করোনা রোগী ও সংক্রামক ভীতি

প্রকাশ | ২৯ মে ২০২০, ১৪:৩৪

মো. জহির উদ্দিন লিমন

গত ১৯ মে বুধবার আমাদের বিল্ডিংয়ের ৩য় তলায়  একজন করোনা রোগী সনাক্ত হয়। আমি ও আামার স্ত্রী  সন্তান নিয়ে থাকি একই বিল্ডিংয়ের ২য় তলায়। যিনি করোনায়  আক্রান্ত হয়েছেন তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার, তার স্ত্রী একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করে এবং আমার স্ত্রীর কলিগ।

আমার স্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পারি, স্বামী স্ত্রী দুজন করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন, স্বামীর করোনা পজেটিভ( কভিড- ১৯) হয়েছে। ওনাদের সাথে ফোনে আলাপ করে জানতে পারি, স্ত্রীর জ্বর কাশিসহ করোনার সমস্ত লক্ষ্মণই ছিলো কিন্তু স্বামীর করোনার কোনো উপসর্গই ছিলনা। তবে করোনা পরীক্ষায় স্বামীর পজিটিভ এসেছে। রিপোর্ট পাওয়ার সাথে সাথেই স্বামী  একটি রুমে আইসোলেটেড হয়ে যান।

তাদের  একটি ৪ বছরের বেবি আছে এবং বাসায় একজন খালাও(মুরব্বি)  আছে। এরই মধ্যে স্ত্রীর শারীরিক  অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে এবং শ্বাস কষ্ট শুরু হয় এই পরিস্থিতিতে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলেন এবং বাসার সবাইকে  করোনা পরীক্ষার জন্য লোক এসে স্যাম্পল কালেকশন করে নিয়ে গেলো।

করোনা পজিটিভ বিষয়ে এপার্টমেন্টের মালিক জানতে পেরে  তিনি বিষয়টি নেগেটিভ ওয়েতে নেননি কিন্তু চিন্তিত মনে হলো।আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম যে,ভয় ও আতংকিত না হয়ে কিভাবে সংক্রামক প্রতিরোধ করা যায় এবং রোগী ও তার পরিবারকে মানসিকভাবে সাহস দেওয়া যায় এই ব্যবস্থা করা উচিৎ। আমার স্ত্রী সার্বোক্ষনিক ওদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করছে এবং কখন কি দরকার আমাদের কে জানাতে বলছে।

এদিকে আমি ৩য় তলা থেকে নীচ তলা পর্যন্ত মেশিন দিয়ে  জীবাণুনাশক ছিটানো শুরু করলাম যদিও বিল্ডিংটি ছয়তলা। বিল্ডিংয়ের প্রত্যেককে আতংকিত না হয়ে নিজে সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হলো।

আমি রোগীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করে তাদের কখন কি দরকার আমাকে ও আমার স্ত্রীকে জানাতে বললাম এবং  আশ্বস্ত করলাম ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন, মনোবল ও সাহস রাখুন। আমি নিজে ঔষধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপএ ওনার বাসায় দরজার সামনে দিয়ে  আাসি।

 গত ২২  মে তারিখ বাসায় থেকে  তাদের পরিবারের চার জনের করোনা পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল নিয়ে যায়।পরবর্তীতে রিপোর্টে  দেখা যায় , পুর্বে যিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন ওনার নেগেটিভ এসেছে পরিবারের বাকি  তিন জন  (শিশুসহ) করোনা পজিটিভ এসেছে। পুরো পরিবারে একমাত্র স্ত্রী ছাড়া কারোরই  কোনো লক্ষ্মণ ছিলোনা। গত ১৯  মে থেকে করোনা পজিটিভ হওয়ার রিপোর্ট আসার পর উনারা  নিজেরা আইসেলেশোনে চলে যান। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করে যাচ্ছেনএবং করোনার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে মনোবল ঠিক রেখে আল্লাহর রহমতে  ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন।

এপার্টমেন্টের একজন প্রতিবেশী মো. লোকমান হোসেন ভুঁইয়া, সিনিয়র অফিসার, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ওনিও সর্বদা রোগীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং সিঁড়িতে জীবানু নাশক ছিটাচ্ছেন।

আমি বিষয়গুলো তুলে ধরছি এই কারণে যে,  করোনা ভাইরাস একটি ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি, এই ভয়ে মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ে। কিন্তু  কোনো পাড়া মহল্লা বা কোনো এপার্টমেন্টে যদি কোনো করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া  যায় তাতে আতংকিত না হয়ে তাদের  পাশে দাড়িয়ে তাদেরকে সাহস ও মনোবল দেওয়া উচিৎ ।মনে রাখতে হবে যে, পরিবারে যদি একজন করোনা পজিটিভ  হয় তাহলে পুরো পরিবারটিকে আাইশোলেসনে থাকতে হয়। একমাত্র তাঁরাই বুঝতে পারে ঐ সময়টা কত কঠিন এবং দূর্বিষহ।

বর্তমান সময়ে দেশে প্রতিদিন  যে হারে করোনা রোগী  শনাক্ত হচ্ছে তাতে  আমি আপনি যে কোনো সময় আক্রান্ত হতে পারি। সুতরাং আতংকিত না হয়ে   সরকারের ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নির্দেশনাবলী মেনে চলি এবং আশেপাশের করোনা রোগীদের খোঁজখবর নিয়ে তাদের  মনোবল বাড়াতে সাহায্য করি। সেই সাথে সকল বিধিনিষেধ মেনে চলে,  নিজের আশেপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রেখে নিজেরা জীবানু নাশক ছিটাই। সর্বদা মাস্ক ব্যবহার করি,নিরাপদ দুরত্বে থাকি।

পরিশেষে, আসুন সামাজিক দায়বোধ থেকে মানুষ মানুষের জন্য এ কথা মাথায় রেখে আমরা সবাই মানবিক হই।  করোনা ভাইরাস সংক্রামক প্রতিরোধে নিজেরা সচেতন হই। আমাদের আশেপাশে করোনা পজিটিভ রোগী থাকলে আতংকিত না হয়ে এবং তাদেরকে অবহেলা না করে নিজেরা সুরক্ষিত থেকে সাহস ও মনোবল দিয়ে সহায়তা করি। করোনা যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য করোনা রোগী ও তার পরিবার এর দ্রুত সুস্থতার জন্য  মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি। ঘরে থাকুন,  সুস্থ থাকুন, নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখুন।

লেখক: এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট,  চেয়ারম্যান লিগ্যাল সাপোর্ট এন্ড পিপলস রাইটস

ঢাকাটাইমস/২৯মে/এসকেএস