সফলতা আনতে নিজের উপর আস্থা রাখতে হয়

প্রকাশ | ২৯ মে ২০২০, ০৯:৫৩

নিথর মাহবুব

নিজ দেশ ছেড়ে দুই শ্রেণির মানুষ বিদেশে বসবাস করে, এক হলো অপদার্থ, আরেক হলো ট্যালেন্ট। এমনি এক বিদেশ ফেরত অপদার্থের কথায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে জীবনে ছন্দপতন ডেকে এনেছিলাম। ছন্দপতনের ওই সময়টাতেই একদিন দেখি উপদেশ দেওয়া সেই বড় ভাই, বিদেশের টাকা শেষ করে মতিঝিল ফুটপাতে প্যান্ট বিক্রি করছে। তখন নিজেকে নিজেই খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছিল।

এই পন্ডিত আমাদের পূর্ব পরিচিত। বিদেশ থেকে ফিরে আমাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তখন গ্রামের বাড়িতে থাকতাম, প্রতি সপ্তাহে একবা কী দুবার ঢাকায় আসতাম। টিএসসিতে একটা আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তখন। ভালোই চলছিল দিনগুলো। গণিতের ছত্র, তাই গ্রামে টিউশনির ডিমান্ড ভালোই ছিল। সকালে আর রাতে মিলিয়ে কয়েকটা টিউশনি করতাম, পাশাপাশি আমাদের হাইস্কুলের পাশে একটা লাইব্রেরি চালাতাম। টার্গেট ছিল কিছু টাকা জমিয়ে একটু গুছিয়ে বাংলাবাজার চলে আসবো এবং নিজের একটা প্রকাশনা দেবো।

সেদিন ঢাকায় আসার জন্য রেডি হচ্ছিলাম এমন সময় তিনি আসেন। আমি কোথায় যাচ্ছি তিনি জানতে চাইলে আমার পরিবারের লোকজন আমার পাগলামির বিস্তারিত তার কাছে তুলে ধরলেন। শিল্পের চর্চা করি এটা পরিবার পছন্দ করত না। তাদের দৃষ্টিতে সময় নষ্ট করছি। আবার আটকাতেও পারত না। কারণ যা করি নিজের টিউশনির উপার্জন দিয়ে করি। আমার পাগলামির কথা শুনে সেই অতিথি আমাকে অনেক জ্ঞান দিলেন, অনেক বুঝালেন।

বিষয়টা এমন তিনি বিদেশ গিয়ে কিছু টাকা রোজগার করে বিশাল কিছু করে ফেলেছেন। এখন দেশে এসে অনেক কিছু ছিড়বেন। তিনি বুঝালেন আমাকেও তার মতো সফল হতে হবে, গান কবিতা অভিনয় এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। আমি তার কথায় মজে গেলাম, সেদিন থেকেই ঢাকায় আসা স্থগিত করলাম। আমার পতনের এই সূত্রপাত দেখে পরিবারের লোকজন খুশি হলো।

নরসিংদী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সঙ্গীতে তখন চতুর্থ বর্ষ মানে ফাইনাল ইয়ার চলছে, একাডেমিতে যাওয়াও বন্ধ করলাম, ওখানে একটা নাটকের দল গড়েছিলাম বন্ধুরা মিলে; সেখানে যাওয়াও বন্ধ করলাম। যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে লাইব্রেরির পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগীর খামার দিলাম, বাজারে দোকান ব্রয়লার মুরগী পাইকারি বিক্রির ব্যবসা দিলাম। শিশু কাল থেকে যে শিল্পের সঙ্গে উৎপ্রোত ভাবে জড়িত সে শিল্পের অঙ্গন ছেড়ে পুরুদমে ব্যবসায় মগ্ন।

বুঝতে পারছিলাম অর্থের দিকে ঝুকতে গিয়ে জীবনে ছন্দপতন ঘটতে যাচ্ছে। একটা পর্যায়ে সবকিছু উলটপালট হয়ে গেল। ব্যবসায় ধ্বস নামল। এক ধাক্কায় লাইব্রেরি, পল্ট্রিফার্ম, পাইকারি দোকান সব গেল। তারপর জেদ করে ঢাকায় চলে এলাম। জীবনের পিক সময়টার উপর দিয়ে বিরাট ধকল গেল। সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে বেশ কয়েক বছর লেগে গেল। সেই পাঁচ-ছয়টা বছরের কথা মনে হলে গা শিউরে উঠে। বিদেশ ফেরত একজন ফালতু মানুষের কথা শুনে জীবনের মূল্যবান ৭-৮বছর নষ্ট করেছি। এই অপদার্থের কারণেই প্রতিজ্ঞা করেছি, টাকা রোজগার করতে কখনোই বিদেশ যাব না।

বিদেশ ফেরত বড় বড় কথা বলা ওই অপদার্থকে বছর খানেক আগে দেখেছি রাস্তার পাশে ডেচকিতে করে কাউয়া বিরিয়ানি বিক্রি করছে।

লেখক:  সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী

ঢাকাটাইমস/২৯মে/এসকেএস