প্রকৌশলী হত্যায় ‘রাঘববোয়ালদের’ বিচার চায় টিআইবি

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২০, ১৭:১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের নিষ্ঠুর খুনের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও নিহতের পরিবারের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেপথ্যের রাঘববোয়ালদের খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি এসব দাবি জানায়।

দৃশ্যত পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত এই খুনের ঘটনাটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক যথাযথ তদন্তের পাশাপাশি টিআইবি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজ চক্রের মুখোশ উন্মোচন করা ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিও দাবি জানায় সংস্থাটি।

গণমাধ্যম ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য তথ্যমতে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত স্থানীয় অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি ও নির্মাণ-প্রকৌশল খাতে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের সাহসী ও কঠোর দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে দুর্নীতিবাজ সহকর্মী ও  স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী দোসরদের বিরাগভাজন হয়ে তাকে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দৃশ্যত করোনা সংকটের সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম প্রাধান্য।’

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকার বাস্তবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় এ ঘটনায় সরাসরি জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত এবং গ্রেপ্তার আশাবাদ তৈরি করলেও নেপথ্যের রাঘববোয়াল কাউকেই এখনো আইনের আওতায় আনা যায়নি। আর তা করা না গেলে, ঘটনার গভীরতা বিবেচনায় এটি একটি খণ্ডিত বিচারের উদাহরণ তৈরি করবে।’

সংস্থাটির মনে করে, ঠিকাদারি কাজের নিম্নমান, বাজারদরের চেয়ে বেশি মূল্য দেখিয়ে বিল তৈরিসহ বেশকিছু বিষয়ে নিহত দেলোয়ার হোসেনের সাথে অসাধু ঠিকাদারদের একাংশের বিরোধের সূত্রপাত। যা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের শীর্ষ কর্তৃপক্ষও অবহিত ছিলেন বলে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশন কী পদক্ষেপ নিয়েছিল কিংবা আদৌ নিয়েছিল কি না? নিয়ে থাকলে সেটি কী? যেসব কাজ ও ঠিকাদারের দুর্নীতির বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়েছিল সেসব বিষয়ে সিটি করপোরেশনের অবস্থান কী? তা জনসমক্ষে আসা উচিত বলে মনে করে টিআইবি।

এক্ষেত্রে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন সঠিক সময়ে এসব দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা ও কঠোর অবস্থান নিলে এমন দুঃখজনক পরিণতি দেখতে হতো না। সৎ থাকার পুরস্কার ও পর্যাপ্ত সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার পরিবর্তে এরূপ নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হতো না একজন নিষ্ঠাবান প্রকৌশলীকে।’

‘এক্ষেত্রে সংস্থাটি নিজের কর্মীকে দুর্নীতিবাজদের থাবা থেকে রক্ষা করতেই শুধু ব্যর্থ হয়নি বরং দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি অঙ্গীকারকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।’

খুনের অভিযোগের পাশাপশি এই ঘটনাকে দুর্নীতির নিষ্ঠুরতম দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরা মনে করি দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত কোনো প্রকার ভয়-করুণার ঊর্ধ্বে থেকে এই হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত দুর্নীতির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ক্ষমতাবান মহলের অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে অবিলম্বে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।’

প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের শোকসন্তপ্ত পরিবারের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারের পাশাপাশি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

(ঢাকাটাইমস/২৬মে/এনআই/জেবি)