জিয়ার সমাধিতে তাঁরা নয়জন

প্রকাশ | ৩০ মে ২০২০, ১৫:১১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

একযুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দল বিএনপি। তারপরও দলের প্রতিষ্ঠাতার জন্ম ও  মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করত বিএনপি। তবে তার ৩৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছে যখন বাংলাদেশসহ  গোটা বিশ্ব করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দিশেহারা।
শনিবার দেশজুড়ে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ১২দিন ব্যাপী কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি। তবে করোনার কারণে এবার পুরোপুরি ভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাতাকে স্মরণ করছে দলের নেতাকর্মীরা। যার মধ্যে ভার্চুয়াল কর্মসূচিই বেশি হবে। মৃত্যুবার্ষিকীর প্রথম এবং প্রধান আয়োজন থাকে শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জিয়াউর রহমানের সমাধিতে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন।
প্রতিবছর হাজার হাজার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাধিস্থলে জড়ো হলেও এবার সেখানে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সাতজন সদস্য। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফাহেতা ও দোয়া করার জন্য ছিলেন ওলামা দলের দুইজন শীর্ষ নেতা। মহামারি করোনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের শোকের দিনটিকে আরো বিবর্ণ করে দিয়েছে।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা শপথ নিয়েছি এই দুর্দিনে আমরা জনগণের পাশে দাঁড়াবো। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব ইতিমধ্যে আমরা দাঁড়িয়েছি, আরো দাঁড়াব এবং একই সঙ্গে গণতন্ত্র উদ্ধার করবো এইটাই হচ্ছে আজকের দিনের আমাদের শপথ।’
এসময় তার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
ওলামা দলের শাহ নেসারুল হক ও অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম সমাধিস্থলে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনার জন্য ছিলেন। অথচ এর আগে অনেকার এই দিনে দলের প্রতিষ্ঠাতার সমাধিস্থলে যাওয়া নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা পাওয়ারও অভিযোগও থাকত বিএনপির। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। যদিও দলের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি পালনে ডিএমপি কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়ে অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সৈনিকের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর।
দলের প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে শনিবার ভোর ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তলন করা হয়। পরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দলের মহা-সচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সিনিয়র নেতারা জিয়ার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান।
দুপুরে মোহাম্মদপুর ১নং আসাদগেটে অসহায়, দুস্থদের মাঝে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হবে যা বিএনপি কমিনিউকেশনের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার হবে।
প্রতিবছর জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দুস্থদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হলেও এবার প্রস্তুত করা খাদ্যের পরিবর্তে খাদ্যসামগ্রী, বস্ত্র বিতরণ ও আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
দলের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- এসব সামগ্রী বিতরণকালে কোনোমতেই কোনও সমাবেশ করা যাবে না।

১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ির এক বনেদি মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন জিয়াউর রহমান। তিনি দেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। জন্ম ও শৈশবে তার ডাক নাম ছিল কমল। তার পিতার নাম মনসুর রহমান এবং মাতার নাম জাহানারা খাতুন ওরফে রানী। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়।
১৯৫৩ সালে তিনি কাকুল পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৫৫ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন। সামরিক বাহিনীতে তিনি একজন সুদক্ষ প্যারাট্রুপার ও কমান্ডো হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন।
১৯৬০ সালে পূর্বপাকিস্তানের দিনাজপুর শহরের মেয়ে খালেদা খানমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জিয়াউর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার হিসেবে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জিয়াউর রহমান। দায়িত্ব পালন করেন মুক্তিযুদ্ধের একটি স্বতন্ত্র সেক্টরের। তার নামে গড়ে ওঠে জেড ফোর্স। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অধিষ্ঠিত হন জিয়াউর রহমান। তিনি ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাদাবী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।
(ঢাকাটাইমস/৩০মে/বিইউ/এইচএফ)