শিক্ষকের লালসার শিকার-ব্যর্থ প্রেম, তবুও স্বমহিমায় উজ্জ্বল মুনমুন

প্রকাশ | ০৩ জুন ২০২০, ০৯:৫৭

বিনোদন ডেস্ক

ভারতীয় টেলিভিশন দুনিয়ার জনপ্রিয় তারকা মুনমুন দত্ত। পড়াশোনায় বরাবরই ভালো ছিলেন তিনি। ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হবেন। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, হয় অন্যটা। মুনমুনের তাই হয়েছে। পোর্টফোলিও হাতে একসময় বলিউডে দরজায় দরজায় ঘুরেছেন তিনি। কিন্তু আজ টেলিভিশনে তার যে জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে, তাতে বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন ও আলিয়া ভাটদেরও অনায়াসে টেক্কা দিতে পারেন।

পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে জন্ম হয়েছিল মুনমুন দত্তের। তার মা-বাবা দুজনেই সংগীতচর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুনমুন নিজেও গান শিখেছেন ছোট থেকে। কিন্তু বরাবর ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। বরং স্কুল পাস করেই সাহিত্যের দিকে ঝোঁকে‌ন। পুণে থেকে প্রথমে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাস করেন। তারপর সাংবাদিকতার কোর্সও করেন।

কিন্তু চেহারায় আলাদা চটক থাকায় সেসময় থেকে মডেলিংয়ের অফার আসতে শুরু করে মুনমুনের কাছে। সেই সূত্রেই গ্ল্যামার দুনিয়ায় চলাফেরা শুরু তার। তবে মডেলিং ও বিজ্ঞাপনে মুখ দেখালেও শুরু থেকেই বলিউডে অভিনয় করার ইচ্ছা ছিল মুনমুনের। তবে পার্শ্বচরিত্রের চেয়ে নায়িকা হতেই ইচ্ছুক ছিলেন তিনি।

সেই মতো কাস্টিং ডিরেক্টরদের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেন মুনমুন। নানা ছবির জন্য অডিশন দিতে শুরু করেন। কিন্তু কোথাও তেমন সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এভাবে দীর্ঘদিন চলার পর ২০০৪ সালে ‘হাম সাব বারাতি’ নামে একটি টিভি সিরিয়ালে অভিনয়ের সুযোগ পান মুনমুন। শুরুতে সিরিয়ালে অভিনয় নিয়ে ছুঁৎমার্গ থাকলেও, শেষমেশ রাজি হয়ে যান।

এই সিরিয়ালে অভিনয় করার সময় ২০০৫ সালে কমল হাসান ও মনীষা কৈরালা অভিনীত ‘মুম্বাই এক্সপ্রেস’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন মুনমুন। ২০০৬ সালে পূজা ভাট পরিচালিত ‘হলিডে’ ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। তবে তার বাইরে বলিউডে সে ভাবে কাজের সুযোগ আসছিল না তার কাছে। তাই টেলিভিশনেই মনোনিবেশ করেন।

‘হাম সাব বারাতি’ সিরিয়ালই তার জীবনের ঘুরিয়ে দেয়। এই সিরিয়ালে দিলীপ জোশীর সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন মুনমুন। সেসময় নাট্যকার তারক মেহতার ‘দুনিয়া নে উন্ধা চশমা’ নামের ধারাবাহিক নাটক অবলম্বনে ‘তারক মেহতা কা উল্টা চশমা’ সিরিয়াল তৈরির কথা চলছিল। সেখানে ববিতা আইয়ারের চরিত্রের জন্য মুনমুনের হয়ে সুপারিশ করেন দিলীপ জোশী।

বরাবরের মতো এই সিরিয়ালে অভিনয় নিয়েও ইতস্তত করছিলেন মুনমুন। কিন্তু সেসময় ব্যক্তিগত জীবনে বিস্তর ঝড়ঝাপটা চলছিল তার। তাই শেষমেশ ববিতা আইয়ারের চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হয়ে যান তিনি। তাতেই রাতারাতি তার জীবন পাল্টে যায়। ববিতা আইয়ারের চরিত্রে মুনমুনকে পছন্দ করেন দর্শক। দিলীপ জোশীর সঙ্গে তাঁর রসায়নও মন কাড়ে সকলের।

মুনমুন ভেবেছিলেন, দুই-এক বছর পর সিরিয়াল শেষ হয়ে গেলে আবার বলিউডে মন দেবেন তিনি। কিন্তু ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও সিরিয়ালটি আজও চলছে এবং টিআরপির দৌড়ে বাকিদের রীতিমতো টক্কর দিচ্ছে। এই কারণেই সিরিয়াল ছেড়ে দেয়ার সাহস বোধহয় পাননি মুনমুন। তাই সমান তালে সিরিয়ালটিতে অভিনয় করে চলেছেন তিনি।

তবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও বরাবর নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করেছেন মুনমুন। কিন্তু না চাইতেও অভিনেতা আরমান কোহালির সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং টানাপড়েনের কথা গোপন থাকেনি। ২০১৩ সালে রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস’-এ অংশগ্রহণ করেন আরমান। সেসময়ই মুনমুনের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওঠাপড়ার কথা আরও বেশি করে চাউর হয়।

শোনা যায়, ‘তারক মেহতা কা উল্টা চশমা’সিরিয়ালে অভিনয়ের আগে থেকেই আরমানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মুনমুনের। কিন্তু তার সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করতেন আরমান। একবার ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে রেস্তরাঁয় খেতে গিয়ে সকলের সামনেই তাকে অপদস্থ করেন আরমান। এমনকি গায়ে হাত পর্যন্ত তোলেন। দীর্ঘদিন মুখ বুজে সব সহ্য করলেও, ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে মুনমুনের। আরমানের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেন তিনি।

মুনমুন নিজে যদিও কখনও এ নিয়ে মুখ খোলেননি। এমনকি আরমানের সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকারও করেন তিনি। এখনও পর্যন্ত নিজেকে ‘সিঙ্গল’ বলেই দাবি করেন মুনমুন। তবে হলিউড থেকে বলিউডে যখন #মিটু আন্দোলনের রেশ এসে পৌঁছেছিল, সেসময় টেলিভিশন থেকে মুনমুনই প্রথম এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় মুনমুন জানান, ছোট থেকেই যৌন নিগ্রহের শিকার হয়ে আসছেন তিনি। কখনও প্রতিবেশী, কখন আবার তুতো দাদারা যৌন নিগ্রহ করেছেন তাকে। যে ডাক্তারের হাতে তার জন্ম, তিনিও তাকে অশ্লীল ভাবে স্পর্শ করেন বলে জানান মুনমুন। এমনকি পড়ানোর সময় প্রাইভেট টিউটরও তার অন্তর্বাসে হাত ঢুকিয়েছিলেন বলে জানান। নাম না করে এক স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তোলেন মুনমুন।

তবে এত কিছুর পরেও প্রচারের আলো থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পছন্দ করেন মুনমুন। তিনি বেড়াতে ভালোবাসেন। সুযোগ পেলেই ব্যাগপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে সেই সব ছবিও পোস্ট করেন তিনি। সুযোগ পেলে গোটা পৃথিবী ঘুরে দেখতে চান, সংবাদমাধ্যমে এমনটাও জানিয়েছেন মুনমুন।

ঢাকাটাইমস/০৩জুন/এএইচ