনা পাড়াসহ প্রায় ১৭টি গ্রাম ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের এ গ্রামগুলোর বেড়িবাঁধ আগে থেকেই বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙা ও দুর্বল ছিল। ফলে খুব সহজেই পানি ভিতরে ঢুকে এসব গ্রামকে প্লাবিত করে ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। গ্রামের এমন কোনো বাড়ি নেই যাদের কোনো না কোনো ক্ষতি হয়নি। কারো থাকার ঘর, কারো পাকের ঘর আবার কারো গরু ঘর উড়িয়ে নিয়েছে সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড় আম্পান।

পশরবুনিয়া গ্রামের জাকির গাজি, রাসেল ফরাজি, মিলন মাতব্বর, জবির মাতব্বর, সেলিম মাতব্বর ও নূর সায়েদ মুন্সির ঘরসহ অনেকগুলো ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এদের কারো ঘর উড়িয়ে নিয়েছে আবার কারো ঘড় আছে কিন্তু ঘরের ভিটে মাটি পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। একই গ্রামের আমির হোসেন খলিফা, কাশেম খলিফা, হাসেম খলিফা এমনকি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সীমাসহ অনেকের মাছের ঘেড় ও পুকুর পানিতে তলিয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রামের ভিতরে ঢুকতে রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন ধরনের গাছ-পালা পরে থাকতেও দেখা যায়।

পশুরবুনিয়া গ্রামের বশির মোল্লা তার কলা গাছের বাগান দেখিয়ে বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক কষ্ট করে সবরি কলা গাছের বাগান করে ছিলাম। ঝড়ে আমার সবগুলো গাছ ভেঙে উপরে ফেলেছে।

এছাড়াও চাড়িপাড়া গ্রামের বেড়িবাধ সংলগ্ন এলাকার মানুষগুলোকে চড়ম দুর্দশা গ্রস্ত অবস্থায় দেখা গেছে।

চাড়িপাড়া গ্রামের শানু হাওলাদার, আলমগীর হাওলাদার ও আসমত আলী হাওলাদারসহ অনেকেই তাদের চড়ম দুর্ভোগ ও সর্বোস্ব হারানোর কথা জানান। তারা বলেন, এখানকার বেড়িবাঁধটি দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা রয়েছে। স্থায়ী সমাধান না হলে প্রতি বছরই আমাদের বন্যার কবলে পড়তে হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে আমাদের সব কিছু হারিয়ে আজ পথে বসতে হচ্ছে। এখন সরকারের তরফ হতে কোন সহায়তা না পেলে আমাদের দাঁড়ানোর কোনো উপায় নেই।

শিশু সন্তান কোলে নিয়ে চাড়িপাড়া গ্রামের কহিনুর বেগম জানান, ঝড়ের খবর শুনে আমরা সবাই সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এসে দেখি ঘরে রেখে যাওয়া জিনিস-পত্র কিছুই নাই। এমনকি রান্না করার চুলাটির পর্যন্ত কোনো অস্তিত্ব নেই। রান্না করে যে খামু তার কোনো ব্যবস্থাও নেই।

উপুর হয়ে পরে থাকা একটি টিউবয়েল দেখিয়ে তিনি বলেন, সর্বনাশা ঝড়ে পানি খাওয়ার টিউবয়েলটি পর্যন্ত উপরে ফেলেছে। এখন খাবার পানি খেতেও সমস্যা হচ্ছে।

লালুয়ার ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস অত্যন্ত আক্ষেপ করে বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় ঘূর্ণিঝড়ে আমার ইউনিয়নের প্রায় ১৭টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। কয়েক হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। অথচ আমি অনেক আগ থেকেই প্রশাসনকে বেড়িবাঁধের বিষয়ে জানিয়েছি। কিন্তু তখন আমার কথায় তারা কর্ণপাত করেনি। তিনি বলেন, যখন বড় ধরনের কোনো ঝড়-ঝাপ্টা আসে তখন তারা ছুটোছুটি করেন। অথচ বেড়িবাঁধ দেয়ার বিষয়ে তারা কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানের ১৭টি গ্রামের প্রায় আট শতাধিক ঘড়-বাড়ি বিধ্বস্ত ও কয়েক হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও চম্পাপুর, ধানখালী ও চাকামইয়া ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব সহায়তা দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/২২মে/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :