৩৫০ বছরের সাক্ষী ঢাকার ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩১ মে ২০২০, ১৭:২৯ | প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২০, ০৮:০৩

আপনি যে এলাকায় বসবাস করেন, শত বছর আগে সেখানে কি ছিল? দুইশো বছর আগে বা পাঁচশো বছর আগেই বা কি ছিল? আপনার বসবাসের এলাকায় তখনো কেউ না কেউ বসবাস করেছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজা, বাদশা, নবাবরা শাসন করে গেছেন। আবার যুগে যুগে তাদের পতন হয়েছে। সুলতান, বাদশা, নবাবরা চলে গেলেও তাদের রাজত্ব ও শাসনের সাক্ষী রয়ে গেছে। যার একটি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চান মিয়া হাউজিং এলাকায় রয়ে গেছে প্রাক-ঐতিহাসিক যুগের অন্যতম নিদর্শন ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’। মসজিদের নির্মাতারা কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও প্রায় ৩৫০ বছর ধরে মোঘল আমলের স্থাপত্যশৈলী ও ইতিহাসের কথা জানান দিচ্ছে মসজিদটি।

ইতিহাসবিদদের মতে, ১৬৮০ সালের দিকে নবাব শায়েস্তা খাঁ’র পুত্র উমিদ খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় মোঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ রাজত্ব করে গেছেন। হয়ত, সাত গম্বুজ মসজিদের আশপাশে কোথাও বাঁধা ছিল নবাবের ঘোড়া। রানি, রাজপুত্র, রাজকন্যারা ঘুরে বেড়িয়েছেন এখানকার পথ-প্রান্তর-নদীতে। এখানেই হয়ত দল বেঁধে ছোটাছুটি করেছে নবাবের সৈন্য-সামন্ত। যদিও এসব কথার পক্ষে সাক্ষী দেয়ার এখন আর কেউ বেঁচে নেই।

মসজিদটির অতীত ইতিহাস এটি হলেও মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের কিছু এলাকায় মসজিদের ইতিহাসকে ঘিরে আছে নানা রকম কাহিনি। কারও কারও ধারণা, ‘মসজিদটি গায়েবি’। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে এসব মনগড়া গল্পেরও অবসান হয়েছে। প্রচলিত আছে, এক সময় এখানে কোনো মসজিদ ছিল না। এক রাতের মধ্যে গায়েবিভাবে মসজিদটি জেগে ওঠে। মসজিদটি গায়েবি হওয়ায় এতে কোনো ধরণের রঙ করা সম্ভব হয় না।

যদিও এর ব্যাখ্যা আছে। ইতিহাসবিদদের মতে, মসজিদটি সিরামিক্স বা চুনামাটি দিয়ে তৈরি। ফলে এতে কোনো ধরণের রঙ ধরার কথা না। মোঘল শাসনামল ও তার কাছাকাছি সময়ের অন্যান্য স্থাপনা দেখলেও দেখা যায়, সাত গম্বুজ মসজিদসহ সকল স্থাপনার নির্মাণ কৌশল প্রায় একই।

স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, প্রায় ৫০ বছর আগেও মোহাম্মদপুর এলাকায় হিন্দু পরিবার সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। সংখ্যালঘু মুসলিম পরিবার ছিল মাত্র চারটি। সাত সম্বুজ মসজিদের কয়েকশো গজের মধ্যে কোনো বসতি ছিল না। মানুষের বসবাস ছিল বর্তমান বাঁশবাড়ি এলাকায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের কিছু আগে এই এলাকায় বসতি বাড়তে শুরু করে। স্থানীয় প্রবীণদের মতে, স্বাধীনতা যুদ্ধের কিছু আগে তারা যখন এ এলাকায় আসেন, তখন বাঁশবাড়ি এলাকার পশ্চিম দিকে আর কিছু ছিল না। মসজিদের সামনের বর্তমান বাগানটি, তখন খোলা জায়গা ছিল। স্থানীয়রা সেটিকে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করতেন।

মসজিদটি ছিল নৌকার ঘাট। নানান দিক থেকে নৌকা এসে ভিড়ত সেখানে। কথিত আছে, মসজিদের চারদিকে চারটি মিনার রয়েছে। সেগুলোতে শায়েস্তা খাঁ’র সৈন্যরা থাকত। রাতের বেলা তারা এখানে থেকে আশপাশের এলাকা পাহারা দিত। স্থানীয়দের অনেকে সাত গম্বুজ মসজিদকে ‘গায়েবি মসজিদ’ আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন ঝাড়ফুঁকের জন্য আসেন মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাছে। স্থানীয় অন্য যেকোনো মসজিদের তুলনায় মুসলমানদের কাছে সাত মসজিদের গুরুত্ব বেশি।

মসজিদের ভেতরের দিকটি দৈর্ঘ্যে ১৭ দশমিক ৬৮ এবং প্রস্থে ৮ দশমিক ২৩ মিটার। মোট চার সারিতে দাঁড়িয়ে প্রায় শ’খানেক মুসল্লির নামাজের ব্যবস্থা আছে। মসজিদের মূল অংশের বাইরেও নামাজের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া মসজিদের সামনের বাগানটি সব সময় বন্ধ থাকলেও ঈদের নামাজের সময় খুলে দেয়া হয় বাগানটি।

ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী সাত গম্বুজ মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। ৪০০ বছরের সাক্ষী মসজিদটি সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।

ঢাকাটাইমস/৩১মে/কারই/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

কিডনি রোগ বাড়ছে শিশুদেরও! যেসব লক্ষণ দেখলেই সতর্কতা জরুরি

সস্তার পেয়ারার গুণে বশে থাকে ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :