দুস্থ নারীকে মৃত দেখিয়ে চালের তালিকা থেকে বাদ

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ মে ২০২০, ১৭:০১

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ১০ নম্বর দৌলতপুর ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় থাকা অসহায় দুস্থ নারীকে মৃত দেখিয়ে স্বজনের নাম প্রতিস্থাপন করে চাল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের শাস্তি দাবি করেছে এলাকাবাসী।

২০১৬ সালে সারা দেশের মতো দৌলতপুর উপজেলার ১০ নম্বর দৌলতপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে তৈরি করা হয় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা। ওই তালিকা অনুযায়ী বছরে পাঁচ বার ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল ১৯৩ জন পরিবারের মধ্যে দেয়া হয়। সেই তালিকায় দৌলতখালী গ্রামের স্বামী সন্তান হারা অসহায় বৃদ্ধা আতরজানের (৯০) নাম ১০১ নম্বর কার্ডধারী হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। কার্ড অনুযায়ী তাকে নিয়মিত চালও দেয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ চলতি মে মাসে দৌলতপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নতুন সুবিধাভোগীদের নামের তালিকায় আতরজানকে মৃত দেখিয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মুক্তার হোসেনের স্বজন আমিরুনের নাম প্রতিস্থাপিত করে তাকে চাল দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে এই ইউনিয়নের চালের ডিলার মোজাম্মেল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর নিয়মিত চাল পেলেও হঠাৎ করে মে মাসে আতরজানকে মৃত দেখিয়ে তার নামের জায়গায় ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মুক্তার হোসেন তার স্বজন আমিরুলের নাম দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী মে মাসের ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে তাকে। এতে অসহায় আতরজান চাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন বলে জানান ডিলার মোজাম্মেল।

তিনি জানান, আতরজান খাতুনের স্বামী সন্তান কেউ নাই। রাস্তার উপর ঝুপড়িতে যার বসবাস তার নামটি কেটে অন্য একজনের নাম বসানোর ব্যাপারটা আমি চেয়ারম্যান সাহেবকে জানিয়েছি। এছাড়া আমার কিছুই করার নেই।

নাম কেটে দেয়ার ব্যাপারে বৃদ্ধা আতরজান ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলেন, চাল নিতে গেলে আমি মরে গেছি বলে আমাকে চাল না দিয়ে অন্যজনকে চাল দিয়েছে। এই বলে তিনি কেঁদে ফেলেন।

দৌলতপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজা উদ্দিন বলেন, ন্যাক্কারজনক এই অমানবিক কাজের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে। তিনি বলেন, অবিলম্বে এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে ১০১ নম্বর কার্ডটিতে স্বজনের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ইউপি সদস্য মুক্তার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আতরজানের ভোটার আইডি কার্ড খুঁজে না পাওয়ায় তার নাম বাদ দিয়ে আমিরুলের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টা চেয়ারম্যানের জানা আছে। প্রতিস্থাপনকৃত নামটি তার স্বজনের কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার দু-সম্পর্কের আত্মীয় হয়। সাড়ে তিন বছর ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া চাল দিলেন কিভাবে এবং প্রতিবেদনে তাকে কেন মৃত দেখানো হলো? এমন প্রশ্নের সদুত্তর ইউপি সদস্য মুক্তার দিতে পারেননি।

ইউনিয়নের নাগরিকদের জন্ম-মৃত্যুর সনদ স্বাক্ষর করেন ইউপি চেয়ারম্যান এবং তার রেকর্ড ইউপি কার্যালয়ে সংরক্ষিত থাকে। তাই এর দায় ইউপি চেয়ারম্যান এড়াতে পারেন না।

ইউপি চেয়ারম্যান মহিউল ইসলাম মহি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না যে আতরজানকে মৃত দেখিয়ে তার নাম বাদ দিয়ে অন্যজনের নাম প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যেহেতু আতরজান জীবিত সেহেতু পুনরায় তার নাম যাতে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় সে ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আসার পর আতরজানের বাড়িতে ছুটে যাই এবং প্রাথমিকভাবে কিছু খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। তিনি বলেন, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে সংশ্লিষ্ট দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ওই বৃদ্ধার বাড়ি তৈরির জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এবং খাদ্য সহায়তা ও তার উপকারভোগী কার্ডটি যাতে তিনি ফেরত পান সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন পাবার পর ইউপি সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :