পরীক্ষার ফলাফল ও একটি হারমোনিয়াম

তারিক মৃধা
 | প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২০, ১৪:৪১

বললে বিশ্বাস নাও করতে পারেন, স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমাকে লোভ দেওয়া হত রোল নম্বর ১-৩ এর মধ্যে থাকলে আমাকে হারমোনিয়াম কিনে দেওয়া হবে। অথচ আমি ক্লাস সিক্স পর্যন্ত কথা রেখেছি৷ হারমোনিয়াম আর আমার কপালে জোটেনি।

কত বসে বসে কল্পনা করতাম আমার নিজের হারমোনিয়ামটা কোথায় রাখবো, কেমন হবে? ইত্যাদি। দেয়নি অর্থনৈতিক কারণে নয় এটা পেলে আমি আর পড়াশোনা করবো না এই ভয়ে যতদুর জানি। হতাশ হয়ে আস্তে আস্তে আর রোল নম্বর নিয়ে ভাবা ছেড়ে দিলাম।

যাইহোক এভাবে এসএসসি পাশও করলাম বেশ সম্মানের সাথে। গ্রাম থেকে আমাকে উদ্ধার করে ঢাকা নিয়ে এসে পৃথিবী পরিচয় করানো হলো৷ আর সেটুকু অবদানেই আজ কথার মালা সাজিয়ে এই স্ট্যাটাসটাও লিখতে পারলাম৷ এই ঋণ কখনোই শোধ হবেনা।

কি পাইনি সেজন্য লিখছি না৷ কি পেয়েছি তাই বলছি সংক্ষেপে। অবশেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে এক বছর পড়ার পর আমার ভীষণ অনিচ্ছ্বাসত্বেও টেনে হিচড়ে পুনরায় ঢাকা আনা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নতুবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হবে বলে আলটিমেটাম জারি করা হলো৷ বাধ্য হয়ে জাহাঙ্গীরনগরে নিজেকে থিথু করলাম।

কারণ আমার অভিভাবক জানতো ঢাকা সংশ্লিষ্ট থাকাটা কতোটা ফজিলতপূর্ণ৷ তবে এখানে আমি জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ, ইতিহাসসহ নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে চান্স পেলে আমাকে একটি শর্তে নাটকে পড়তে দেওয়া হয়৷ শর্তটা আজ বলছি না৷ পূরণ করতে পারলে আরেকটা স্ট্যাটাস দেবো৷ মোটামুটি আমি বেশ সম্মানের সাথেই এই দীর্ঘ অথচ মাত্র আরম্ভ হওয়া যাত্রাটা শেষ করেছি।

পারফরম্যান্স এর উপর মাস্টার্সও সম্পন্ন করলাম সদ্য৷ এমনকি আমাকে এম.ফিল, পিএইচডি ডিগ্রির জন্যও অনুপ্রেরণা দেয়া হচ্ছে আমার অভিভাবকের পক্ষ থেকে৷ এরপর চলবে........

উপরের আলোচনাটা এজন্যই করলাম তা হলো আমার অভিভাবক কখনোই আমাকে জিপিএ ৫ পেতে চাপ সৃষ্টি করেন নাই৷ আমি পাইও নাই৷ অথচ এখন পর্যন্ত আমার সব ঠিক আছে বলে আমার মনে হয়। আমার অভিভাবকও আপাতত সন্তষ্ট।

বাকীটুকু করতে পারলে তাদের পুরোপুরি মনের ইচ্ছা পূরণ হবে এবং আশা করি সেই স্ট্যাটাসএ হাজার লাইক কমেন্টস পড়বে৷ তার কারণ সেখানে আমি এই জার্নির গল্পটা সবিস্তারে বলবো ইনশাআল্লাহ। আপনাদের হৃদয় সেদিন আদ্র হবে। চোখ ভিজে যাবে। আমার বিশ্বাস৷ সেদিনের সেই হারমোনিয়াম না পাবার হাহাকার আজ অনেক প্রাপ্তির অন্তরায়। আমার রুমে এখন বাদ্যযন্ত্রের সংখ্যায় নিজের হাটাচলার যায়গা কম৷

আসলে জিপিএ ৫ খুবই সাময়িক ভাল লাগা। ও দিয়ে কিচ্ছু হয় না৷ যারা পায়নি তাদের হতাশ করবেন না। বলবেন আজ থেকে শুরু করো। মানুষ হও। যারা পেয়েছে তাদের হৃদয় থেকে অভিনন্দন। কারণ আমি জীবনে পাইনি। আফসোস এখন না করলেও রেজাল্টের দিন ঠিকই করেছিলাম৷ তবু জীবন তো থেমে থাকে না। ঝড় আসে ঝড় থামে তো৷

আজকাল বাবা মা এটা কিনে দেয় নাই, ওটা কিনে দেয় নাই বলে পারিবারিক কলহ করে জীবন নষ্ট করে কিশোর কিশোরীরা৷ তার জন্য বাবা মা যথেষ্ট দায়ী৷ কারণ উপযুক্ত কাউন্সিলিং করতে তারা ব্যার্থ। তাই বলি প্রতিটি মানুষের জীবনে একজন বুদ্ধিমান অভিভাবক খুবই প্রয়োজন। আমাকে আমার পরিবার শিল্পী হতে বলে কিন্ত অবশ্যই যেন শিক্ষিত শিল্পী হই এই তাগীদ দেয়৷

লেখক: সঙ্গীত শিল্পী ও শিক্ষার্থী

ঢাকাটাইমস/১জুন/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :