সিএমএসডিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা নিয়োগে ‘অশনি সংকেত’!

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২০, ২৩:৩২ | আপডেট: ২৪ মে ২০২০, ০১:২৬

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস

কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক পদে চিকিৎসক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার দাবি তুলেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। সিএমএসডির  পরিচালক পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগকে ‘অশনি সংকেত’ বলে মন্তব্য করেছে চিকিৎসকদের শীর্ষ এই দুই সংগঠনের নেতারা। এটি গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। এনিয়ে শনিবার জনপ্রশাসন সচিবকে চিঠি দিয়েছে সংগঠন  দুটি। সংশ্লিষ্ট একাধিক  সূত্রে এ তথ্য মিলেছে।
চিঠিটির অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকেও দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২২ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সিএমএসডির পরিচালক পদে আবু হেনা মোরশেদ জামানকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। প্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব পদের এই কর্মকর্তা বাংলাদেশ জাতীয ইউনেস্কো কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সিএমএসডির বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহকে সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার চাকরি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে।
বিএমএ’র দাপ্তরিক প্যাডে স্বাচিপকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ অবগত হয়েছে যে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসন ক্যাডারের একজন অতিরিক্ত সচিবকে পরিচালক, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ পদে প্রেষণে নিয়োগ করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। কারণ প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যাবতীয় চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ের সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন। আমাদের জানামতে আজ পর্যন্ত উক্ত পদে চিকিৎসক কর্মকর্তা ব্যতীত কখনোই কাউকে পদায়িত করা হয় নাই।’
বিএমপি সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী এবং স্বাচিপ সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান এবং মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘নিকট অতীতে উক্ত পদে সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক কর্মকর্তাগণই ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকে এই পদে নিয়োগ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং ইহা একটি অশনি সংকেতের ইঙ্গিত বহন করছে।’
চিঠিতে আগের মতো একজন চিকিৎসক কর্মকর্তাকে সিএমএসডির পরিচালক পদে নিয়োগ করার ‘জোর দাবি’ জানানো হয়।


জনপ্রশাসন সচিবকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাচিপ সভাপতি  ডা. এম ইকবাল আর্সলান। শনিবার রাতে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সিএমএসডির পরিচালক পদটি টেকনিক্যাল পদ। এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী অধিদপ্তরের যত পরিচালকের পদ আছে সব টেকনিক্যাল পদ। এই পদগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে টেকনিক্যাল লোকদের নিয়োগ দিয়ে আসা হচ্ছে। হঠাৎ করে প্র্রশাসন ক্যাডার থেকে সিএমএসডির পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে চিঠিতে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি।’
স্বাচিপের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সরকার মনে করলে যেকোনো পদ থেকে কাউকে সরিয়ে অন্য কাউকে নিয়োগ দিতে পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে, সেটা টেকনিক্যাল পদ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অংশ। এখানে প্রশাসন ক্যাডারের লোক ঢোকানোটা আমরা মনে করি বড় ধরনের পদক্ষেপ। আমরা এখানে কিছু একটার আলামত মনে করি। সে জন্য এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছি।’
ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘এর আগে ২০১৪-১৫ সালের দিকে এমন একটি আদেশ হয়েছিল। এইচআইভি এইডস কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর পদে একজন যুগ্মসচিবকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেটিকেও আমরা অশনিসংকেত হিসেবে মনে করেছিলাম। পরে আমাদের প্রতিবাদে আদেশটি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল।’
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বিএমএ’র সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কলটি ধরেননি।
(ঢাকাটাইমস/২৩মে/এইচএফ)