সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে করোনা: রিজভী

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২০, ১২:৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে করেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, লকডাউনসহ বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির যখন উন্নতি ঘটছে তখন আমাদের দেশে ভয়াবহ আকারে অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু সর্বোচ্চ পর্যায়ে। হাসপাতালে হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে কাতরাচ্ছে করোনা রোগীরা এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, চারিদিকে এতো উন্নয়নের বুলি, অথচ বাংলাদেশে একটিও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নেই। যারা ক্রসফায়ার আর গুমে আদর্শিক চেতনায় লালিত তাদের কাছে জীবনের কোনো মূল্য নেই। টেস্টের অনুপাতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার সব দেশকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাদের সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

রিজভী বলেন, হিমালয় প্রমাণ ভুল সিদ্ধান্ত, অর্বাচীনতা, ব্যবসায়ী ও আমলাদের স্বার্থের কাছে নতজানুতা এবং সরকারের একটি ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আরেকটি ডিপার্টমেন্টের সমন্বয়হীনতা মানুষের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। অনির্বাচিত সরকারের কাছে জনগণের ছিটেফোঁটাও মূল্য নেই। জনগণ এখন তাদের গবেষণার গিনিপিগ। অবিবেচকের মতো সবকিছু খুলে দিয়ে এখন তামাশা দেখছে সরকার। তাদের ভাবখানা এমন-চরে খাও, বাঁচলে বাঁচো, মরলে মরো। আমরা তো গদিতে আছি আরামে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এখন গণপরিবহনে ভাড়ার নৈরাজ্য চলছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায় করছে বাস কোম্পানিগুলো। নিরুপায় যাত্রাপথে নির্বিচারে পকেট কাটা হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। আর কোথায় স্বাস্থ্যবিধি, কোথায় সীমিত যাত্রী? বাস তো আগের মতোই চলছে গাদাগাদি করে। বর্তমানে লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড-টার্মিনাল এবং রাস্তাঘাটের দৃশ্য ভয়াবহ, কোথাও স্বাস্থ্যবিধির নূন্যতম বালাই নেই।

রিজভী বলেন, গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজে এই ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘কিছু পরিবহনের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএ ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, কার্যত: জনগণের জীবন নিয়ে বালখিল্য চলছে। নিজেদের দলীয় সিন্ডিকেটের পকেট ভরতে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ালেন। ঘোষণা করেছিলেন মনিটরিং করবেন। কোথায় সেই মনিটরিং-মোবাইল কোর্ট? দুর্যোগকালে এমনিতেই সাধারণ মানুষ অর্থকষ্টে রয়েছে। কাজ-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট সবকিছু বন্ধ থাকায় গত কয়েক মাসে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। তার ওপর পরিবহন ভাড়ার এই অকল্পনীয় নৈরাজ্য যেন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে মধ্য সাগরে লাইফ বোটবিহীন জাহাজের মতো।

রিজভী বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত বিশ্বের কোন দেশে কোথাও গণপরিবহন ভাড়া এক টাকাও বাড়েনি। এমনকি প্রতিবেশি দেশ-যাদের সাথে এই সরকারের নিবিড় সম্পর্ক তারাও ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তিনি অবিলম্বে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করার আহবান জানান।

রিজভী বলেন, এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে গুলি করার অপরাধে সরকারে একান্ত আপনজন সিকদার গ্রুপের কেউ গ্রেপ্তার না হলেও গুলি করতে ব্যবহৃত বিলাসবহুল গাড়িটি আটক করা হয়েছে। এই সন্ত্রাসীবান্ধব সরকার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা দিয়ে হত্যা চেষ্টার মামলার দুই আসামিকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে রক্ষা করার পর গাড়ি আটকের ঘটনা সত্যিই বছরের সেরা তামাশা। মানুষকে কতোটা বোকা ভাবলে সরকার এই ড্রামা করতে পারে! সন্ত্রাসীদের কিভাবে রক্ষা করতে হয় আওয়ামী লীগ তা জানে। একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার আপাদমস্তক যখন অন্যায়, অনিয়ম ও অবিচারের কাছে বিক্রি হয়ে যায় তখন রাষ্ট্রের কর্ণধার’রা মাফিয়া শক্তির অনুচরে পরিণত হয়। সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে শিকদার ভ্রাতৃদ্বয়ের দেশ ত্যাগ তার জলন্ত প্রমাণ।

রিজভী আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যই হচ্ছে সন্ত্রাসী ও লুটপাটে পৃষ্ঠপোষকতা দান। আওয়ামী লীগ কখনো দলীয় লুটপাটের অথবা দলীয় সন্ত্রাসী বা হত্যার আসামির শাস্তি দিয়েছে তার নজির নেই। তারা নিজের দলীয় ফাঁসির আসামিদের রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বেকসুর খালাস দেয়। ঠিক একইভাবে সন্ত্রাসী সিকদার ব্রাদার্সকে রক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে।

ঢাকাটাইমস/৪জুন/ বিইউ/এমআর