‘আমি যদি পারি, শিক্ষিতরা পারেন না?’
আগারগাঁও থেকে মোহাম্মদপুর যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজছিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটি অটোরিকশা পেলাম। ভাড়া জিজ্ঞেস করতেই সঠিক ভাড়াটা বললেন চালক। আমিও ঠিক আছে বলে রিকশা উঠতে ধরলাম। হঠাৎ রিকশা চালক বললেন, ‘ভাই একটু দাঁড়ান’। দেখলাম একটি বোতল থেকে জীবাণুনাশক যাত্রীর আসনে ছিটিয়ে দিলেন। আমার হাতেও দিলেন। তারপর বললেন, ‘এবার ওঠেন’। রিকশায় চড়ে বসার পর আবার পায়ে ছিটিয়ে দিলেন। সব মিলিয়ে একটু অবাক হলাম।
কৌতুহল থেকে জানতে চাইলাম, এর কারণ কী? রিকশাচালক জানালেন, করোনাভাইরাস থেকে নিজে সুরক্ষিত থাকতে এবং অন্যকে সুরক্ষিত রাখতে তিনি এ কাজটি করছেন।
কথা বলতে বলতে জানা গেল, তার নাম সাগর। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন আগারগাঁও এলাকাতেই।
জানান, ৪০ টাকা করে প্রতি বোতল হ্যাক্সিসল তিনি কেনেন। প্রতিদিন এক বোতল, কোনো কোনো দিন দুই বোতল খরচ হয়। আর এই ব্যয় ভার বহন করেন রিকশা চালিয়ে করা আয় থেকেই।
সাগর জানান, নিজে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে নিরাপদ থাকতে এবং স্ত্রী, সন্তানদের নিরাপদ রাখতেই তিনি এ বাড়তি খরচ করছেন। পাশাপাশি অনুসরণ করছেন সরকারের নির্দেশনা।
সাগর বলেন, ‘করোনাভাইরাস আসছে। এখন আমাদের সাবধান থাকতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশ দিছেন। আমাদের সেগুলো মানতে হবে। নইলে মানুষ আক্রান্ত হইতেই থাকব। আমার মতো মানুষ যদি সেগুলো বোঝে, মানতে পারে, আপনারা শিক্ষিতরা পারবেন না ক্যান?’
সাগর প্রতিবন্ধী। রাজধানীতে তার ১৬টি বছর কেটেছে ভিক্ষা করে। পরে আওয়ামী যুবলীগের রাজনৈতিক নেতাদের বদৌলতে পেয়েছেন রিকশাটি। পায়ে সমস্যা থাকার কারণে পায়ে চালানো রিকশা চালাতে পারেন না। তাই তাকে দেওয়া হয়েছে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা। বর্তমানে সেটি চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।
সাগর জানালেন, যখন ভিক্ষা করতেন, তখন এই শহরের মানুষের দেওয়া অর্থেই তার দিন চলেছে। এখন কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, ফলে কারো থেকে বাড়তি ভাড়া নিতে রাজী নন তিনি। বর্তমানে রাস্তায় ক্ষ্যাপ কম। ফলে তার আয়ও কম। অল্প আয়ে কোনোভাবে দিন কাটাচ্ছেন স্ত্রী, সন্তান নিয়ে। তবুও তার প্রত্যাশা, মানুষ সতর্ক থাকুক, ভাল থাকুক। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করুক।
(ঢাকাটাইমস/২২মে/কারই/এইচএফ)