শালবনে ঘেরা আলতাদিঘীতে পদ্মফুলের খেলা

অরিন্দম মাহমুদ, ধামইরহাট (নওগাঁ)
 | প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০২০, ১৫:৩১

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরেই আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানকে কেন্দ্র করে প্রকৃতির গর্ভে গড়ে উঠেছে সু-বিশাল শালবন। প্রায় ২৬৪.১২ হেক্টর এই বনভূমির ঠিক মাঝখানে রয়েছে ৪৩ একর আয়তনের বিশাল একটি দিঘী। প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ এ আলতাদীঘির সচ্ছ পানিতে ফুটে থাকা হাজারো পদ্মফুল যে কোন ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে করবে বিমোহিত। প্রতিবছর শীতে অতিথি পাখিরা এসে ভারত সীমান্ত ঘেষা এ দিঘীর নির্মল পানিতে দাপিয়ে বেড়ায়। ডাহুক, পানকৌড়ির কলকাকলি আর তাদের চঞ্চল ওড়াউড়িতে প্রাণ প্রাচুর্যে মুগ্ধ হয় যেকোন বয়সের মানুষের হৃদয়।

কথিত আছে, আনুমানিক ১৪০০ সালে এ অঞ্চলে রাজত্ব করতেন রাজা বিশ্বনাথ জগদ্দল। তখন একবার প্রজাসাধারণের খাবার পানির প্রকট সংকট দেখা দেয়। মাঠ-ঘাট শুকিয়ে চৌচির হওয়ায় আবাদি জমিতে ফসল ফলানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। হঠাৎ একদিন রানী স্বপ্নে দেখলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পা ফেটে রক্ত বের না হবে ততক্ষণ তিনি হাঁটতে থাকবেন এবং যেখানে গিয়ে পা ফেটে রক্ত বের হবে ততদূর পর্যন্ত একটি দিঘী খনন করে দিলেই সেই দীঘি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। এতে পানির প্রকট অভাব থেকে মুক্তি পাবে প্রজাসাধারণ। এরপর একদিন রাজার নির্দেশে রাণীর পায়ে চুপকরে আলতা ঢেলে দিলে প্রজা চিৎকার করে বলেন, রাণীমা, আপনার পা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। একথা শুনে রানী তাঁর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন সত্যিইত পা থেকে রক্ত ঝড়ছে, আলতাকে রক্ত ভেবে রাণী সেখানে বসে পড়েন। প্রেম পুঁজারি রাজা বিশ্বনাথ জগদ্দল ওই স্থান পর্যন্ত একটি দিঘী খনন করে দিলেন। এরপর অলৌকিকভাবে মুহুর্তেই বিশুদ্ধ পানিতে ভরে ওঠে দিঘী। রাজা ওই দিঘীটি আলতাদীঘি নামে নামকরণ করেন।

বৌদ্ধ যুগের এ আলতাদীঘিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান। শালবন এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ এই বনভূমিটি ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রশাসনের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস পর্যালোচনায় এর গুরুত্ব বেড়ে যায়। ওই বছরই আলতাদীঘিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়।

দিঘীর পাড় ঘেষে বেড়ে ওঠা সু-বিশাল এ শালবনে সারি সারি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আছে। বানর ছানার গাছে গাছে লাফানো আর জানা অজানা হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে চারদিক। বনের ভেতর দিয়ে পিচঢালা রাস্তা এঁকেবেঁকে চলেছে গন্তব্যে। রাস্তার দু’পাশে সারি সারি শাল গাছ। শুকনো শাল পাতার ফাঁকে বেড়ে ওঠা উইপোঁকার বড় বড় ঢিবি, যা সত্যিই বিস্ময়কর। রাতের আঁধারকে আলোকিত করে চাঁদের আলোয় ছোট বড় মাছেরা খেলায় মেতে ওঠে। অপরদিকে শেয়াল, বেজি আর বনবিড়ালের আনাগোনায় নতুনরুপে আবিষ্কার হয় রাতের আলতাদিঘী ।

ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূরণ এ দীঘিটির দৈর্ঘ প্রায় এক কিলোমিটার। দীঘির পূর্ব-পশ্চিম এবং দক্ষীণে গহীন শালবন। আলতাদীঘির উত্তর ধারের বেশ কিছু অংশ ভারতে পড়েছে। ফলে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের দু’দেশের আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার দেখার সৌভাগ্য হবে। নওগাঁ শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার, জয়পুরহাট শহর থেকে মাত্র ১৯ কিঃমি। ঢাকা থেকে যেকোনো যানবাহনে খুব সহজেই এই দিঘীতে পৌঁছানো যায়।

বন বিভাগ কর্মকর্তা আ. মান্নান জানান, বন বিভাগ ও একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে ইতোমধ্যে ঐতিহাসিক এ উদ্যানের জীববৈচিত্র রক্ষায ওষুধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বাঁশ ও বেত লাগানো হয়েছে। এছাড়া এ বনাঞ্চলে অজগর, হুনুমান, বানর, গন্ধগোকুল, বেজি, সজারু, মেছোবাঘ, বনবিড়াল, শিয়ালসহ প্রায় ২০ প্রজাতির পাখি অবমুক্ত করা হয়েছে। এ বনাঞ্চল একদিকে পর্যটক ও দর্শকদের আনন্দ বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায়ে যথেষ্ট অবদান রাখছে। দূর-দুরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন এ জাতীয় উদ্যান দেখার জন্য।

ঢাকাটাইমস/৩জুন/পিএল

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :