করোনা তহবিলে টাকা দিতে ডিসির অপেক্ষায় শিশু শাশ্বত

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২০, ০৯:০৮ | আপডেট: ০৪ জুন ২০২০, ১৬:২৮

সোহাগ দেওয়ান, ঢাকাটাইমস

মহামারিতে স্তব্ধ হয়ে পড়া জীবনে বড়দের আশঙ্কা অনিশ্চয়তার ছাপ পড়ছে ছোটদের মনেও। মানুষের অসহায়ত্ব নাড়া দিচ্ছে তাদের কোমলমতি হৃদয়ে। অসহায় মানুষের পাশে বাবার সহায়তা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে জেলা প্রশাসককে পাঠানো এক শিশুর চিঠি সাড়া ফেলেছে খুলনা-ঝিনাইদহ অঞ্চলে।

পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শাশ্বত শরন নামের শিশুটি জাপান সরকারের থেকে পাওয়া তার বৃত্তির টাকা দিতে চায় জেলা প্রশাসকের তহবিলে। আর এজন্য সে চিঠি লিখে টাকা পাঠানোর উপায় জানতে চেয়েছে। এজন্য সে জেলা প্রশাসকের নাম্বার চেয়েছে। এই চিঠি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সবাই বাহবা দিচ্ছে শাশ্বতকে।

খুলনার সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী শ্বাশত। মহামারির দিনে তার মাথায় আসে সে অসহায়দের পাশে দাঁড়াবে। যেই চিন্তা সেই কাজ। তার ইচ্ছার কথা জানিয়ে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় শ্বাশত। বাবার সঙ্গে জাপানে থাকাবস্থায় পাওয়া সে দেশের সরকারের দেওয়া শিক্ষাবৃত্তির টাকা দান করতে চায় যারা খাবারের কষ্টে আছে তাদের জন্য।

জেলা প্রশাসকের অফিসিয়াল ফেসবুক পাতার ম্যাসেঞ্জারে বাবা জগৎজ্জীবন বিশ্বাসকে দিয়ে সেই চিঠি পাঠিয়ে দেয় শ্বাশত। আবেগ মাখা চিঠি পেয়ে মুগ্ধ হন জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ।

জেলা প্রশাসকের ফেসবুকে ‘অনুপ্রেরণার উৎসভূমি- ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাওয়া পত্র’ ক্যাপশন দিয়ে শ্বাশতর চিঠিটি পোস্ট করা হয়। অসংখ্য মানুষ নিচে মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে নানা মন্তব্য করেন।

শাশ্বতর বাবা জগৎজ্জীবন বিশ্বাস জানান, মেয়ে গত সোমবার চিঠিটি লেখে। এখন সে অস্থির হয়ে আছে টাকা পাঠানোর জন্য। জেলা প্রশাসকের তরফে যোগাযোগ হলেই টাকা পাঠিয়ে ওর স্বপ্নটা পূরণ করা হবে।

চিঠিতে জেলা প্রশাসকের কাছে তার বিকাশ নম্বর চেয়েছিল মেয়েটি। তবে সেটা কয়েকদিনেও না পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠে শ্বাশত। ঢাকাটাইমসকে এই ক্ষুদে শিক্ষার্থী জানায়, সে এখন জেলা প্রশাসকের নম্বর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ডিসি স্যার নম্বর দিলেই বাবাকে দিয়ে টাকাটা পাঠিয়ে দেবে।

চিঠিতে শ্বাশত লিখেছে, ‘আশা করি ভালো আছেন। আমি বাবা ও মায়ের মোবাইলে ফেসবুকে দেখেছি যে, আপনি করোনার এই দুর্যোগে গরিব ও অসহায় মানুষদের সহায়তা করছেন। আপনার এই কাজে আমি উৎসাহ পেয়েছি। আমি যখন বাবা-মায়ের সঙ্গে জাপান ভ্রমণে গিয়েছিলাম তখন জাপান সরকার আমাকে মাসিক শিশুভাতা প্রদান করত। আমি সেখান থেকে কিছু টাকা গরিব-অসহায় মানুষদের দিতে চাই। তাই অনুগ্রহ করে আপনি আপনার বিকাশ নম্বর পাঠিয়ে দিন। যাতে আপানার বিকাশে টাকাটা পৌঁছে দিতে পারি।’

‘আজ আর নয়। আপনার কাছে অনুরোধ রইল বিকাশ নম্বরটি পাঠিয়ে দেওয়ার। সবাই ভালো থাকবেন। ঝিনাইদহ আমার নিজ জেলা।’

এ নিয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে শাশ্বতর ইচ্ছা পূরণে জেলা প্রশাসক সাড়া দেবেন বলেই বিশ্বাস শাশ্বতর বাবা-মায়ের।

শ্বাশত বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের সাবেক শিক্ষার্থী। জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে ২০১৩-২০১৪ সালে সেখানে পড়াশোনার জন্য গেলে সঙ্গে পরিবারও যায়। তখন জাপান সরকারের দেওয়া শিশুভাতা পায় শাশ্বত যা তার বাবার জিম্মায় রেখে দিয়েছে সে।

প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের প্রশিক্ষক জগৎজ্জীবন বিশ্বাস ও স্কুল শিক্ষিকা মিনা মজুমদারের দুই সন্তানের মধ্যে শ্বাশত বড়। ছেলের বয়স তিন বছর। তাদের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদাহের কালীগঞ্জে হলেও চাকরির সুবাধে খুলনা শহরের আহসান আহমেদ সড়কে বসবাস করেন তারা।

শ্বাশতর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন তার মাথায় এমন চিন্তা এলো। তার ভাষ্য, ‘করোনায় তো গরিব মানুষ খেতে পারছে না ঠিকভাবে। কাজ করতে পারছে না। এজন্য ভাবলাম আমিও কিছু করি।’

তার মা জানান, করোনার প্রকোপ শুরু হলে বাবাকে সাধ্যমত মানুষকে সহায়তা করতে দেখে মেয়েও অনুপ্রাণিত হয়। আবার বাবার ফেসবুকেও অনেককে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখে নিজের জমানো টাকা দান করার চিন্তা করে সে। সেখান থেকেই জেলা প্রশাসককে চিঠি লিখেছে মেয়েটি।

শ্বাশতর বাবা বলেন, ‘আমি ডিসি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। অনুরোধ করেছি নম্বরটা পেলে বাচ্চার ইচ্ছাটা পূরণ করবো। এই কাজটা শেষ করতে পারলে ও (শাশ্বত) খুশি হবে।’

টেলিফোনে শাশ্বত জানিয়েছে, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় বাসা থেকে সে বের হয় না। পড়াশোনার পাশাপাশি গান গাওয়া, ছবি আঁকা আর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে খেলাধুলা করে সময় কাটছে তার। খুলনা বেতারে ছড়া গানও গায় সে।

পরিবারের সঙ্গে খুলনায় থাকলেও ঝিনাইদহে সহায়তা দেওয়ার কথা জানতে চাইলে তার সহজ উত্তর, ‘সেটা তো আমার নিজের জেলা। সেখানে অনেক গরিব মানুষ আছে। তাদের উপকার হবে কিছু পেলে। যাদের অনেক টাকা আছে তারা সবাই এগিয়ে এলে কেউ কষ্ট পাবে না।

(ঢাকাটাইমস/০৪জুন/বিইউ/ডিএম)