সব মানুষ মিলে এক সম্প্রদায়

মুশফিক খান আকাশ
 | প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২০, ১১:২৩

সারাবিশ্বেই বর্ণবাদ একটা লার্নড বা শিক্ষা করা প্রবৃত্তি। একটা শিশু জন্মের পর থেকেই শুরু হয়ে যায় বর্ণবাদের হাতেখড়ি। বাংলাদেশে এভাবে বলা হয় অমুকের ধবধবে সাদা সন্তান হয়েছে,অপরদিকে বলা হয় হায়!হায়! অমুকের কাকের মত কালো বাচ্চা হয়েছে। কিন্তু আসলেই কি কথাগুলো এরকম হতে পারে?

উভয়স্থানেই কি এক ফুটফুটে সুন্দর নবজাতকের জন্ম হয়নি? টেলিভিশনে সংবাদ দেখছিলাম, আমেরিকানদের বর্ণবাদ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিলো, কিন্তু একটা কথা আমার কানের মধ্যে মারাত্নক ভাবে বিধলো, সেটা হলো বারবার শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়, আবার কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় এই শব্দটি উচ্চারণ করা হচ্ছিলো ।

সম্প্রদায়ের সঠিক সংজ্ঞায়ন আমি শুনতে চাই না। তবে একই পৃথিবী, সমাজ , কখনো একই পরিবারে বাস করে আসলেই শুধু চামড়ার রং এর জন্য মানুষ দুইটা আলাদা সম্প্রদায় হতে পারে? তাহলে আমার বাড়িতে আমার মা আর আমি এক সম্প্রদায় আর বাকিরা আরেক সম্প্রদায় কথাটি দারুন! নাকি শুনতে বিদঘুটে লাগে?

ছোট বেলার কিছু কথা বলবো, তো আমাকে বলা হতো, খাবার না খেলে আমি কালো হয়ে যাবো, একটা ছেলেধরা আছে সে দেখতে কুটকুটে কালো, ভূত কালো,খারাপ মানেই কালো কিন্তু সেগুলো আমার মাথায় গেথে দেওয়া হয়েছে বলে কল্পনায় ভূতকে আমি কালো দেখি। কিন্তু যদি বলা হতো ভূত সাদা তবে এখন হয়তো ভূত কল্পনায় সাদা হতো।

অপরদিকে কিছু ক্ষেত্রে এরাকমও হয়েছে সাদা মানুষ নোংরা, তারা গোছল করেনা এরাকম কথাও শুনেছি । এশিয়ার দক্ষিনাংশে সব চামড়ার রংয়ের মানুষ পাওয়া যায় এখানে বর্ণবাদ নির্মম না হলেও প্রতিটা মানুষের অন্তরে গাথা। এশিয়ার এই অংশে যাদের বসবাস এখানে সাদা চামড়া মানে সে ঈশ্বরের কৃপা পেয়ে গেল এরাকম কিছু। মেয়েদের ক্ষেত্রে তো কথাই নেই।

এশিয়ার দক্ষিনাংশে সময় আরেক কাহিনী দেখতে হয় তা অবশ্য মেয়েদের ক্ষেত্রে। মেয়ে কালো হলে এখানে হত্যা করার রেকর্ডও আছে। আবার বিয়ের ক্ষেত্রে যৌতুক দিতে হয় মাথা সমান। একেতেই যৌতুক প্রথাটাই ঘৃণ্য তবে মেয়ে কালো হলে যৌতুকের পরিমান আরো বেড়ে যায় কি আজব নিয়ম তাইনা? কি দাড়ায় শক্তির দেবী কালি থেকে ঘরের দেবী লক্ষির কদর বেশি।

কোনো ধর্মই বর্ণবাদকে সমর্থন করেনা। ঈশ্বরের সৃষ্টি নয় এই বর্নবাদ বরং মানুষের সৃষ্টি । একটা সময় বর্নবাদ নিয়ে কথাবার্তা হতো আজকাল হয়না। কিন্তু বর্নবাদ দমে যায়নি তা মানুষের মস্তিস্কে গেথে আর আর নতুনদের মধ্যে ট্রান্সফার হচ্ছে।

ভাবতেই অবাক লাগে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বর্ণবাদের প্রভাব ব্যাপক আর তারাই নাকি রেসিজম নিয়ে রিসার্চ করে গড় উল্টিয়ে দিয়েছে। লক্ষ করলেই দেখতে পাবেন আমেরিকায় বর্নবাদ খুব স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিলো,আর ইদানিং এর পরিমান বেড়েই চলছিলো। সংবাদপত্র খুললেই প্রতিদিন কোনো না কোনো বর্ণবাদী সহিংসতার খবর পাওয়া যেত।

শোনা যায় সেখানে কোন ক্রাইমের রিপোর্ট পুলিশকে দিতে হলে আগে জানাতে হয় ব্ল্যাক না হোয়াইট এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যুগ যুগ ধরেই এই বর্ণবাদ নিয়ে আন্দোলন হয়েছে এবার আরেকবার আমরা সেই ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছে। আমেরিকানরা আবার রাস্তায় নেমেছে তবে আমরা বসে থাকবো?

আমাদের এখানে হোয়াটনিং ক্রিম বিক্রি করা হয় ডার্কনিং ক্রিম নেই। কার্টুনের চরিত্ররা সাদা হয়, কালো না। মডেল, নায়িকা, তারকারা সাদা চামড়ার হতে হয় এখানে নাহলে ফিল্মে নেওয়া হয়না। এভাবে এই বর্ণবাদ চড়াও হচ্ছে এখানে। এখনই রুখে দিতে হবে এই রেসিজম। তানহলে মনে হয় একদিন এখানেও বিক্ষোভে নামতে হবে ঠিক আমেরিকানদের মতো।

উপায় কি? কি করতে পারি আমরা? ভাবার সময় এসেছে। সর্বোপরি সময় এসেছে ডিজিটাল ইরাকে হাতিয়ার করে সব মানুষ মিলে এক সম্প্রদায় হবার। কৃষ্ণাঙ্গ অথবা শ্বেতাঙ্গ না।

লেখক: শিক্ষার্থী ও প্রাবন্ধিক

ঢাকাটাইমস/২জুন/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :