ব্যর্থ প্রেম-স্ত্রীকে ফের বিয়ে, দিলীপ কুমারের বর্ণময় জীবন

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২০, ১৪:০২ | আপডেট: ০১ জুন ২০২০, ১৪:০৭

বিনোদন ডেস্ক

বাবার সঙ্গে একরোখা ছেলের সম্পর্ক একেবারেই ভালো ছিল না। বাবা ছিলেন অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারের ব্যবসায়ী। কথা কাটাকাটির জেরে একদিন বাড়ি ছেড়েই বেরিয়ে পড়েন কিশোর ইউসুফ। বাড়ি পেশোয়ারে হলেও ইউসুফ পড়তেন নাসিকের বার্নেস বোর্ডিং স্কুলে। বাড়ি ছেড়ে আসার সময়েও মনে পড়ল পুণের কথা। সেখানে পৌঁছে আলাপ হয় এক ক্যাফে মালিকের সঙ্গে। পাশে পেলেন এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান দম্পতিকে।

তাদের সূত্রে দেখা হয় এক ক্যান্টিন কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে। সেনাবাহিনীর ক্লাবের কাছে একটি স্যান্ডউইচের দোকান খুললেন ইউসুফ। ইংরেজি ভালো বলতে আর লিখতে পারতেন। ব্যবসা দাঁড় করাতে সময় নিলেন না। বাড়ি ফিরলেন পাঁচ হাজার টাকা জমিয়ে। তখনও অবধি জীবনের লক্ষ্য ছিল ব্যবসায়ী হওয়া। ব্যবসা শুরু করার সূত্রেই আলাপ হয় জনৈক মাসানির সঙ্গে। তিনি দেখেই বুঝলেন, ইউসুফের জায়গা ব্যবসার গদিতে নয় বরং অন্য কোথাও।

মাসানি তাকে নিয়ে গেলেন বম্বে টকিজ-এ। প্রথম দিকে ইউসুফ ছবির গল্প বাছাই এবং চিত্রনাট্য লেখার কাজে সাহায্য করতেন। খুব ভালো জানতেন উর্দু। ফলে নিজের কাজে সুনাম অর্জন করতে সমস্যা হল না। দেবিকারানি তাকে প্রস্তাব দিলেন অভিনয়ের। ১৯৪৪ সালে মুক্তি পেল অমিয় চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘জোয়ার ভাটা’। দেবিকারানির পরামর্শে নাম পাল্টে ফেললেন ইউসুফ খান। ছবির জন্য তার নাম হল দিলীপ কুমার। এরপর বাকিটা ইতিহাস।

পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বিস্তৃত কেরিয়ারে দিলী পকুমার অভিনয় করেছেন ৬৫টির বেশি ছবিতে। ‘দেবদাস’, ‘কোহিনুর’, ‘মধুমতী’, ‘মুঘলে আজম’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘রাম অউর শ্যাম’, ‘ক্রান্তি’, ‘সওদাগর’সহ অসংখ্য ছবির নায়ক হয়ে গেলেন বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কিং’।

কেরিয়ারের মতো বর্ণময় ইন্ডাস্ট্রির ‘প্রথম খান’-এর ব্যক্তিগত জীবনও। ১৯৪৮ সালে মুক্তি পায় ‘শহিদ’। ছবিতে দিলীপ কুমারের নায়িকা ছিলেন কামিনী কৌশল। এই ছবিতে অভিনয় করার সময়ে তাদের প্রেম ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে বহুচর্চিত বিষয়। দুজনে বিয়ে করবেন বলেও ঠিক করেছিলেন। কিন্তু বাধা হন কামিনীর দাদা। তিনি রাজি ছিলেন না এই সম্পর্কে। শোনা যায় তিনি দিলীপ কুমারকে হুমকিও দিয়েছিলেন। এরপর তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। সে বছরই কামিনী বিয়ে করেন তার প্রয়াত দিদির স্বামীকে। দুর্ঘটনায় নিহত দিদির দুই মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেন কামিনী।

এরপর দিলীপ কুমার প্রেমে পড়েন মধুবালার। দীর্ঘ সাত বছর চলেছিল তাদের প্রেমপর্ব। এই সম্পর্ক ভেঙে যায় দুই তারকার ইগো-সমস্যায়। একটি ছবির শুটিং লোকেশনে মধুবালাকে যেতে দিতে রাজি ছিলেন না তার বাবা। পরিচালক-প্রযোজক অনুরোধ করেন দিলীপ কুমারকে। তিনি যেন কথা বলেন মধুবালার বাবার সঙ্গে। দিলীপ কুমারের অভিযোগ ছিল, মধুবালার বাবা তাকে অপমান করেছেন।

অন্যদিকে মধুবালার বক্তব্য ছিল, দিলীপ কুমারের কাছে অপমানিত হয়েছেন তার বাবা আতাউল্লাহ খান। তিনি তার বাবার বিরুদ্ধাচারণ করতে পারেননি। মধুবালার কথায় সে সময় আতাউল্লাহর কাছে ক্ষমা চাননি দিলীপ কুমার। চাপানউতোরের জেরে ভেঙে যায় দিলীপ কুমার-মধুবালার প্রেম।

১৯৬০ সালে মধুবালা বিয়ে করেন গায়ক কিশোর কুমারকে। কিন্তু দিলীপ কুমার বেশ কয়েক বছর কোনও সম্পর্ক থেকে দূরে ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি বিয়ে করেন সায়রা বানুকে। শোনা যায়, তার বিয়ের খবরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন অসুস্থ মধুবালা। তার তিন বছর পরে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি।

সায়রা বানুকে বিয়ের সময় দিলীপ কুমারের বয়স ছিল ৪৪ বছর। সায়রা বানু ছিলেন ঠিক অর্ধেক, মাত্র ২২ বছর। পরে সায়রা বানু একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ১২ বছর বয়স থেকেই দিলীপ কুমারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন। অথচ তার স্বপ্নের নায়কই তাঁকে প্রথম দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন না। প্রথম আলাপে সায়রা বানুর রূপের প্রশংসা করেছিলেন দিলীপ কুমার। কিন্তু ‘বাচ্চা মেয়ে’ বলে বজায় রাখতেন দূরত্ব।

এদিকে দিলীপ কুমারের ছবির ভক্ত সায়রা বানু নিজেই একদিন পা রাখলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। শোনা যায়, সে সময় রাজেন্দ্র কুমারের সঙ্গে তার মৃদু ভালো লাগার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সায়রার মা, বিগত দিনের অভিনেত্রী নাসিম বানুর হস্তক্ষেপে বিবাহিত রাজেন্দ্র কুমারের কাছ থেকে সরে আসেন ‘জংলি’ ও ‘পড়োসন’-এর নায়িকা।

এরপর নাসিম বানুই উদ্যোগী হন দিলীপ কুমারের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের। সায়রা বানুর মনে হয়েছিল, দিলীপ কুমারকে স্বামী হিসেবে পেয়ে তার বহু দিনের স্বপ্ন পূর্ণ হল। সে সময় অনেকেই বলেছিলেন, এই বিয়ে বেশি দিন স্থায়ী হবে না। কিন্তু নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করে দিলীপ কুমার-সায়রা বানু দুজন দুজনের পাশে ছায়া হয়ে পাঁচ দশকের বেশি দাম্পত্যজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন।

তবে আশির দশকের গোড়ায় ঝড়ের মুখে পড়ে তাঁদের দাম্পত্য। পাকিস্তানি নাগরিক আসমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন দিলীপ কুমার। তিনি নাকি সায়রা বানুকে ডিভোর্স করে বিয়ে করেছিলেন আসমাকে। সেই বিয়ে নাকি মাত্র দুই বছর স্থায়ী হয়েছিল। সেই সম্পর্ক ভেঙে তিনি ফিরে আসেন সায়রা বানুর কাছে। আবার বিয়ে করেন তাকে। এরপর সায়রা বানু অভিনয় পুরোপুরি ছেড়ে দেন। তাদের মতো দীর্ঘ বসন্তের দাম্পত্য বলিউডে বিরল।

ঢাকাটাইমস/০১জুন/এএইচ