পরীক্ষার ফলাফলই মেধা মূল্যায়ণের একমাত্র মানদণ্ড নয়

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২০, ০৮:৪১

মুশফিক খান আকাশ

পরীক্ষার রেজাল্ট কখনোই একজন শিক্ষার্থীর সামগ্রিক মেধা এবং শিক্ষা অর্জনের গভীরত্ব নির্ণয় করতে পারেনা। কিন্তু আমাদের দেশে এসএসসি অথবা এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলসহ সব বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর যে জিনিসটা দেখা যায় তা প্রচন্ড অবাক হবার মতো।

পরীক্ষার ফলাফল এখানে একটা পরিবারের সম্মান হয়ে দাড়ায়। মনে হয় সমাজে মর্যাদা এবং স্ট্যটাসের একমাত্র হাতিয়ার বাড়ির একজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফলাফল। এখানে আরেকটা বিষয় না বললেই নয়, শিক্ষার্থীকে এখানে মূল্যায়নের একমাত্র মানদন্ড জিপিএ ৫ বা এ প্লাস।

আজ সকালের ঘটনা আমাদের বাড়িতে কম্পিউটার থাকার সুবাদে কয়েকজন রেজাল্ট দেখতে এসেছে। তো যা হলো একজন একটুর জন্য জিপিএ ৫ পায়নি। তার প্রায় কান্নার মতো অবস্থা। তো জিজ্ঞেস করায় একমাত্র উত্তর বাবা বাড়িতে ঢুকতে দিবেনা। আর পাশের বাড়ির চাচিদের কথা আমার ভাল্লাগেনা। কথাগুলো শুনো বড়ই আশ্চর্য হলাম।

শিক্ষার জন্য রেজাল্ট কিন্তু সমাজ রেজাল্টের জন্য শিক্ষা প্রথার প্রচলন শুরু করে দিয়েছে। দুপুরে কোনো এক কাজে এক সরকারি অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে যে ঘটনা ঘটলো তা হলো, এক কর্মকর্তা মুঠোফোনে তার পরিচিত মানুষের বাচ্চাদের রেজাল্ট শুনছে। প্রথম কলে যা হলো ওপার থেকে খবর আসলো মেয়ে জিপিএ ৪ পেয়েছে। কর্মকর্তা বললেন ও আচ্ছা নাখোশমূলক গলা। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওপার থেকে কঠিন কঠিন শব্দও ভেসে আসছে মানে লোকটা রেজাল্টের জন্য মেয়েকে বকছে। আর কর্মকর্তা বলছে মাফ করে দেন কিছু বইলেন না। মেয়ের ভুল হয়ে গেছে। সত্যি কি ভুল?

অপরদিকে পরের কলটাতে ওপাশ থেকে জিপিএ ৫ কথাটা শোনা যায় কর্মকর্তা কুশল বিনিময় করলো তারপর শিক্ষার্থীকে কংগ্রেচুলেশন জানালো। প্রশ্নটা এখানে কেও জিপিএ ৫ না পেলে কংগ্রেচুলেশন পাওয়ার যোগ্য থাকে না?

সময়ের সাথে শিক্ষা ব্যবস্থার এক উৎকট পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা পদ্ধতি,শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অবিভাবক সমাজের মানসিকতার বিবর্তন ঘটানোরর ব্যবস্থা করা হয় নি। এখনো এই মানসিকতা নতুন প্রজান্মতে স্থানান্তরিত হচ্ছে তবে এখনই তা রুখতে হবে।

কোচিং বাণিজ্যতে চুক্তি নেওয়া হয় জিপিএ ৫ পাইয়ে দেওয়ার। বেশিরভাগ শিক্ষকদের মনোভাব জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্র মানেই যোগ্য। আর সব গরু গাঁধা সমতুল্য। আর সমাজে তো ব্যাধির সৃষ্টি হয়েছে জিপিএ ৫ না পেলে ছাত্র বা ছাত্রী কিছুই করতে পারবে না।

পরিবার, সমাজ, নির্ধারিত করে দেয় শিক্ষার্থীর দৌড়ের সীমা আর অপেক্ষা করে সর্বোচ্চ দ্রুত গতিতে দৌঁড়ায়ে বিশেষ স্থান দখল করার। কারো পায়ে পক্ষাঘাত থাকলে এটা তাদের দেখার বিষয় নয়। সে পরজিত এটাই একমাত্র ফলাফল।

অনেক শিক্ষার্থীই দৌড়ানোর আশানুরূপ ফল না পেয়ে সমাজের চোখ ফাঁকি দিতে আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়। অনেকেই এই ব্যাধির শিকার হয়ে নিরুৎসাহিত হয়ে স্রোত থেকে হারিয়ে যায়। আরেকটা অপরিস্ফুটিত প্রতিভাহীন ঝড়া ফুল।

এখন সময় এসেছে নতুন বিবর্তন ঘটানোর। ধুয়ে মুছে দিতে হবে এই সমাজের মনগড়া পরিকল্পনা। শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষক, অভিবাভকদের পরীক্ষা দিতে হবে। না এসএসসি না বরং মানসিকতা পরিবর্তনের। এর জন্য শিক্ষক, ছাত্র,অবিভাবকের এক হবার ব্যবস্থা করতে হবে সকল স্কুল, কলেজ লেভেলে। মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। রেজাল্ট নিয়ে না বরং আগামী প্রজন্মের মানসিক বিকাশ এবং দৃঢ়তার জন্য।

নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমরা একটা কাজ করতে পারি। যেমন পাশের মানুষটিকেই বুঝাতে পারি এই রেজাল্ট ব্যাধির বিষ সঞ্চারের বিষয়টি আর মুক্ত আলোচনা হতে পারে সামাজিক পর্যায়েও।

তাছাড়া আজকাল অনেক পক্রিয়া আছে এই ব্যাধি দমনের। ধরুন,হাতের মুঠোফোনটি নিয়ে কংগ্রেচুলেশন জানিয়ে ফেলুন জিপিএ ৫ না পাওয়া ছাত্রটিকে উদ্যম ছড়িয়ে দিন তার আগামীর জন্য।

আবার বলছি,পরীক্ষার রেজাল্ট কখনোই একজন ছাত্রের সামগ্রিক মেধা এবং শিক্ষা অর্জনের গভীরত্ব নির্ণয় করতে পারেনা।

লেখক: শিক্ষার্থী ও প্রাবন্ধিক

ঢাকাটাইমস/১জুন/এসকেএস