পথের মানুষের নিরানন্দ ঈদ

শেখ সাইফ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ মে ২০২০, ১৭:২২ | প্রকাশিত : ২৪ মে ২০২০, ১৫:৪১

‘স্যার, ঈদের সেমাই কিনুম, পোলা মাইয়্যার জন্য কিছু টেকা দেন স্যার। পোলা মাইয়ার জন্য একখান জামা কিনুম।’ এই কথাগুলো বিগত বছরের রমজানের শেষ দিকের পথের মানুষের। হাত পাতলেই মিলত নতুন নোট। ৫০-১০০ টাকা। এসময় ঈদ সামনে রেখে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকেন সব শ্রেণির মানুষ। কিন্তু এবারের চিত্র একদম আলাদা।

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বড় বড় মার্কেটগুলো বন্ধ। ফুটপথেও বসতে দেওয়া হচ্ছে না ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের। ঘর থেকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না মানুষ। পথের মানুষের ভাগ্যে জুটছে না কিছু। এ জন্য পথের ধারে ভাসমান ছিন্নমূল মানুষের ঈদে নেই আনন্দ।

গতবছরের ঈদের আগে চলার পথে দেখা যেত কেনাকাটার ভিড়। দেখা যেত রাস্তার পাসে বসবাস করা মানুষের দান খয়রাত করতে। পথের মানুষের যেতে হত না চাইতে। ধনিক শ্রেণি রাস্তার মানুষের জন্য কাপড়-চোপড়, খাদ্য সামগ্রী নিজেরাই বিতরণ করে যেতেন।

লাল টুকটুকে জামা পরে, ঠোটে লাল লিপিস্টি, হাতে লাল চুড়ি পরে আনন্দ করে, হই হুল্লোড় করে বেড়ানো আর সেমাই খাওয়া যাদের ইদের একমাত্র আনন্দ। এবার তার ছিটে ফোটাও নেই পথের পাশে জীবনধারণ করা ভাসমান মানুষের।

আমার নিজের দেখা, ফার্মগেট এলাকায় গাড়ি ভর্তি খাবারের প্যাকেট সবার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ইফতারি আইটেম থেকে শুরু করে সেমাই, চিনি ইত্যাদি দিতে দেখেছি।

কিন্তু এবার চিত্র একেবারে উলটা। রাস্তায় নেই কোনো গাড়ি। খুব প্রয়োজনে মানুষ বাইরে এসে নিজের কাজ মিটিয়ে আবার ঘরে ফিরছেন। অথচ রাস্তার পাশে আগে যারা বসবাস করত। তারা এখনো বসবাস করছে।

মলিন মুখে বসে আছে এবার। কেউ কোথাও নেই। সুনসান রাস্তা। দোকান পাট বন্ধ। অথচ এই ফার্মগেট এলাকায় ঈদের আগে মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে হাটা চলায় দায় হয়ে দাঁড়াত।

ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাথে রইজ উদ্দিনের বউ ও তিন পোলা মাইয়া নিয়ে বসবাস। রইজ উদ্দিন সর্বনাশা পদ্মার ভাঙনে সর্বশান্ত একজন মানুষ। নদীর করাল গ্রাসে সব হারিয়ে তিনি এখন ফার্মেগেটে ফুটপথে বসবাস করেন।

যার আয়ের একমাত্র উৎস বোতল টোকানো। বাচ্চা দুইটা ও মা ভিক্ষা করেন। মানুষের দান ক্ষয়রাত ও ভিক্ষায় চলে এই পাঁচ জনের জীবন সংসার। তখন এখন না পাচ্ছেন কারো থেকে ভিক্ষা বা পথের বোতল টোকানো। কোনো ভাবেই হাতে আসছে না টাকা-পয়সা। খেয়ে না খেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনানিপাত করছে তারা। এবারের ঈদে তাদের নেই কোনো আনন্দ।

মূলত পথের পাশে বসবাস করা মানুষেরও স্বপ্ন থাকে ঈদকে কেন্দ্র করে। দান খয়রাতের টাকা নিয়ে বাচ্চাদের জন্য রঙ বেরঙের শার্ট-প্যান্ট, ফ্রগ, কামিজ, লাল পাঞ্জাবি, টিপ, চুড়ি, লাল ফিতা ইত্যাদি কেনা। সকালে সন্তানদের মুখে সেমাই তুলে দেওয়া। একটু ভালো খাবার খাওয়া। এসব তারা প্রতি বছর করে থাকে।

কিন্তু এবার সব অধরায় থেকে যাচ্ছে। শহরের বড় বড় দালানে মানুষের বসবাস। গলির দুইপাশে উঁচু উঁচু দালানের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে সাহায্য চাইছেন অনেকে। দালানের উপর থেকে কেউ কেউ পাঁচ টাকার কয়েন বা দশ বিশ টাকার নোট ফেলে দিচ্ছেন। অনেকের কানে পৌঁছাচ্ছে না তাদের আর্ত চিৎকার।

এভাবেই ফিরে যাচ্ছে খালি হাতে আমার আপনার দুয়ার থেকে। অথচ মানুষ রমজান মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করে সওয়াবের আশায়। সব অফিস আদালত বন্ধ। কর্মক্ষেত্র বন্ধ। উপার্জনের পথ বন্ধ। সবাই এক প্রকারে বেকার অবস্থায় জীবন যাপন করছে।

যাদের দান খয়রাত করার সক্ষমতা আছে। তারাও ঘরে থাকার কারণে দিতে পারছেন না। কখন কিভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যায়। এই চিন্তায় সবাই ঘরে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখছে। আর এসব কারণেই পথের ধারের মানুষের ঈদ নিরানন্দের।

ঢাকাটাইমস/২৪মে/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

সস্তার পেয়ারার গুণে বশে থাকে ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :