"ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি"

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২০, ১২:১৭

শর্মি ভৌমিক

পৃথিবীতে যারাই সফল হয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই কিছু ব্যর্থতার গল্প রয়েছে। তাই, একবার ব্যর্থ হলেই সব শেষ হয়ে গেলো, এমন ভাববার কিছু নেই। বরং, ব্যর্থতাকে সফলতার চাবি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাবার প্রতিজ্ঞা করা যায়। শৈশবে আমরা কবিতায় পড়েছি 'একবার না পারিলে দেখো শতবার'। হ্যাঁ, চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। পরিশ্রম ও চেষ্টা থাকলে মানুষ জীবনে সফল হবে- এটা নিশ্চিত।

মনোবল হারাবে না কেউ। যারা এসএসসি পরীক্ষায় সফল হতে পারোনি, তারা ব্যর্থ নও। সামনে সফলতা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। তোমরা চেষ্টা করে যাও। বার বার চেষ্টা করবে। পাছে লোকে কিছু বলবেই। সেসবে কান দিতে নেই। জীবনটা তোমার, তোমার ভালোটা তোমাকেই বুঝতে হবে। মানুষের কথায় কিছু এসে যায় না।

পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছো বলে লজ্জা পাবার কিছু তো নেই! তোমার মতো অনেকেই অকৃতকার্য হয়েছে। তাই বলে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। মন খারাপ হলেও সামলে নিতে হবে নিজেকে। নিজের মনকে স্থির করে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। সফলতার জন্য বার বার চেষ্টা করাকেই অধ্যবসায় বলে। একে বন্ধু করে নাও। অধ্যবসায়ী লোক সফল না হয়ে যায় না।

মানুষের জীবনটাই একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র। বারংবার জীবন পরীক্ষায় আমরা অংশ গ্রহণ করি। সেখানে সফলতা এবং ব্যর্থতা দুটোই থাকে। সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাকে মেনে নেবার মানসিকতাও থাকতে হবে। তবেই সফল হওয়া সম্ভব। একবার ব্যর্থ হয়েছো বলে দুঃখ, কষ্টে কিংবা লজ্জায় জীবন দিয়ে দেয়ার কোন মানে নেই। জীবনের জন্য পড়ালেখা, পড়ালেখার জন্য জীবন নয়। বেঁচে থাকলে তুমি/ তোমরা আগামীতে সফল হতে পারবে, কিন্তু আত্মহত্যা করলে এ জীবন আর পাবে না। মৃত্যু মানে সব শেষ। বোকারাই আত্মহননের পথ বেছে নেয়। বুদ্ধিমানেরা ব্যর্থতা থেকে সফলতার শিক্ষা নেয়।

আমাদের সমাজে কিছু অভিভাবক আছেন যারা সন্তানের সফলতায় আনন্দে আটখানা হওয়ার পাশাপাশি অহংকারে গা ভাসিয়ে দেন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গর্বের সঙ্গে সন্তানের রেজাল্টের স্ট্যাটাস লিখেন। অন্যের সন্তান অকৃতকার্য হয়েছে জেনে ভীষণ খুশিও হন। তারা কখনও অন্যদের খোঁচা মেরেও কথা বলেন, যা এবেবারে অনুচিত কাজ। আমি এমন অনেক সফল ছাত্র/ছাত্রীর কথা জানি, যারা এস এস সি এবং ইন্টারমিডিয়েট এ গোল্ডেন এ+ পেয়েও কোথাও চান্স পায়নি। আবার অনেকে সাধারণ গ্রেডে পাশ করেও ভালো প্রতিষ্ঠানে চান্স পেয়েছে। ভাগ্য কাকে কোথায় টেনে নিয়ে যাবে, কে বলতে পারে! তাই, এসব অহংকার করা থেকে অভিভাবকদের বিরত থাকতে হবে। আনন্দ করুন, তবে অন্যকে আঘাত করে নয়।

একটা কথা মনে রাখবেন, কাউকে নিন্দা করলে আপনাকেও নিন্দা করার দিন আসবে। সেদিন হয়তো তার পদতলে আপনাকে যেতে হতে পারে যাকে একদিন আপনি নিন্দা করেছেন। তাই, এসব অভ্যাস পরিত্যাগ করা উচিত। মানুষের দুঃসময় নিয়ে উপহাস না করে সহমর্মি হোন, মানুষের ভালোবাসা পেতে সক্ষম হবেন।

রবার্ট ব্রুস, আব্রাহাম লিংকন, আইনস্টাইন, নরেন্দ্র মোদী এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা ভাবুন, দেখুন, তাদের সফলতার পেছনের গল্পগুলো কতোটা করুণ! অধিকাংশ মনীষীর জীবনীই ব্যর্থতায় ভরপুর। তাদের জীবন থেকে আমাদের সকলেরই শিক্ষা নেয়া উচিত। মানুষ একদিনে বড় হয় না, একটু একটু করেই বড় হতে হয়। ব্যর্থ হতে হতেই সফল হয় মানুষ।

তাই ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে কবির ভাষায় বলছি, 'পারিব না এ কথাটি বলিও না আর, কেন পারিবে না তাহা ভাবো একবার।'
নিশ্চয়ই পারবে তোমরা, শুধু ইচ্ছেশক্তিটা দরকার। এর জন্য বার বার চেষ্টা করা প্রয়োজন। অধ্যবসায়কে বন্ধু করে নেওয়া প্রয়োজন। সময়কে কাজে লাগানো অতি আবশ্যক । প্রতিটা সেকেন্ডকে মূল্যায়ন কর, দেখবে তুমি/ তোমরাই সবচেয়ে সফল ব্যক্তি পৃথিবীতে।

লেখক: কবি

ঢাকাটাইমস/২জুন/এসকেএস