আমাদের ভুল শিক্ষা

প্রকাশ | ৩০ মে ২০২০, ১১:২৪

মোজাফফর হোসেন

একটা ভুল স্লোগান দিয়ে বাংলায় শিক্ষাটা শুরু হয়েছে- লেখাপড়া করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে। গ্রামে আমাদের মা-বাবারা বলতেন। শিক্ষক বলতেন। স্কুলের পাঠ্যবই, নীতিশিক্ষার বইয়ে লেখা থাকত।নিশ্চয় শহরে কোটিপতির সন্তানদের এই কথা শুনতে বা পড়তে হয়নি।

মানে যাদের গাড়িঘোড়া অলরেডি ছিল তাদের জন্য শিক্ষার অব্যক্ত স্লোগানটা কী ছিল আমি আমি জানি না। লেখাপড়া করে জ্ঞানী হয়ে লাভ কি এটা আমরা কখনোই বুঝিনি। যে বাবা কোনোদিন শার্ট প্যান্ট পরেনি, যে মা ভালো করে শাড়ি পরা জানত না, সেই বাবা-মা এও বলতেন, ছেলে শিক্ষিত হয়ে সাহেব হবে। এটাও একধরনের সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা, নিজেকে ছোটো করে জানতে-বুঝতে শেখা।

যে জন্য গত পঞ্চাশ বছরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এদেশে বিরাট কিছু দিতে পারিনি। গ্রামে থাকতে সব সময় চোর-ডাকাতদের মনে করেছি দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা, ওদের চেয়ে অপরাধী এদেশে আর কেউ নেই। কিন্তু একটা চোর চৌদ্দপুরুষ ধরে চুরি করেও একটা গ্রামের ধনী তো দূরে থাক মধ্যবিত্তও হতে পারেনি।

তাহলে গ্রামে শহরে দেশে গত চল্লিশ বছরে ধনী হলো কারা? কিছু ছিল না, কিন্তু এক প্রজন্মের হাত ধরে দেশের শীর্ষ কোটিপতিদের কাতারে কারা গেছেন কারা?

সৎ থেকে কঠোর পরিশ্রম করে সচ্ছল হওয়া যায়, হয়ত ধনী হওয়া যায়, কিন্তু দেশের অন্যতম শীর্ষধনী হওয়া যায় এটা আমি বললে আপনি বিশ্বাস করবেন? তারা কি শিক্ষা দিয়ে হয়েছে? হয়েছে একটা সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে। সিস্টেমটা তৈরি করেছে শিক্ষিত মানুষরা।

শিক্ষিত মানুষরা এই সিস্টেমটা বাঁচিয়ে রেখেছে নিজেদের স্বার্থে। এই কারণে বাড়ি লুটলে চোর/ডাকাত, দেশ লুটলে স্যার। যাদের আমরা বলি করাপ্ট অফিসার, করাপ্ট আমলা। ওরা কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী। ওরা মানে আমরা। আমরা গাড়িঘোড়া চড়ছি, সাহেব হচ্ছি। আমরা একটা করাপ্ট সিস্টেম চালাচ্ছি। বাবা-মাকে দিয়ে সিস্টেম তো এটাই চাইয়ে/বলিয়ে নিয়েছে, নাকি?

দেশের জন্য সবচেয়ে সৎ ভালো মানুষ, দেশের জন্য ক্ষতিকর না তাহলে কারা? অবশ্যই দেশের কৃষক-খেটে খাওয়া মানুষেরা। কিন্তু আশ্চর্য মূর্খ বলতে আমরা ওদেরকেই বুঝি। আমাদের শিক্ষা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে।

লেখক: গল্পকার

ঢাকাটাইমস/৩০মে/এসকেএস