মেয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ায় বিপাকে পরিবার!

প্রকাশ | ০৩ জুন ২০২০, ২২:৩০ | আপডেট: ০৩ জুন ২০২০, ২২:৩১

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন কুষ্টিয়ার মেধাবী শিক্ষার্থী রিমি খাতুনের। সে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তবে তার বাবা আলাউদ্দিন খন্দকার একজন গরীব বর্গাচাষী। তিন মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। মেয়ের ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রিমির বাবা।

রিমি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পায়। সে উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের নগরবাঁকা এলাকার আলাউদ্দিন খন্দকারের মেয়ে। সরকারি রেলের জমিতে ডেকোরেটরের ব্যবসা ছিল আলাউদ্দিনের। পরে সরকারি উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে যায় ব্যবসা।

নিজের জমিজমা না থাকায় বর্গা চাষ করে বর্তমানে জীবিকা চালায় আলাউদ্দিন। তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়েই সংসার তার। তিন মেয়েই মেধাবী হওয়ায় তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন খুব কষ্টে। বড় মেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টাস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। মেজো মেয়ে সরকারি ম্যাটসের শিক্ষার্থী। ছোট মেয়ে রিমি খাতুন এবার এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছে। সে ১০৪১ নম্বর অর্জন করেছে।

রিমি খাতুন বলে, আমার এ সাফল্যের পেছনে আমার বাবা-মা, পরিবার ও শিক্ষকদের অবদান সবচাইতে বেশি। আমি মন দিয়ে লেখাপড়া করে চিকিৎসক হতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই।

রিমির মা আরশিদা খাতুন বলেন, আমার তিন মেয়েকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। তারা মানুষের মতো মানুষ হবে এটাই আমার প্রত্যাশা।

রিমির বাবা আলাউদ্দিন খন্দকার বলেন, আমি চাই আমার মেয়েকে ভালো কলেজে ভর্তি করাতে। তবে লেখাপড়া করাতে অনেক খরচ। এমনিতেই দুই মেয়ের খরচ দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় আমাকে। এবার ছোট মেয়েও ভালো রেজাল্ট করেছে। চিন্তা বেড়ে গেলো। এদিকে মেয়ের ইচ্ছা ডাক্তার হওয়ার।

তিনি বলেন, কিভাবে ভালো কলেজে ভর্তি করবো, অর্থের অভাবে রয়েছি। একলা কাজ করে আর পেরে দিচ্ছি না। তারপরেও কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে সাধ্য মতো চেষ্টা করে দেখি ভালো কোথাও মেয়েকে ভর্তি করাতে পারি কিনা।

হত দরিদ্র এই পরিবারের সন্তান রিমি ভবিষ্যতে ভালো রেজাল্ট করে ডাক্তার হতে চাইলেও তার লেখা পড়ার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে পারিবারিক অর্থ সংকট।

হালসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, রিমি আমাদের স্কুলের গর্ব। সে অসম্ভব মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। তার বাবা একজন ভূমিহীন কৃষক। রিমি মেধাবী ও গরীব হওয়ায় শিক্ষা উপবৃত্তিসহ স্কুল থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে তাকে। তাকে স্কুলের সব ফি মওকুফ করে বিনা বেতনে অধ্যয়ন  করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, রিমির মধ্যে একটা অন্যরকম প্রতিভা রয়েছে। সে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। সেভাবেই তাকে আমরা তৈরি করার চেষ্টা করেছি। তবে আর্থিক সংকটের কারণে পরিবার তার লেখাপড়া চালাতে পারবে কিনা সন্দেহ।

(ঢাকাটাইমস/৩জুন/কেএম)