আম্পানের পর আম ঝরালো কালবৈশাখী

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ২৭ মে ২০২০, ১৬:৩৭

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর আরেকদফা রাজশাহীর আম ঝরিয়ে দিল কালবৈশাখী। মঙ্গলবার রাতের এই ঝড়ে জেলার গোদাগাড়ী ও বাঘা উপজেলার প্রচুর আম ঝরে গেছে। এতে চাষিরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ঝড়-শিলাবৃষ্টির মাঝেই আম বড় হয়। ক্ষতি খুব একটা হবে না।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন জানান, রাতে তাদের আবহাওয়া অফিস এলাকায় ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ পাওয়া গেছে ঘণ্টায় ১৯ কিলোমিটার। তবে জেলার কোথাও বেশি বৃষ্টিপাত কিংবা বাতাসের গতিবেগ থাকলে তা রেকর্ড করার কোনো উপায় তাদের নেই। শুধুমাত্র আবহাওয়া অফিসেই যেটুকু পাওয়া যায়- তা রেকর্ড হয়।

কামাল উদ্দিন বলেন, কোথাও কোথাও ঝড়-বৃষ্টি আরও বেশি হয়েছে। আমার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। এখানে যে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে, তা আবহাওয়া অফিসের রেকর্ডের চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার কিছু আগেই গোদাগাড়ী এলাকায় হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। তুমুল ঝড়ের সময় গোদাগাড়ী পৌরসভার জাহানাবাদ এলাকায় ইটের দেয়াল ধসে এক নারী নিহত হয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের দিনও তারা বাতাসের এতো গতিবেগ দেখেননি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার সময় ঝড়ের পর মাঝরাতে এবং শেষরাতে থেমে থেমে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রচুর আম ঝরে পড়েছে।

বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রামের আমচাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, আম্পানের দিন বাগানের অন্তত ২৫ ভাগ আম ঝরে পড়েছে। মঙ্গলবারের কালবৈশাখীতে আরও অন্তত ১০ ভাগ আম ঝরেছে বলে তার কাছে মনে হচ্ছে। পরপর দুই ঝড়ে এতো আম ঝরে পড়ায় তিনি লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল হক বলেন, নদীর ধার দিয়ে যেসব বাগান রয়েছে সেখানে কিছু আম ঝরেছে। তবে সেটা ১ শতাংশ হতে পারে। খুব বেশি আম ঝরেনি। আর আম ঝড়-শিলাবৃষ্টির মাঝেই টিকে থাকে। আপাতত চাষিরা লোকসানের আশঙ্কা করলেও ক্ষতি খুব একটা হবে না। দাম ভালো পেলে চাষিরা আমে লাভ করবেন বলেই মনে করেন তিনি।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, কৃষিবিভাগ ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির জরিপ করছে। আর তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে অন্যান্য ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব নেয়ার চেষ্টা করছেন। আপাতত তার কাছে গোদাগাড়ীর এক নারী নিহত হওয়ার খবর আছে। এর বাইরে কিছু বাড়ি-ঘরের চালা উড়ে গেছে।

গত ২২ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে রাজশাহীতেও ঝড়-বৃষ্টি হয়। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী সেদিন গাছের ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। এতে চাষিদের প্রায় ১২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

রাজশাহী জেলায় আম বাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। অপরিপক্ক আম নামানো ঠেকাতে গেল কয়েক বছরের মতো এবারও আম নামানোর সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী গাছে পাকলেই গত ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুঁটি আম নামানোর সময় শুরু হয়েছে। গত ২০ মে থেকে গোপালভোগ এবং ২৫ মে থেকে রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা নামানোর সময় শুরু হয়েছে। কিন্তু চাষিদের গাছে এবার আম পাকেনি। আরও কিছু দিন সময় লাগবে গাছে আম পরিপক্ক হতে। তাই এখনই আম ভাঙছেন না রাজশাহীর চাষিরা। তবে দু’একজন চাষি আম ভেঙে বাজারে তুলছেন।

প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী, হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ১৫ জুন এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা এবং বারী আম-৪ জাতের আম।

করোনাকালে আম বাজারজাত নিয়ে যেন সমস্যা না হয় সে জন্য এবারই প্রথম আমের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রেন চলবে। ট্রেনে দেড় টাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এবং এক টাকা ৩০ পয়সা কেজি ভাড়ায় আম ঢাকায় নেয়া যাবে। ঢাকায় গিয়ে ব্যবসায়ীদের সুবিধামতো স্টেশনে আম নামানো হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৬মে/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :