ঢাবিতে গাছ কাটা নিয়ে দুই নেত্রীর অভিনব প্রতিবাদ

প্রকাশ | ২২ মে ২০২০, ১৭:৫২

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। হলগুলোও ফাঁকা। এমন পরিস্থিতিতে মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য রাস্তা সম্প্রসারণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কের পাশের প্রায় সব গাছ কেটে ফেলেছে সংশ্লিষ্টরা। কেটে ফেলা এসব গাছের পড়ে থাকা শিকড়ের পাশে নতুন গাছ রোপন করে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দুই নেত্রী।

প্রতিবাদকারী দুই নেত্রী কানেতা ইয়া লাম লাম ও মানসুরা আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে টিএসসি এলাকায় নতুন গাছ রোপন করে তারা এই প্রতিবাদ জানান।

এদিকে মেট্রোরেলের জন্য নির্বিচারে গাছ কাটা নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ক্যাস্পাস বন্ধের সুযোগ নিয়ে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।

তবে জাতীয় স্বার্থেই এসব গাছ কাটা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মো আখতারুজ্জামান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মেট্রোরেল জাতীয় কাজ। এ কাজের জন্য যেটা লাগবে, সেটা করতে হবে। মেট্রোরেলের জন্য যদি বিল্ডিংও ভাঙা লাগে সেটিও করা হবে। তবে জাতীয় কাজের বাইরে কোনো গাছ কাটলে বা কোনো কিছু করলে তিনি নিজেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

এদিকে ছাত্রদল নেত্রীদ্বয়ের অভিনব এ প্রতিবাদ বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। অভিনব এই প্রতিবাদের বিষয়ে কানেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যদিও এখন হয়ে গেছে তবুও আমরা কোনোভাবেই চাই না ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে মেট্রোরেল যাক। কারণ এ মেট্রোরেল আমাদের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করবেই সে সাথে এসব গাছ কেটে ক্যাম্পাসের সবুজ পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্লিপ্ত আচরণে আমরা ক্ষুব্ধ। এখন মহামারি সময় যেহেতু আন্দোলনের সুযোগ সীমিত, অনলাইন অ্যাক্টিভিজম ছাড়া উপায় নেই, তাই মূলত সেসব স্থানে বৃক্ষরোপন করেই আমাদের এ প্রতিবাদ।

এই নেত্রী বলেন, গত পরশু দিন আমাদের এখানে একটি ডিজাস্টার হলো। সেখানে সুন্দরবন কিছুটা হলেও আমাদের রক্ষা করেছে। সুতরাং এই পরিবেশ নষ্ট করে আমরা যদি উন্নয়নের ফিরিস্তি গাই এটা মনে হয় না আমাদের লং টার্ম সুবিধা দেবে।

জাতীয় স্বার্থেই এসব গাছ কাটা হচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের মন্তব্যের জবাবে ছাত্র ইউনিয়ন বলছে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন এই উপাচার্যের পদত্যাগ। এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ ও সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে প্রতিদিন শত শত রোগীর স্যাম্পল বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের শনাক্তকরণের কাজ চলছে, আর তার ঠিক নিচেই চলছে এরকম একটি অস্বাস্থ্যকর নির্মাণ কাজ। এই উপাচার্য বারবার প্রমাণ করেছেন, তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ, গবেষণার স্বার্থের থেকে সরকারের পদলেহনই মুখ্য। আজ যেই উপাচার্য জাতীয় স্বার্থের কথা বললেন, তিনি পদে থাকা অবস্থাতেই গণরুম সমস্যা আরো প্রকট হয়েছে, গবেষণায় বরাদ্দ কমেছে, শক্তিশালী হয়েছে হলের উপর সন্ত্রাসীদের দখলদারিত্ব। অথচ এসব সমস্যা তিনি সমাধান না করে একের পর এক অর্থহীন কথা বলে লোক হাসিয়েছেন বিভিন্ন সময়। তিনি যদি সত্যিকার অর্থেই জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করতেন তবে বহু আগেই তিনি পদত্যাগ করতেন।’

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মেট্রোরেলের রুট নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র সংগঠন। মেট্রোরেলের গাছ কাটা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা।

(ঢাকাটাইমস/২২মে/এমআই/জেবি)