কাটছে দুই মাসের অচলাবস্থা, শঙ্কা রয়েই গেছে

প্রকাশ | ৩০ মে ২০২০, ২২:৪৬ | আপডেট: ৩০ মে ২০২০, ২২:৫৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
সোমবার থেকে চলবে বাস, ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করছেন শ্রমিকরা। ছবি: সাইফুল ইসলাম

দেশের ইতিহাসে এর আগে এত দীর্ঘ ছুটি আর কেউ দেখেনি। দুই মাসের বেশি সময় ধরে গণপরিবহন বন্ধ এমনটাও আগে ঘটেনি। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও দুই মাসের বেশি সময় ধরে প্রায় অচল। ভাইরাসটির উপস্থিতি এখনও চরম পর্যায়ে। তবে থমকে যাওয়া জনজীবন স্বাভাবিক করতে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই সীমিত পরিসরে সবকিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামীকাল রবিবার কাটছে দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময়ের অচলাবস্থা।

৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর রবিবার শর্তসাপেক্ষে খুলছে সরকারি-বেসরকারি অফিস।  গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় সাধারণ ছুটি। দফায় দফায় তা বাড়িয়ে সর্বশেষ গত ১৯ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

এদিকে আগামীকাল রবিবার থেকে সীমিত আকারে চালু হচ্ছে রেল যোগাযোগ, শুরু হচ্ছে লঞ্চ চলাচল। পরদিন সোমবার থেকে চলবে বাসও। এছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটে চালু হচ্ছে বিমানও। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ঝুঁকি থাকায় এখনই খুলছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

তবে যে মুহূর্তে অচলাবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অপেক্ষায় দেশবাসী তখন করোনা প্রকোপ তুঙ্গে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ছয়শ, আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নতুন নতুন রেকর্ড করছে। এই অবস্থায় সবকিছু চালু করে দেয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কাও। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা না এলে চরম মূল্য দেয়া লাগতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

লকডাউন সঠিকভাবে কার্যকর না হওয়ায় সারাদেশে সামাজিক সংক্রমণ ঘটায় জুন মাসে দেশে করোনায় ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করেছে ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ। তারা মনে করছেন, সবকিছু খুলে দেয়ার ফলে নিয়ন্ত্রণহীন পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির প্রকোপ।

করোনার বিস্তার ঠেকাতে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের অনেক নিয়মনীতিই তোয়াক্কা করা হয়নি বলে মনে করেন প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, প্রতিদিনই কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার বৃদ্ধির মধ্যে ছুটি বা লকডাউন শিথিল করে দেয়ায় সংক্রমণের গতি আরও ঊর্ধ্বমুখি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের নিয়মনীতিগুলো কঠোরভাবে পালন করতে হবে।

সরকারি-বেসরকারি অফিস চালুর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এগুলো কঠোরভাবে মানতে আহ্বান জানানো হয়েছে। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৫০ ভাগ যাত্রী পরিবহনের কথাও বলা হয়েছে। তবে তা কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব হবে সেটা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।

এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে রবিবার থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে প্রশাসন। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সহায়তা দেয়ার জন্য সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আব্দুল জলিল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।

সবকিছু মিলিয়ে অচলাবস্থা কাটতে যাওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছে দেশবাসী। অপরদিকে পরিস্থিতি আরও কতটা মারাত্মক হয় সেটা নিয়ে রয়েছে চরম শঙ্কা। এই অবস্থায় সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

(ঢাকাটাইমস/৩০মে/জেবি)