অবশেষে ইউপি সদস্যের জমিতে দাফন হলো সেই নারীর

প্রকাশ | ৩০ মে ২০২০, ০৮:৩৭

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

প্রাণসংহারি ভাইরাস করোনার উপসর্গ নিয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের মারা যান রানী বেগম। ২৩ বছর বয়সী ওই নারীকে দাফন করার জন্য শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়িতে কবর খুঁড়তে গেলে বাধা দেয় গ্রামবাসী। কিন্তু গ্রামবাসীর বাধায় দুই গ্রামের কোথাও দাফন করতে পারছিলেন না মৃতের স্বজনরা। অবশেষে বিষয়টি কানে যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। তার হস্তক্ষেপে এক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের জমিতে দাফন করা হয় গৃহবধূ রানীকে। ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায়।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিবুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় রানী বেগম। তার মা খদেজা বেগম, বোন ইতি আক্তার, ছোট ভাই রাসেল তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। উপসর্গ থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে হাসপাতালের প্রি-আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে ওই গৃহবধূ মারা যান।

রানী বেগমের মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন থেকে তার স্বামী আকবর আলীসহ অন্যান্য স্বজনদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মরদেহ নিতে সাড়া মেলেনি।

আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন বলেন, মারা যাওয়া নারীর সঙ্গে ৬ বছর পূর্বে একই উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের আকবর আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তারা জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বাদুরপাড়া কলোনিতে ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন।

তিনি আরও বলেন, সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে খবর পেয়ে লাশ দাফনের জন্য নিহতের বাবার বাড়িতে যাই। বঠিনা গ্রামে দুটি কবরস্থানে দাফনের জন্য কবর খুঁড়তে গেলে এলাকাবাসী বাধা দেয়।

অন্যদিকে আউলিয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের মাধ্যমে নিহতের শ্বশুরবাড়ি কচুবাড়ি এলাকায় লাশ দাফনের পদক্ষেপ নিলে সেখানে গ্রামবাসী বাধা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে নিহতের বাবার বাড়ির কাছের গ্রাম কশালবাড়িতে আকচা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রমজান আলী তার নিজস্ব জমিতে কবর খুঁড়ে ওই গৃহবধূর মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করেন।

পরে ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি স্বেচ্ছাসেবক দল মরদেহ নিয়ে যায় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে বিকালে দাফন করে।

ইউপি সদস্য রমজান আলী বলেন, গ্রামবাসীর বাধার মুখে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া গৃহবধূর মরদেহ দাফন করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মানবিক দিক থেকে নিজের জমিতেই কবর খুঁড়ে তাকে দাফনের উদ্যোগ নেই।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সকাল থেকেই আউলিয়াপুর ও আকচা ইউনিয়নে গৃহবধূ রাণী আক্তারের লাশ দাফন করার চেষ্টা করলে গ্রামবাসী আপত্তি জানায়। পরে আকচা ইউপি সদস্য রমজান আলীর জমিতেই কবর খুঁড়ে দাফন করা হয়।

ঢাকাটাইমস/৩০মে/প্রতিনিধি/এমআর