করোনা নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের সমন্বয়ের তাগিদ নাগরিক প্ল্যাটফর্মের

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২০, ২০:৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণের মাঝে কোভিড-১৯ অতিমারীর ঝুঁকি সম্পর্কে পর্যাপ্ত সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য উপকরণও সহজে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে, সাধারণ ছুটি সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়া হলে জনগণের মাঝে রোগের বিস্তার বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হলে আরও দুই সপ্তাহ সাধারণ ছুটি বাড়ানোর কথা বিবেচনা করতে পারে সরকার। সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণের মাত্রা কমে এলে ধাপে ধাপে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসা যেতে পারে।  আর এর জন্য সরকারকে বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। করোনাভাইরাস সংকট দেখা দেয়ার পর থেকেই লকডাউন কার্যকর, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষা, ভাইরাস টেস্ট, কোয়ারেন্টিন, গার্মেন্টস কারখানা খোলা বা বন্ধ রাখা - এমন বেশ কিছু বিষয়ে কর্তৃপক্ষের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা দেয়া গেছে। এর জন্য খুব শক্ত ভাবে এ বিষয়ে পরবর্তিতে মটিটরিং করতে হবে।

সোমবার “সাধারণ ছুটি-পরবর্তী স্বাস্থ্যঝুঁকি” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে দেশের স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞগণ এ সকল মতামত প্রদান করেন। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এই ভার্চুয়াল সংলাপটি আয়োজন করে।

সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত বলেন, মূল যায়গা কোয়াডিনেশনের অভাব, কোয়াডিনেশকে কীভাবে নিশ্চত করি এটা একটা চিন্তার জায়গা। দ্বিতীয় হলো যে আমরা যে টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে।  কেন  প্রতি জেলার যে  হাসপাতাল, যে মেডিকেল কলেজ আছে সেখানে  কেন বিষদভাবে আমরা টেস্টের ব্যবস্থা করি না। তিনি বলেন, মূল কথা কেন সরকার মাস্ক মানুষকে দিচ্ছে না । কেন গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি লাখ লাখ মাস্ক তৈরি করে দিচ্ছে না।

সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ারগুলোকে চালু করার পরামর্শ দিয়ে  অ্যারোমা দত্ত বলেন,কমিউনিটি হেলথ সেন্টরগুলোকে কেন আমরা আরও বেশি শক্তিশালি করছিনা।  গরিবমানুষ ,সাধারণ মানুষ, গ্রামের মানুষ সবাই শহরে যেতে পারছে না। আমরা তো খবরগুলো জানছি।  আমরা কেন কমিউনিটিট হেলথ কেয়ার সেন্টার  শক্তিশালি করব না।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা (সিলেট বিভাগ) ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, হঠাৎ করে কেবিনের ডিভিশন একটা সারকুলার দিল, তার পার আবার হেলথ মিনিস্ট্রি একটা কিছু করলো । এর পর আবার সেটার আর  একটা রিভিশন হলো। এমন হলেতো জনগন বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। তারা কী করবে সেটা বুঝেই উঠতে পারবে না। এর জন্য প্রথম সুপারিশ  এ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ প্যান্ডামিক সিচিউশন ওভার করার জন্য খুব স্টংলি সন্বিত ভাবে কাজ করা উচিত।

মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহজলভ্য করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, যেহেতু জীবিকার তাগিদে সবকিছু আস্তে আস্তে চালু হচ্ছে। এখন খুবই সিমপল যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তর সংখ্যা বাড়বে। তাই মাস্ক ও স্যানিটাইজারের বেশি প্রয়োজনহবে। সরকারের এ ব্যপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। ১০৮টি ফার্মাসিকাল কোম্পানি আছে, তাদের বললে টন টন হ্যান্ড স্যানিটাইজার টিউবের মধ্যে ভরে দিতে পারবে।এবং সরকারকে সেগুলো ডিসট্রিবিউট করতে হবে। মাস্ক বিতরণ করতে হবে। বেশি করে টেস্ট করতে হবে।  রাজধানীর টোলারবাগের  মতো কমিউনিটি এনগেজমেন্ট করতে হবে। এখন ক্লাস্টার লকডাইন করা প্রয়োজন।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহবায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, করোনায় নানামুখী অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হলেও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন সময়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব দেখা গিয়েছে। তবে, সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি; নাগরিকসেবাকে গুরুত্ব দিয়ে জনমুখী সিদ্ধান্তগ্রহণের মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। এক্ষেত্রে, সাধারণ ছুটি পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করা যেতে পারে।

হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন বলেন, দেশে দুইলাখ ৭০ হাজার হাসপাতালে শয্যা আছে এবং শয্যায় কম বেশি ৯০ হাজারের মতো চিকিৎসক আছে। এই ৯০ হাজারের মধ্যে ২৬ থেকে ২৭ হাজার সরকারি। বাকিটা বেশরকারি প্রাইভেট সেক্টরে কর্মরত। করোনার এই সময় আমরা দেখলাম চিকিৎসার জন্য পুরো স্বাস্থ্যসেবার তিনভাবে দুই ভাগকে বাদ দিয়ে রাখা হয়েছিল। তার উপর আবার  কোভিড ও ননকোভিড হাসপাতাল ভাগ করে ফেললো। এক আইডিসিআরে টেস্ট করার জন্য এমন দুষ্প্রাপ্য করে তুললো। একটি টেস্টের সিরিয়াল পাওয়া দুরুহ হয়ে গেল।

ওয়াটারএইড-এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ড. খায়রুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ ভার্চুয়াল সংলাপে সম্মানিত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য এবং ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবিলক হেলথ-এর উপদেষ্টা ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী, সরকারের কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা রওশন আরা বেগম, আইসিডিডিআর,বি-এর মিউকোসাল ইমিউনোলজি এবং ভ্যাকসিনোলজি ইউনিটের প্রধান ডা ফেরদৌসী কাদরি, দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. দিবালোক সিংহ, ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক ডা মোরশেদা চৌধুরী, এবং ডেভরেজোন্যান্স লিমিটেড-এর নির্বাহী পরিচালক স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ নাজমি সাবিনা।

এছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের অন্যান্য কোর গ্রুপ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এবং নিউ এজ গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান জনাব আসিফ ইব্রাহীম।

এ ভার্চুয়াল সংলাপে বরগুনা, গাইবান্ধা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্বাস্থ্যকর্মী, উন্নয়ন কর্মী, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।

(ঢাকাটাইমস/১জুন/জেআর/ইএস)