‘কোনো চাঁদা দিচ্ছি না, তবুও লোকসান’

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২০, ০৭:৫২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে লকডাউন শেষে দেশে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। পরিবহন চলাচল করলেও মালিকরা লোকসানে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে সড়কে গাড়ি চালাতে চাঁদা দিতে হচ্ছে না, তারপরেও তেলের খরচ দিতে হচ্ছে পকেট থেকেই। আর গত দুই মাসে যে পরিমাণ লোকসান হয়েছে, তা কখনো কাটিয়ে উঠতে পারবেন কিনা জানেন না বলে জানিয়েছেন প্রজাপতি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম রফিকুল ইসলাম।

ঢাকাটাইমসকে তিনি জানান, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে টানা ৬৬ দিন গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় তাদের যে লোকসান হয়েছে, সে বোঝা তাদের দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হবে। এমনকি এই লোকসান কাটিয়ে ওঠাও বেশ কঠিন বলে মনে করেন তিনি।

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত দুই মাসের লোকসান কতদিনে কাটিয়ে উঠতে পারব কিনা জানি না। আদৌ কাটিয়ে উঠতে পারব কিনা তাও জানি না। আপাতত টিকে থাকার চেষ্টা করছি। এখন পকেটের টাকা দিয়ে লোকসান দিচ্ছি। বর্তমানে কোনো চাঁদা দিচ্ছি না। তারপরেও পকেটের টাকায় তেল ভরতে হচ্ছে।’

এমনটি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই পরিবহন ব্যবসায়ী বলেন, ‘জনগণের বাসের উপর আস্থার অভাব আছে। আমরা সে আস্থা পূরণে কাজ করছি। স্থাস্থ্যবিধি মানতে চেষ্টা করছি। যাত্রীরা এখন ভাড়া নিয়ে অভিযোগ করে না। প্রতিবার ভাড়া বাড়লে নানা অসন্তোষ হতো। এখন সেটা হচ্ছে না। আমাদের লোকসানের দুইটি কারণ, একটি হচ্ছে এখন যাত্রী নেই বললেই চলে। আরেকটি হচ্ছে, আমরা ১০০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর দাবি করেছিলাম। পরে সেটি ৮০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়ালেও আমাদের এখন লোকসান হতো না। কিন্তু সেটিকে যখন ৬০ শতাংশ করা হলো, তখন আমরা বিপদে পড়লাম। আবার এই ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির পরেও আমাদের লোকসান হতো না, যদি যাত্রী থাকত।’

মোহাম্মদপুর থেকে মিরপুর হয়ে উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর রুটে চলাচলকারী প্রজাপতি পরিবহন প্রতিষ্ঠানটির কাছে বাস রয়েছে ১৩০টি। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন চালক ও চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন ২৬০ জন পরিবহন শ্রমিক। করোনাকালে তাদের নিরাপত্তায় উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিজনকে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে একটি করে কেএন ৯৫ মাস্ক। প্রতি দুই দিনের জন্য একটি করে মাস্ক সরবরাহ করা হয়।

এছাড়া সরকার নির্দেশিতভাবে যাত্রা শুরুর আগেই পুরো মাসে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে নেয়া হচ্ছে। ব্যবহার করা হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটির ৩০ হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে  জানিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাস ছাড়ার আগে স্প্রে করা হয়। প্রতিটি স্টাফের জন্য আমরা বিনামূল্যে মাস্কের ব্যবস্থা রেখেছি। একদিন পরপর প্রত্যেককে একটি করেন কেএন ৯৫ মাস্ক দেয়া হচ্ছে। এছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করছি। সব খরচ দেয়ার পর আমাদের আয়। দিন শেষে হিসেব করে দেখা যায় কিছুই নাই। বরং তেল খরচ পকেট থেকে দিতে হচ্ছে। ব্যাংক লোন আছে, ব্যাংক লোনের জন্য চাপ দিচ্ছে।’

তবুও যাত্রী সেবায় সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের এল সিস্টেমে বসানো হচ্ছে। যেন এক জনের নিঃশ্বাস যেন আরেকজনের গায়ে না লাগে সে দিকটি আমরা খেয়াল রাখছি। অনেক সময় যাত্রীরা আমাদের কথা শুনতে চায় না। তারপরেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার গাড়িতে উঠে যেন কোনো যাত্রী করোনা আক্রান্ত না হয় আমি সেটা প্রত্যাশা করি।’

(ঢাকাটাইমস/০৪জুন/কারই/এমআর)