‘আমার সোনারে বাঁচাতি ভিটে বাড়িটুকুও বিক্রি করতে চাইছিলাম রে’

যশোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ মে ২০২০, ২০:৪১ | প্রকাশিত : ৩০ মে ২০২০, ২০:৩৬

‘আমার সোনারে বাঁচাতি ভিটে বাড়িটুকুও বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা দিতি চাইছিলামরে। ওদের কাছতে ১ তারিক পইরযন্ত টাইম আমরা নিলাম রে আল্লা। সে সুমায় দিলনারে। আমার সুনারে ছাইড়ে আমি কি কইরে থাকপোরে। আমি এগের বিচার চাই। তুমি এগের বিচার কইরো আল্লা।’

শনিবার সকালে লিবিয়ায় অপহরণকারীদের হাতে নিহত যশোরের রকির বাড়িতে ঢোকার মুখেই তার মা মহিরুন নেছার এমন হৃদয়বিদারক আহাজারি কানে আসে। ঝিকরগাছা উপজেলার ১০ নম্বর শংকরপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম খাটবাড়িয়ার ওই বাড়িতে গিয়ে কথা কথা হয় রকির বড় ভাই সোহেল রানার সঙ্গে।

তিনি জানান, তারা চার ভাই বোন। রকি সবার ছোট। তিনি যশোর সরকারি সিটি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষে পড়া অবস্থায় ১৫ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ভিটে-বাড়ির একটি অংশ বিক্রি করে ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে দালালের মাধ্যমে ভাইকে লিবিয়ার ত্রিপোলি পাঠানো হয়। তার এক আপন চাচাতো ভাইও থাকেন সেখানে। রকি যে বিমানে গিয়েছিল সে বিমান বেনগাজিতে নামে। যুদ্ধের কারণে দালাল তাকে সেখান থেকে ত্রিপোলিতে নিতে পারছিলেন না বলে জানায়। এজন্য সে বেনগাজীর একটি তেল কোম্পানিতে কাজ নেয়। সেখানে দুই মাস কাজ করা অবস্থায় পরিচয় হয় এক বাংলাদেশি দালালের সঙ্গে। বাংলাদেশি ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে ত্রিপোলীতে তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার চুক্তি হয় ওই দালালের সঙ্গে। সে অনুযায়ী ১৫ মে তিনি দালালের সঙ্গে বেনগাজী থেকে রওনা হয় ত্রিপোলির উদ্দেশ্যে। ১৭ মে ত্রিপোলীর কাছাকাছি মিজদাহ নামক স্থানে এসে তারা অপহরণকারীদের হাতে জিম্মি হয়। ১৮ মে সন্ধ্যার দিকে সোহেল রানার কাছে বাংলাভাষী একজন ফোন করেন। সেই ব্যক্তি নিজের পরিচয় না দিয়ে রকির মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। এসময় অপরহরণকারীরা সোহেল রানার সঙ্গে রকির কথাও বলিয়ে দেয়। রকি সোহেলকে জানায় তাকেসহ অন্য জিম্মিদের অপহরণকারীরা খুব নির্যাতন করছে এবং টাকা না দিলে তাকেসহ অন্যদের হত্যা করা হবে। এরপর প্রতিদিনই অপহরণকারীরা রকিকে নির্যাতন করে সোহেলের কাছে টাকার দাবিতে ফোন করাতেন এবং দুবাইয়ের একটি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করতে বলতেন। এক পর্যায়ে রকির পরিবার ১০ লাখ টাকা দিতেও রাজি হয়েছিল। তারা জুনের ১ তারিখ টাকা দেয়ার সময় নিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই তারা তার ভাইকে মেরে ফেলল।

সোহেল রানা আরও জানান, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে কল দেন তার ভাই রকি। এসময় ঘটনাস্থলের গুগল ম্যাপের ছবিও পাঠান। ফোনে রকি অপরহনকারীদের সঙ্গে জিম্মিদের মারামারির ঘটনা জানিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাতে বলেন। এরপর শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে অপহরণকারীদের হাতে আহত মাগুরার তরিকুলের মাধ্যমে ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ পান তিনি। যেকোনভাবে ভাইয়ের লাশটা ফেরত পেতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন রকির ভাই সোহেল রানা।

এ বিষয়ে যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের সাবেক সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনির জানান, রাকিবুলের লাশ দ্রুত দেশে আনতে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

ঢাকাটাইমস/৩০মে/পিএল

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :