করোনার ভ্যাকসিনে আলো দেখাচ্ছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান মডার্না

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ০২ জুন ২০২০, ১৮:৩৬ | প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২০, ১৮:৩২

করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন তৈরিতে আশার আলো দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মডার্না। প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে প্রথম ধাপে ভ্যাকসিনটির প্রয়োগ শেষ করে দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষা করতে যাচ্ছে।

মার্কিন একাধিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মডার্না কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তাদের তৈরি ভ্যাকসিনটি প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল আশাব্যঞ্জক। তারা দ্বিতীয়ধাপের প্রয়োগ শেষ করে এই গ্রীষ্মেই তৃতীয় ধাপের পরীক্ষাও শুরু করবে। এখন পর্যন্ত তারা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়নি। সব ভালোভাবেই এগোচ্ছে।

মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই মডার্না তাদের তৈরি কোভিড-১৯-এর পরীক্ষামূলক টিকা ‘এমআরএনএ-১২৭৩’ দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষার অনুমোদন পেয়েছিল। দেশটির নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এ অনুমোদন দিয়েছে। একই সঙ্গে এই টিকা পরীক্ষার বিষয়টিকে বিশেষ অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে এফডিএ।

দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় ৬০০ সুস্থ স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেবেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বয়স ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। অন্যদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি। দৈবচয়নের মাধ্যমে এক গ্রুপকে মর্ডানার পরীক্ষামূলক টিকা দেওয়া হবে।

মডার্না কর্তৃপক্ষ মনে করছে, আগামী ধাপগুলোর মাধ্যমে তাদের টিকা এফডিএর অনুমোদন পাবে। মডার্নার প্রধান স্টিফেন হোজে বলেছেন, গ্রীষ্মেই তাঁরা টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করবেন। কারণ, এর মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ হবে বলে ধরে নেওয়া যায়। তৃতীয় ধাপে আরও বেশি মানবশরীরে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়।

স্টিফেন হোজে বলেন, ‘আমাদের সামনে কোনো বাধা আসেনি। এখন পর্যন্ত সবকিছু ভালোই চলছে। কিন্তু এখন নানা উপাত্ত বের হচ্ছে। এ বছরের শেষ নাগাদ এক কোটি টিকা তৈরি করতে পারব।’

মডার্না তাদের এমআরএনএ ভ্যাকসিনটি বিকাশের জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে। ১৮ মে তারা বলেছিল, আটটি ভ্যাকসিন অধ্যয়নকারী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অ্যান্টিবডি মাপা হয়েছিল। ফাউসি বলেন, এ ফলাফল দেখে সতর্ক আশাবাদ জানানো যায়।

১৮ মে মডার্না তাদের প্রথম ধাপের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করে। বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্টনি এস ফসি মডার্নার ভ্যাকসিনের পরীক্ষার ফলাফল ‘খুব আশাব্যঞ্জক’ বলে উল্লেখ করেন। তবে তিনি স্ট্যাট নিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে তাদের তথ্য প্রকাশ করেছে, তা তাঁর পছন্দ হয়নি।

ফসি সোমবার স্ট্যাট নিউজ প্রচারিত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডির দৃষ্টিকোণ থেকে সংস্থাটির প্রাথমিক তথ্য খুব আশাব্যঞ্জক বলে মনে হচ্ছে। তবে তারা পূর্ণ তথ্য প্রকাশ না করে যেভাবে আগেভাগে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে, সেটি আমার পছন্দ হয়নি।’

মডার্নার সমালোচনা করে ফসি বলেন, সংস্থাটি ইতিবাচক তথ্য দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল এবং আরও তথ্যের জন্য অপেক্ষা না করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মডার্নার মতো আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরিতে এগিয়ে চলেছে, যা আশাবাদ জাগাচ্ছে বলে জানান ফসি। তিনি বলেন, ‘মডার্নার মতো জায়গায় আছে ফাইজার। বায়োনটেকের সঙ্গে তারা চার ধরনের করোনার টিকা নিয়ে কাজ করছে। তাদের এমআএনএন ভ্যাকসিনটি মডার্নার মতো ভালো ফল দেখাবে বলে আশা করছি। এইট আরেকটির চেয়ে আলাদা হবে, এটা ভাবার কারণ নেই।’ ফসি আরও বলেন, ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যেই ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে তিনি এখনো আশাবাদী।

মডার্নার দ্বিতীয় ধাপে ভ্যাকসিন ডোজ পরীক্ষার সময়ে রুশ গবেষকেরা তাদের তৈরি ভ্যাকসিন মানবশরীরে পরীক্ষার পর্যায়ে আসার কথা জানিয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা পরীক্ষা শুরু করবেন।

বিশ্বজুড়ে প্রায় ১২০টির মতো ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে, যার মধ্যে ১০টি মানবশরীরে পরীক্ষার পর্যায়ে। এখনো চীনের ক্যানসিনো অ্যাডেনোভাইরাস ভ্যাকসিন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অ্যাডেনোভাইরাস ভ্যাকসিন, মডার্নার এমআরএনএ ভ্যাকসিন এবং নোভাভ্যাক্স কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন শীর্ষ প্রতিশ্রুতিশীল ভ্যাকসিন প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চীন বলেছে, একটি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন এই বছর প্রস্তুত হতে পারে। দেশটির একটি সরকারি সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে, এ বছরের শেষ নাগাদ কোভিড-১৯ ঠেকাতে একটি ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে। চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অ্যাসেটস সুপারভিশন অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিশন (এসএএসএসি) শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বলেছে, ২০২০ সালের শেষের দিকে বা ২০২১ সালের শুরুতে রাষ্ট্র-অনুমোদিত দুটি সংস্থার দ্বারা তৈরি একটি ভ্যাকসিন প্রস্তুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ওই দুটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে উহান ইনস্টিটিউট অব বয়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস ও বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস।

রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করেছে এবং দুই হাজার ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দিয়েছে।

এসএএসএসির তথ্য অনুযায়ী, বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টসের উৎপাদনের সক্ষমতা প্রতিবছরে ১০ কোটি থেকে ১২ কোটি ডোজ। এ পর্যন্ত চীনের পাঁচটি ভ্যাকসিন মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে, যা বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।

(ঢাকাটাইমস/২জুন/এইচএফ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

গাজায় আরও ৭১ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি 

ফেসবুকে রোহিঙ্গাবিদ্বেষ ছড়ানোর নেপথ্যে ছিল মিয়ানমারের জান্তা: জাতিসংঘ

রাফাহতে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী: নেতানিয়াহু

নির্বাচন করার জন্য অর্থ নেই, সরে দাড়ালেন ভারতীয় অর্থমন্ত্রী

সিরিয়ার আলেপ্পোতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮

দ. আফ্রিকায় বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫, অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল শিশু

দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যার পর বালিচাপা দিলো ইসরায়েলি সেনারা 

গাজায় যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে আইসিসির প্রতি আহ্বান

কলকাতা বিমানবন্দরে চলল গুলি, নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে হুমকি পেলেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :