কী হবে টাকা দিয়ে, যদি শান্তিতে মৃত্যু না হয়?

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২০, ১১:৪২

পারভেজ হাসান
পারভেজ হাসান

উইকিপিডিয়াতে দেখলাম এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৮ টি। এই প্রতিষ্ঠান গুলোতে কাজ করে প্রাই এক লাখ আশি হাজার কর্মী এবং তাদের ব্যাবসায়ীক বার্ষিক টার্নওভার দুই হাজার ৮০ কোটি টাকা। যা মার্কিন ডলারে প্রাই চার বিলিয়ন। উপরে যেই তথ্যটি দিলাম তা হয়তো পুরনো হিসেব, নতুন করে জানতে চাইলে দেশ-বিদেশে তাদের সম্পত্তির হিসাব দেওয়ার ক্যালকুলেটর আমার কাছে আপাতত নেই।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো কি লাভ এতো টাকা কামিয়ে? যদি নিজের মাতৃভূমিতে শান্তিতে মরার সুযোগ না পাই। যদি পর্যাপ্ত চিকিৎসা সাপোর্ট এর অভাবেই চলে যেতে হয় অপারে, প্রতিটা মানুষকেই একসময় মরতে হবে তাই বলে দেশের সবচেয়ে বড় এমন প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলমকে চিকিৎসার অভাবে যে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়েছে। তা দেখে যদি অন্যরা শিক্ষা না নেয়। এটা চরম বোকামি হিসাবেই গণ্য হবে।
তা ছাড়া শুনলাম এদের পরিবারের আরো ৬ সদস্য নাকি করোনা আক্রান্ত।
যাদের কোটি কোটি ডলারের সম্পত্তি। তাদেরই কিনা আইসিইউ বেড শাফলিং করে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এক ভাই ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনে এডমিট হলে ভেন্টিলেটর দেওয়ার প্রয়োজন হলেও কোন ভেন্টিলেটর খালি ছিল না সে মুহূর্তে। সবগুলোই বুকড রোগী দিয়ে। কিছুটা ইমপ্রুভের দিকে যাওয়া আগে থেকে এডমিট আরেক ভাইকে নামিয়ে দিয়ে তাকে দেওয়া হয়। অবশেষে তাকে আর বাঁচানো যায়নি। কী দুঃখজনক ব্যাপার তাই না?
অথচ শতশত মিলিয়ন ডলারের এই বিজনেস ম্যাগনেটদের কাছে এসব আইসিইউ, ভ্যান্টিলেটরের টাকা হাতের ময়লা। চাইলেই তারা গুটিকয়েক  উন্নতমানের হাসপাতাল বানাতে পারেন নিমিষেই।
অথচ তারা ভুলেও আগে কোনোদিন চিন্তা করেনি দেশের মাটিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাবেন।হয়তো ভেবেছে, আমরা তো একটা কাশি দিলেই প্রাইভেট জেটে করে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাই। আমাদের কোন সমস্যা হবেনা, কিন্তু ভাবেনি করোনা নামক ভাইরাস একদিন ধনী-গরিবের চিকিৎসা ব্যবস্থা এক কাতারে নিয়ে আসবে।
যাদের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক বিনিয়োগ তারা কোনোদিনই ভাবেনি এদেশের স্বাস্থ্যসেবা কোন পর্যায়ে আছে। হয়তো তাদের মনোভাব এমন ছিলো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যতই নাজুক থাকুক। আমাদের তো এখানে চিকিৎসা নিতে হয় না।
কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, বস্তা বস্তা টাকা। ব্যাংক ব্যালেন্স যে কোনো কাজেই আসবেনা এটা ঘুনাক্ষরেও টের পাননি তারা।এদেশে এমন হাজার হাজার বিলিয়নার ব্যবসায়ী রয়েছেন, এবার বোধ হয় তাদের এমন মনোভাব চেঞ্জ করা উচিত।
এখনো সময় আছে, আসুন না একটু মানবিক হই, উদার হই। কী হবে এতো হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে যদি নিজের দেশে সুচিকিৎসার অভাবে অশান্তিতে মরেন?
দয়া করে পৃথিবীর অসুখ কাটলে উন্নত দেশের উন্নত চিকিৎসার জন্য ছুটছুটি না করে আসুন এই গরীব দেশটার স্বাস্থ্যখাতটাকে একটু উন্নত করি। তাছাড়া দেশপ্রেম বলেও তো একটা কথা আছে, আসুন জাগিয়ে তুলি।
লেখক: পারভেজ হাসান, প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, সহমর্মিতা ফাউন্ডেশন।