বাবা-মায়ের মন বোঝে না ‘লকডাউন’

বোরহান উদ্দিন
| আপডেট : ২৪ মে ২০২০, ২৩:৩০ | প্রকাশিত : ২৪ মে ২০২০, ২৩:২৫

মিলনের বার্তা নিয়ে আসে ঈদুল ফিতর। মুসলিমদের এই প্রধান ধর্মীয় উৎসবের আবহ ছুঁয়ে যায় অপরাপর ধর্মাবলম্বীদের মনেও। কিন্তু এবার মন তো সবারই খারাপ। মা-বাবার থেকে সন্তান, স্বামীর থেকে স্ত্রী, স্বজন-প্রিয়জনের সান্নিধ্য- সবেতেই বাগড়া বসিয়েছে প্রাণঘাতক এক ভাইরাস। কোভিড-১৯ নামে পরিচিত করোনাভাইরাস গোত্রের এই অদৃশ্য শত্রু বিবর্ণ করে দিয়েছে এবারের ঈদের আনন্দ।

পুরোপুরি ভিন্ন পরিস্থিতি ও অপ্রত্যাশিত ঈদ পালন করতে যাচ্ছি বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানরা। মহামারি করোনাভাইরাসের আক্রমণে সবাই দিশেহারা। সবার মধ্যে অজানা আতঙ্ক। কখন কার কী হয়ে যায়! এক মাস সিয়াম সাধনার শেষে এসেছে ঈদুল ফিতর এসেছে। কিন্তু আনন্দের পরিবর্তে যেন বিষাদের ছায়া পড়েছে মনে মনে।

খুব সমস্যা না হলে যারা বাবা-মাসহ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে প্রতিবছর ‍যুদ্ধ করে হলেও গ্রামে যেতেন, সংক্রমণের ভয় ও সরকারি বিধিনিষেধের কারণে এবার তার ব্যত্যয় হয়েছে।

অনেকে হয়তো সতর্কতার কারণেই পরিবারের অন্যদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে গ্রামে যাননি। কারণ শেষবেলায় হলেও ঢাকা ছাড়ার অনুমতি পেয়ে কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি, রেন্ট-এ-কারের গাড়ি, মোটরসাইকেলযোগে ঢাকা ছেড়েছেন।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। আট ভাইবোনের সংসারে আমিই সবার ছোট। যে কারণে সবার কাছেই আমি প্রিয়। বিশেষ করে বাবা-মায়ের সব থেকে আদরের সন্তান মনে করি নিজেকে। ইতিমধ্যে আমিও সন্তানের বাবা হয়েছি। অন্যান্যদের মতো আমার বাবা-মায়েরও আকাঙ্খা ছিলো ঈদে বাড়ি যাবো।

এবারের প্রত্যাশাটা তাদের একটু বেশি ছিলো কারণ তাদের নাতি মো. মুনতাসির আহমদ রাফিকে সঙ্গে করেই আমরা যাবো। ঠিক আমারও এমন ভাবনা ছিলো। কিন্তু কে জানতো মহামারি করোনা সব চিন্তা, স্বপ্ন উল্টে দেবে?

রমজানের শেষদিকে নিয়মিত খোঁজখবর নিতে গিয়ে মা বললেন, ‘তোরা কি বাড়ি আসতে পারবি?’ বললাম- ‘মা সব তো লকডাউন। গাড়ি, লঞ্চ কিছুই চলবে না। আর এখন তো আসা যাওয়া করাও ঝুঁকি। দোয়া করেন যেন সবাই ভালো থাকতে পারি।’

মূহুর্তেই খেয়াল করলাম মায়ের কণ্ঠ আটকে আসছে। কণ্ঠে কান্নার আওয়াজ। পরে হয়তো আঁচল দিয়ে চোখ মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেছেন আমার মা। এক পর্যায়ে বললেন, ‘দোয়া তো করি তোমরা ভালো থাকো। বছরের একটা দিনও সবাই একসঙ্গে হইতে পারলা না তোমরা। আল্লাহ এমন বিপদ দিলো।’ মায়ের কথাগুলো শুনে সন্তানের স্বাভাবিক থাকা দায়।

ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী সেজ ভাই সকালে জানালেন তাদের ২৭ মে পর্যন্ত ছুটি। তবে চাইলেও বরিশাল থেকে পটুয়াখালীর বাড়ি যেতে পারছেন না। কারণ অফিস থেকে সবাইকে এসএমএস করে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ছুটি হলেও কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। যে কারণে বাবা-মায়ের কাছাকাছি থাকলেও তারও ঈদে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই। এমন খবর শুনে আবার কেঁদেছেন মা। কারণ একটাই তারা তো সন্তানের অপেক্ষায় দিন গুনতে ছিলেন।

সব বাবা-মায়েরই মনের অবস্থা এমনই। কারণ সবাই সন্তানের অপেক্ষায় ছিলেন। বুকে জড়িয়ে আদর করবেন। সন্তানকে না দেখার চাপা কষ্ট নিমেষেই ভুলে যেতেন। সন্তানরাও পরম আদরে বেশ কয়েকটা দিন কাটানোর সুযোগ পেতেন।

কিন্তু ক্ষুদ্র একটা ভাইরাস সবার যাত্রা যে থামিয়ে দিয়েছে। তবে থামেনি জীবনের বড় সম্পদ বাবা-মায়ের অপেক্ষার পালা। তারা এখনো যে সন্তানের পথ চেয়ে বসে থাকেন- কখন সন্তান আসবে আপন নীড়ে।

আমাদের সন্তানদেরও প্রত্যাশা শিগগিরই দূর হোক করোনাভাইরাস। সুস্থ হয়ে উঠুক পৃথিবী। অবসান ঘটুক প্রতিটা বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে যেতে না পারার চাপা কষ্টের।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :