কবিতা

অন্তঃস্বর

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২০, ১৮:০৩

সাদিক হাসান ইমন

তুমি বোধহয় ভাবছো,

মস্ত বড় পৃথিবীর তুলনায় তোমার গর্ভটি আকারে নিতান্তই ছোট ও অন্ধকারাচ্ছন্ন!

তাই হয়তোবা আমায় দিগন্ত প্রসারী পৃথিবীর জলসা দেখানোর জন্য তোমার এতো ব্যস্ততা।

 

কিন্তু আমার কাছে তা বিন্দুমাত্র ক্ষুদ্র নয় মা;

তোমার গর্ভই আমার স্বর্গীয় খেলাঘর,

তোমার অমরাকে ঘিরেই আবহমান জীবন।

জানো,

এখানে আমার একটি উত্তাল সাগর আছে,

একটি সুউচ্চ পাহাড় আছে,

একটি বিস্তৃত আকাশ আছে,

তাছাড়া,সমস্তটা জুড়ে আছে নিঃস্বার্থ প্রেম।

 

কখনো সেই সাগরে আমি মাছের মতো সাঁতার কাটি,

কখনো সেই আকাশে আমি পাখির মতো ডানা মেলি,

কখনো বা পাহাড়ের চূঁড়ায় দাঁড়িয়ে অস্ফুট কন্ঠস্বরে তোমায় আগমনী গল্প বলি।

 

তুমি কি তা শুনতে পাও?

কিংবা সতর্ক চিত্তে আমার অস্তিত্ব শ্রবণে মনযোগী বাবার কানে কি সেগুলো পৌঁছায়?

রহস্য ও সন্দেহের সংমিশ্রণে প্রশ্ন উঠতেই পারে,

 "তুই তো ভারী দুষ্টু!

তোর বাবাকে আবার কিভাবে চিনলি?"

 

মানুষ ভেদে তো তোমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলায় মা,

তার বদৌলতে তোমার হৃদ ছন্দ আমার কাছে হরেক রকম আলোড়ন পাঠায়,

সেগুলো বিশ্লেষণ করেই আমি মানুষ চিনতে পারি।

 

আমি আরও অনুধাবন করতে পারি,

পৃথিবীর অযাচিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডে তোমার দম বন্ধ লাগে,

মুখোশের আড়ালের মুখগুলোকে তুমি প্রচন্ড ভয় পাও,

লোভ,ঈর্ষা ও স্বার্থের বাজারে তুমি একটু বেশিই নাজুক,

এসব ভেবেই পার হচ্ছে আমার অফুরন্ত অবসর।

 

তবে ইদানিং লক্ষ্য করছি...

আমার বর্ধনশীল পা আস্তে আস্তে সাগরের অতলে পৌঁছে যাচ্ছে,

আমার অপোক্ত মাথা প্রায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে,

আমার অস্পষ্ট কন্ঠস্বর তোমায় গল্প শোনানোর উপযুক্ত হয়ে উঠছে,

আমার খেলাঘরের খুঁটি ক'টি দিন দিন নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে,

যেন সুনির্দিষ্ট কোন ইশারায় তা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।

তখন আমার কি হবে?

ভেবে প্রচন্ড ভয় লাগছে!

 

মা আমায় বলতো,

গর্ভের বাইরের জগৎ কেমন হয়?

সেখানেও কি এখানের মতো স্বর্গ স্বর্গ অনুভূত হয়?

অগাধভাবে বিচরণ করা যায়?

নিয়ম করে কোন বাঁধা-নিষেধ নেই তো?

ইচ্ছে স্বাধীন খেলাধুলা করতে পারবো?

নিশ্চিত মনে ঘুমানো যায়?

আর ওতপ্রোতভাবে তোমাতে মিশে থাকা যায় তো?

উত্তরগুলো জানার জন্য আমি বায়না ধরেছিলাম।

তরঙ্গ যোগে ভেসে এলো,

"কাল পরিক্রমা তোমায় সব বলে দিবে।"

 

ক্ষণকাল ব্যতিরেকেই যেন গদ্যের দোলনায় দুলে দুলে আসতে থাকল আগামবার্তা,

আমার তাড়নায় তুমি অতীব অস্হির হয়ে উঠলে আমার খেলাঘরটি ভেঙে যাবে,

তখন তুমি আমাতে রবির দয়া ও  পবনের করুনা মাখিয়ে দিবে,

এতে আমার স্বয়ংক্রিয় শক্তিটুকু ভষ্ম হয়ে নাবালকে পরিণত হব।

 

অজানা ও অচেনা এক জায়গায় গিয়ে আমি চিৎকার করতে থাকব,

আর আবছা দৃষ্টিতে খুঁজতে থাকব আমার সেই সাগর,সেই আকাশ ও সেই পাহাড়।

 

হঠাৎ করেই মায়ায় মোড়ানো অসমান্তরাল এক আদলে আমার চোখ আটকে যাবে,

সেখানেই খুঁজে নেব আমার এক পসরা সাগর,এক ফালি আকাশ ও এক লোকমা পাহাড়।

 

তারপর নবাগত অতিথিকে তুমি বসুধার রীতি-নীতির সাইরেন বাজিয়ে বরণ করে নিবে,

অতঃপর সম্পর্কের শিকড়ে আঁটকে দিয়ে একের পর এক বাস্তবতায় খোলা দোর চেনাতে থাকবে।

 

ওখানে আমার যদি মন না টিকে মা?

যদি বার বার এই  খেলাঘরেই ফিরতে ইচ্ছে হয়?

পুনঃগমনের সুযোগ চাই?

তবে কি তোমার মৌনতায় আবর্তিত পৃথিবী অঘোষিতভাবে আওরাতে থাকবে,

"রবির দয়া ও পবনের করুনায় বিকশিতদের জন্য জায়গা বরাদ্দ নেই;

ইহকালে জননীর আদল ও পরকালে তার পদতলই তোমার সর্বোত্তম নির্বাসন।"

 

ঢাকাটাইমস/২জুন/এসকেএস