সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা

মো. শাহিন রেজা
 | প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০২০, ১২:৫০

বেশ কিছু দিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছি। জ্বর, কাশি, গলা ব্যাথা, ডায়রিয়াসহ অন্য কোনো সমস্যা ছিলনা। ৩৩৩ নম্বারে কল করা ছড়াও দুই জন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শেষমেশ গতকাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে গিয়েছিলাম। এক ধরনের ভয় ও উদ্বেগ নিয়েই যাওয়া।

সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরপরই ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। ১৪ দিন ঘর বন্দি থাকার মধ্যে আমার মৃদু শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়। এলার্জি থাকায় ঠান্ডার সমস্যায়ও ভুগতে থাকি। অন্য কোনো উপসর্গ না থাকায় এসিডিটি ও এলার্জির ওষুধ খাওয়া শুরু করি। সাথে গরম পানি গড়গড়া, বার বার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোঁয়া, ভিটামিন সি জাতীয় খাবার তো আছেই । এছাড়াও সকালের রোদ শরীরে নেওয়া, অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম নিয়মিত ভাবে করতে থাকি। রমজান মাস চলে আসায় নিয়মের কিছু পরিবর্তন আনলেও আমার মৃদু শ্বাস কষ্টের কোনো পরিবর্তন হয়না। ফলে মনের ভিতর সবসময় একটা অস্বস্তি কাজ করছিল।

সকালেই সিদ্ধান্ত নিলাম হসপিটালে যাবার। ৫০ টি শয্যা ও ১৬ জন ডাক্তার দিয়ে তিন লক্ষ ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষের সেবা দিচ্ছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সকাল এগারোটার পর হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে তিন টাকার টিকিট কেটে সহকারী সার্জন ডা. মৌমিতা ঘোষ রুপা চেম্বারে প্রবেশ করি। সম্ভবত নতুন যোগদান করেছেন কিন্তু অত্যন্ত বিচক্ষণ মনে হলো আমার কাছে।

আনেক সময় ধরে আমার সমস্যার কথা শুনলেন, জানালেন করোনার কোনো উপসর্গ নাই, বাবা মায়ের হার্টের সমন্যা থাকায় ইসিজি করতে বললেন সাথে কিছু ওষুধ লিখে দিলেন। আমার রিপোর্টে কোনো সমস্য না থাকায় তিনি সাহস যোগালেন এবং জানালেন এলার্জি ও এসিডিটি থেকে সমস্যা হচ্ছে এবং ইনহেলার ব্যবহার করতে হবে।

হাসপাতালে প্রবেশের পথেই স্থানীয় সংসদ সদস্যের উদ্যোগে করোনা ভাইরাস নমুনা সংগ্রহের ডক্টরস সেফটি চেম্বার চোখে পড়লো।

বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৫৫১৪০ জন আক্রান্ত হয়েছে। আমার উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দুই জন এবং বর্তমানে দুইজনই সুস্থ।

চিকিৎসকদের নিয়মিত রোগীর সঙ্গে করোনা উপসর্গের রোগীদেরও সেবা প্রদান করতে হচ্ছে। সরকার সাধ্যমত পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ করোনা চিকিংসার উপকরণের ব্যবস্থা করছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের অন্তরিকতার কোনো ঘাটটি আমার চোখে পড়েনি। কর্মচারীসহ হাসপাতালে সমস্ত স্টাফ তাদের সাধ্যমত সেবা প্রদান করছে। বেশ কয়েক বছর আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। তখন চিকিৎসক ছিল হাতে গুণে কয়েকজন। বর্তমানে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সবসময় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতাও চোখে পড়লো।

দেশে প্রতিদিনই ডাক্তার, নার্স সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, এর পরও তারা চিকিৎসা সেবা প্রদানে পিছপা হচ্ছে না। তাই তাদেরকে বলা হচ্ছে ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধা।

জেলা সিভিল সার্জনের তথ্য মতে বর্তমানে মহেশপুর কোনো করোনা রোগী নাই। স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে মহেশপুরকে করোনা মুক্ত রাখতে মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা তৈরি করা, তদারকি করা, প্রয়োজনে প্রচলিত আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটানো।

উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিসিন ও শিশু বিশেষজ্ঞ পদ খালি রয়েছে বলে জানা গেছে। আশাকরি স্বাস্থ্য বিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।

মহেশপুর একটি জনবহুল উপজেলা, তাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করা সময়ের দাবি। অন্তত একশত বেডের হাসপাতালে রূপান্তরে সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়াও রোগ নির্ণয়ে সবধরণের পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ সরকারী হাসপাতালে স্বল্প মূল্যে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করা হয়। ফলে গরীব মনুষের জন্য এটি বেশ উপকারী হবে।

এছাড়াও করোনা মোকাবিলায় উপজেলার অডিটরিয়ামকে করোনা আইসোলেশন সেন্টার ঘোষণা করা হয়েছে। অইসোলেশন সেন্টারে পর্যাপ্ত সরঞ্জামের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।

করোনাকালে চিকিৎসকদের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের সাধ্যমত সেবা প্রদান করছে। সকলের প্রচেষ্টায় করোনা অতিদ্রুত নির্মুল হবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের সবার।

লেখক: মো. শাহিন রেজা, শিক্ষক

ঢাকাটাইমস/ ৪জুন/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :