ক্যানসার রুখতে এই ১৭ খাবার খাওয়া আজই বন্ধ করুন

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ৩০ মে ২০২০, ১০:১৪ | প্রকাশিত : ৩০ মে ২০২০, ০৯:১৭

আপনি সম্ভবত জানেন যে জাঙ্ক ফুড খাওয়া ক্যানসারের জন্য একটি বড় ঝুঁকির কারণ। তবে তথাকথিত স্বাস্থ্যকর অনেক খাবারও এই তালিকায় রয়েছে। যেগুলো ক্যানসারের কারণ হতে পারে। তাই যতদ্রুত সম্ভব এসব খাবার খাওয়া বন্ধ করা উচিত। এখানে এমন ১৭টি খাবারের তালিকা রইলো।

সোডা

সোডা কেবল চিনির জন্যই ক্ষতিকার নয়। এটি ক্যান্সারেরও কারণ হতে পারে। বাজারে প্রাপ্ত বিভিন্ন ব্রান্ডের সোডা গরমের দুপুরে গলা এবং জিভের শান্তি আনলেও, ভবিষ্যতের ক্যান্সার এর বার্তাও সোডা প্রতিবার বয়ে আনে। এতে ব্যবহৃত কৃত্তিম রঙ ক্যান্সারের কারণ।

গ্রিল করা মাংস

গ্রিল করা বা ঝলসানো মাংস খেতে ভালোবাসেন না এমন লোকের সংখ্যা সত্যিই হাতে গোনা। তবে ওই হাতে গোনা লোকেরা এই মুহূর্তে ক্যান্সার এর বিপদ থেকে সুরক্ষিত বলা যায়। কারণ, ঝলসানো মাংস প্রস্তুত করার জন্য উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়। এই উচ্চ তাপমাত্রা, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হাইড্রোকার্বন তৈরি করে।

মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন

খাওয়া সহজ এবং তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর একটি স্ন্যাকস পপকর্ন। তবে, ঝামেলা হল এর প্যাকেটে। বেশিরভাগ মাইক্রোওয়েভ পপকর্নের প্যাকেটের গায়ে থাকে ‘পারফ্লুরোঅক্টানোইক’ অ্যাসিড নামক রাসায়নিক উপাদান। যা স্তন, বৃক্ক, মুত্রথলি, কোলোরেক্টাল, প্রোস্টেট, ফুসফুস, থাইরয়েড, লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

ক্যানে থাকা খাবার, বিশেষ করে টমেটো

ক্যান খাবারগুলি বিপজ্জনক কারণ ক্যানে রাসায়নিক বিপিএ থাকে। টমেটো সাধারণভাবে খুব স্বাস্থ্যকর; তবে প্যাকেজিংয়ের সমস্যার কারণে ক্যানে থাকা টমেটো না খাওয়ায় উত্তম।

হাইড্রোজেনেইটেড অয়েল বা ট্রান্স-ফ্যাট

মানুষের তৈরি এই উপাদান রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত করা হয়। আবার এর গন্ধ ঢাকতে ও স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক পদার্থ।

গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে, বাণিজ্যিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা খাবারে থাকা ‘হাইড্রোজেনেইটেড’ ও আংশিক ‘হাইড্রোজেনেইটেড’ উদ্ভিজ্জ তেল স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় দ্বিগুণ। তাই এর পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে ‘এক্সট্রা-ভার্জিন অলিভ অয়েল’, ‘এক্সট্রা-ভার্জিন কোকোনাট অয়েল’ কিংবা ‘পাম অয়েল’

চাষ করা স্যামন

বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা মাছ যেমন- স্যামন, অত্যন্ত জনাকীর্ণ পরিবেশে বড় হয়। মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবির আক্রমণ থেকে বাঁচতে ব্যবহার হয় বিভিন্ন জীবণুরোধকারী ওষুধ, কীটনাষক ও অন্যান্য ‘কারসিনোগেনিক’ রাসায়নিক উপাদান। প্রাকৃতিক মাছের তুলনায় চাষ করা মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণও কম থাকে। তাই যতটা সম্ভব নদী বা সমুদ্রের মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

কৃত্রিম সুইটেনার

বেশিরভাগ কৃত্রিম সুইটেনার রাসায়নিক প্রক্রিয়া দ্বারা উত্পাদিত হয় এবং এগুলো মোটেই নিরাপদ নয়। কিছু গবেষণা পরামর্শ দেয় যে কৃত্রিম সুইটেনারগুলি দেহে টক্সিন ডি কেপি তৈরি করে এবং মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।

পরিশোধিত সাদা আটা

আটা পরিশোধনের সময় এর প্রায় সকল পুষ্টিগুণই নষ্ট হয়ে যায়। পরে একে ক্লোরিন গ্যাসের সাহায্যে ব্লিচ করা হয় ক্রেতার চোখে আকর্ষণীয় করার জন্য। এই আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রাও অনেক বেশি। অর্থাৎ শরীরে পুষ্টি সরবরাহ ছাড়াই ইনসুলিনের মাত্রা হুট করে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই পরিশোধিত সাদা আটার পরিবর্তে গম, কাঠবাদাম বা বার্লির আটা খাওয়া ভালো।

নন-অর্গানিক ফল এবং সবজি

ফল এবং সবজি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। কিন্তু চাষ করার সময় এদের ওপর যে কিটনাশক স্প্রে করা হয় তা কিন্তু স্বাস্থ্যকর নয় মোটেই। আগাছা মারার ওষুধ ইউরোপে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কারণ এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

প্রক্রিয়াজাত মাংস

প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে- এমন তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা- ডব্লিউএইচও। প্রক্রিয়াজাত মাংস বলতে সসেজ, হট ডগ এই ধরনের মাংস থেকে প্রস্তুত খাবারের কথা বলা হয়েছে। এধরনের মাংস খেলে অন্ত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আলুর চিপস

‘হাইড্রোজেনেইটেড ভেজিটেবল অয়েল’য়ে ভেজে তৈরি করা হয় এই চিপস, সঙ্গে থাকে অতিরিক্ত লবণ। ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, প্রতিদিন মাত্র ১ আউন্স চিপস খেলেই বছরে গড়ে প্রায় দুই পাউন্ড ওজন বাড়তে পারে। পাশাপাশি এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স-ফ্যাটও থাকে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। আর লবণে থাকা সোডিয়াম বাড়ায় রক্তচাপ। আলুর চিপসকে মচমচে বানানোর জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা হয়। এতে ‘অ্যাক্রিলামাইড’ নামক ‘কারসিনোজেন’ ধরনের বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়। যা সাধারণত সিগারেটে মেলে। এজন্য দোকান থেকে চিপস কেনার পরিবর্তে ঘরেই চিপস বানিয়ে খাওয়া অভ্যাস করতে হবে।

জিএমও ফুড

জিএমও হচ্ছে জেনেটিক্যালী মডিফাইড অর্গানিজম আবার কখনো কখনো জিইও অর্থাৎ জেনেটিক্যালী ইঞ্জিনিয়ার্ড অর্গানিজম ও বলা হয়। সংক্ষেপে জিএম বা জিই ব্যবহার হয়ে থাকে। কৃত্রিমভাবে কোন জেনেটিক ইনফরমেশন, অর্গানিজমে ঢুকিয়ে দিয়েই জিএমও তৈরী করা হয় অর্থাৎ কোন একটি অর্গানিজমে, কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্যের নিউক্লিওটাইড সিকুয়েন্স অর্থাৎ এ্যালিয়েন ডিএনএ পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে ঢুকিয়ে, অর্গানিজমকে জেনেটিক্যালি মেনিপুলেট করে কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন করা হলে ওই অর্গানিজমকে জিএমও বলে।

গবেষনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, জিএম ফসলের অন্য জীব থেকে ঢুকানো জেনেটিক ইনফরমেশন, মানুষের স্টোমাক ও ইনস্টেস্টাইন এর মাধমে হজম হতে পারে না বা কখনো কখনো রক্তের মাধ্যমে সাধারণ ডিএনএ সাথে মিশে যেতে পারে। আচরনের পরিবর্তন আনে। এর ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ ভাগ বেড়ে যায়। এছাড়া সেক্স ক্রোমোজোমে প্রভাব ফেলতে পারে, এতে সেক্স ইনফর্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।

অ্যালকোহল

অ্যালকোহল সেবনে কেউ সামায়িকভাবে কিছুটা আরাম অনুভব করতে পারে কিন্তু অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক হতে পারে। রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেলে প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ হতে পারে। ক্রমাগত অ্যালকোহল পান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

প্রক্রিয়াজাত ও কৃত্রিম চিনি

শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত চিনি ক্যান্সার কোষের প্রিয় খাবারগুলো মধ্যে অন্যতম। অর্থাৎ এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে সহায়ক। মেডিসিন বিভাগে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত জার্মান চিকিৎসক ওটো ওয়ারবার্গ ১৯৩১ সালে প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন যে টিউমার ও ক্যান্সার কোষ বেড়ে উঠতে উচ্চ মাত্রায় ‘ফ্রুক্টোজ’যুক্ত চিনির উপর নির্ভরশীল। তাই প্রক্রিয়াজাত কিংবা কৃত্রিম চিনির পরিবর্তে মধু, গুড়, ম্যাপল সিরাপ ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।

মার্জারিন

মাখনের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছিল মার্জারিনের নাম। কিন্তু বর্তমানে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, মার্জারিন হাইড্রোজেনেটেড উদ্ভিজ্জ তেল থেকে তৈরি এবং ট্রান্স ফ্যাট-এ ভরা। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে ট্রান্স ফ্যাট আসলে মাখনের মধ্যে পাওয়া স্যাচুরেটেড ফ্যাট এর থেকেও বেশি বিপজ্জনক।

ডায়েট ফুড

ঘরে তৈরি খাবারের বদলে বেশির ভাগ মানুষেরই খাদ্য তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে বাজার চলতি নানা রকম ডায়েট ফুড। যার মধ্যে রয়েছে প্যাকেটজাত খাবার এবং ডায়েট কোকের মতো নরম পানীয়। এই সব খাবারে ওজন কমে ঠিকই, তবে ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়তে পারে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেতে সকলেই খুব ভালোবাসে। তবে ট্রান্স ফ্যাট-এ ভাজা এবং তারপর অতিরিক্ত নুন ব্যবহার করার কারনে এই খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে। একইসাথে এই জাতীয় খাবার উচ্চ তাপমাত্রায় তৈরী হয় বলে, এতে অ্যাক্রিলামাইড থাকে।

ঢাকা টাইমস/৩০মে/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :