অক্টোবরেই করোনার ভ্যাকসিন আসবে, দাবি মার্কিন কোম্পানির

প্রকাশ | ৩০ মে ২০২০, ০৯:৩৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্টের নানা দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার। যুক্তরাষ্ট্রেই ৩৬০ জনের উপরে ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। এখনও অবধি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফল সন্তোষজনক বলেই দাবি করেছেন ফাইজারের কর্ণধার অ্যালবার্ট বোরলা।

শুক্রবার একটি ভিডিও কনফারেন্সে তিনি দাবি করেছেন, ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে ভাল ফল দেখা গেছে। সব ঠিক থাকলে এ বছর অক্টোবরের মধ্যেই করোনার ভ্যাকসিন বাজারে নিয়ে আসবেন তারা।

জার্মান বায়োটেকনোলজি ফার্ম বায়োএনটেক এসইর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কোভিড ভ্যাকসিন বানাচ্ছে ফাইজার। ফাইজার সিইও অ্যালবার্ট বোরলা বলেছেন, ১০০ রকমের ভ্যাকসিন ডিজাইন করা হয়েছে পৃথিবীর নানা দেশে। তার মধ্যে ১০টি ভ্যাকসিন সাফল্যের খুব কাছাকাছি রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভেক্টর ভ্যাকসিন, আমেরিকার বায়োটেকনোলজি ফার্ম মোডার্নার এমআরএনএ ভ্যাকসিন।

ইতালির মেডিক্যাল ফার্মও দাবি করেছে তাদের বানানো ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ইঁদুরের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে। ফাইজার ও বায়োএনটেকের বানানো ভ্যাকসিনও আরএনএ সিকুয়েন্সকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে। তবে এই ভ্যাকসিনের ডিজাইন মোডার্নার থেকে আলাদা।

অ্যালবার্ট বোরলার কথায়, প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে ভ্যাকসিনের ভাল ফল দেখা যাচ্ছে। তৃতীয় পর্যায়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের উপর ভ্যাকসিনের প্রভাব লক্ষ করেই বাণিজ্যিক হারে তার উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। অক্টোবরের মধ্যেই ভ্যাকসিন বাজারে নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন তারা।

ফাইজারের ভ্যাকসিন রিসার্চ বিভাগের প্রধান ক্যাথরিন জ্যানসেন বলেছেন, এই আরএনএ ভ্যাকসিন দেহকোষকে ভাইরাল প্রোটিন তৈরিতে বাধ্য করে যাতে তার প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি শরীরেই তৈরি হয়ে যায়।

এই গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন জার্মানির বায়োএনটেকের অধ্যাপক উগার সাহিন। তিনি জানিয়েছেন, এই আরএনএ ভ্যাকসিনের নাম বিএনটি-১৬২। এটি আসলে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট। সার্স-কভ-২ আরএনএ ভাইরাসের সারফেস প্রোটিনগুলোকে বিশেষ উপায় বিশুদ্ধ করে এই ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের ডিজাইন করা হয়েছে। এই ভাইরাল প্রোটিনগুলো মানুষের শরীরে ‘মেমরি বি সেল’ তৈরি করবে যা থেকে দেহকোষে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। অ্যান্টিবডি বেসড ইমিউন রেসপন্স বা অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স তৈরি করবে এই ভ্যাকসিন। ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

আমেরিকার আরও এক বায়োটেকনোলজি ফার্ম মোডার্নাও সম্প্রতি দাবি করেছে তাদের এমআরএনএ-১২৭৩ ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। মোডার্না বায়োটেকনোলজি ফার্মের সঙ্গে এই এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিজ এর ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা।

মোডার্নার চিফ একজিকিউটিভ অফিসার স্টিফেন ব্যানসেল দাবি করেছেন, এই ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে সাফল্য মিলেছে। ধীরে ধীরে শরীরে কাজ শুরু করেছে ভ্যাকসিন। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, রোগীদের শরীরে ভাইরাসের প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু হয়ে গেছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও একটু একটু করে বাড়ছে।

এদিকে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভেক্টর ভ্যাকসিনের ডিজাইন ভারতে তৈরি করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। অস্ট্রিয়ার থেমিস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোডাজেনিক্স ও ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিন রকমের কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে সেরাম ইনস্টিটিউটে। অক্সফোর্ডের ভাইরোলজিস্ট সারা গিলবার্টের টিমের তৈরি ভেক্টর ভ্যাকসিনের ক্নিনিকাল ট্রায়াল রেসাস প্রজাতির বাঁদরের উপর ব্যর্থ হয়েছে। এই বাঁদরের শরীরে কোভিড সংক্রমণ রুখতে না পারলেও নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করেছে এই ভ্যাকসিন। মানুষের শরীরে কীভাবে এই ভেক্টর ভ্যাকসিনের প্রয়োগ সফল হবে সেই নিয়ে বৃহত্তর গবেষণা চলছে অক্সফোর্ডে।

ঢাকা টাইমস/৩০মে/একে