ডিসির হস্তক্ষেপে চিকিৎসা পেলেন সখিনা

প্রকাশ | ০৩ জুন ২০২০, ১৯:০১

বিশেষ প্রতিনিধি, ফরিদপুর

ফরিদপুর পৌরসভার রঘুনন্দনপুর গ্রামের ফজল শেখের স্ত্রী সখিনা (৫৫) বেশ কিছুদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছেন। ১ জুন তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। তাকে সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়। বলা হয়, এর চিকিৎসা এখানে হবে না- কারণ এখানে কোন ডাক্তার নেই। পরদিন তার অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে আবার তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে ভর্তি না নিয়ে এখানে এ রোগী ভর্তি করা হবে না বলে ফিরিয়ে দেন এবং বলেন, সদর হাসপাতাল বা ডায়বেটিক হাসপাতালে নিয়ে যেতে। ফজল শেখ তার স্ত্রীকে আবার সদর হাসপাতাল ও আরো কয়েকটি হাসপাতালে নিরাশ হয়ে আল মদিনা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করান, পরে সেখান থেকেও ফিরিয়ে দিয়ে মেডিকেলে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়। এভাবে ফজল শেখ তার চরম অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে এদিক-ওদিক ছুটতে থাকেন চিকিৎসার জন্য।

কোন উপায় না পেয়ে ফজল শেখ শরণাপন্ন হন জেলার এক সাংবাদিকের। তিনি সিভিল সার্জন ও মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করে কোন ব্যবস্থা করতে না পেরে অবশেষে জেলা প্রশাসক অতুল সরকারকে বিষয়টি জানান। জেলা প্রশাসক তখন রোগীটিকে বিশেষ ব্যবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন।

সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশও আজ করোনার ভয়াল গ্রাসে নিমজ্জিত,জেলার প্রধান দুই হাসপাতালে  করোনার দোহাই দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে প্রায় সকল চিকিৎসা। সখিনার মত সাধারণ জনগণ পাচ্ছে না কোন ধরনের সেবা। যে সব রোগী ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগে ভুগছেন, যাদের নিয়মিত ফলোয়াপ চিকিৎসা নিতে হয়- তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। তাছাড়া এই দুই হাসপাতালে নামমাত্র যে কয়জন রোগী ভর্তি রয়েছে, তারাও সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছে না। ডাক্তার ও সেবাকর্মীরা ঠিকমত তাদের ফলোআপ করছে না বলেও জানান এসব ভুক্তভোগী।

এক সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থার দোহাই দিয়ে সেবাদানে বিরত থেকেছেন তারা। যখন সরকারি এ হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পিপিই, মাস্ক, গগলসসহ সুরক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে, এখনও সাধারণ রোগীর সেবা দিতে নানা অজুহাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন তারা।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, বিষয়টি আমি অবগত আছি। গতকাল কিডনির সমস্যা নিয়ে একজন মহিলা রোগী আমাদের এখানে আসে। আমরা তাকে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেই। কারণ সদর হাসপাতালে কিডনি রোগের চিকিৎসা দেওয়ার মত কোন ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আমার কথা হয়েছে, আমি তাকে বলেছি- আমাদের এখানে এই রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার মত কোন ডাক্তারও নেই, আলাদা কোন ওয়ার্ডও নেই। এই রোগীকে আমরা ভর্তি রাখলে রোগীর সমস্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না। তাই এই রোগীকে আমাদের এখানে ভর্তি রাখা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে সদর হাসপাতালে মেডিসিন, গাইনি ও ইএনটি বিভাগ ছাড়া আর কোন চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব না।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুর রহমান জানান, আমাদের পুরাতন ভবনটি করোনা ডেডিকেটেড করায় সেখানে থাকা কিডনি বিভাগ, শিশু বিভাগ, সিসিইউ, মেডিসিন বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ হাসপাতালের নতুন ভবনগুলোতে বিভাগগুলো স্থানান্তর করা যায় কিনা- প্রতিবেদকের এই প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, সখিনার বিষয়টি আমি অবগত হওয়া মাত্রই ফমেক হাসপাতালে ফোন দিয়ে রোগীকে ভর্তি নিয়ে যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলি। এছাড়া রোগীর চিকিৎসা ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ রাখছি। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেছি, সাধারণ রোগীরা যেন কোন প্রকার হয়রানির শিকার না হয়। আমি নিয়মিত এ ব্যাপারে খোঁজ রাখব।

(ঢাকাটাইমস/৩জুন/এলএ)