পুরুষ কি হেনস্তার শিকার হন? তাহলে নারী কেন?

মেরিনা মিতু
| আপডেট : ০৪ জুন ২০২০, ১৫:৫৫ | প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০২০, ১৩:২৩

স্কুটি নিয়ে এই শহরে চলাচলের সময় শহরের সবচেয়ে বাজে রুপ হয়তো আমি ফেইস করছি। এখনো করে যাচ্ছি। আজও ফেইস করেছি।

বাসওয়ালা, ট্রাকওয়ালা, সিএনজিওয়ালা থেকে ধরে পাঠাওয়ালারাও পর্যন্ত নিস্তার দেয়না। পাশে এসে অকারণে হর্ণ বাজানো, শিশ বাজানো, হঠাত করে এসে চাপ দিয়ে এক সাইডে নিয়ে যাওয়া, পিছন থেকে এসে স্কুটি ঘেষে কষে ব্রেক মারা এগুলো নিত্যদিনের ঘটনা। প্রথম দিকে খুব গায়ে লাগতো, সারাদিন মন খারাপ থাকতো, ভার্সিটিতে ক্লাস করতে গিয়ে ফিল করতাম কেউ বাস উঠিয়ে দিয়েছে আমার স্কুটির উপর; সড়কের সাথে লেপ্টে গেছি আমি আর আমার স্কুটি, এমনকি কখনো কখনো এসব ঘটনায় রাতে এসে সারারাত ধরে কান্নাকাটিও করতাম।

তারপরে কয়েকবার উল্টো জবাব দিতে লাগলাম। দুবার ট্রাফিক পুলিশের কাছে কমপ্লেইনও করেছি৷ কিন্তু আস্তে আস্তে এসবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে গেলো৷ এগুলোকে নিয়েই এই শহরে স্কুটি নিয়ে চলাফেরা করতে লাগলাম। অন্তত বাসে উঠে উড়াধুরা ধাক্কা খাওয়া, পাশের জনের ছটফটানি কিংবা হেল্পারের মেলিয়ে দেওয়া হাত ধরে বাসে উঠার থেকে নিজের একটা বাহনে করে চলাফেলা ফার বেটার।

পুরুষদের নিত্যদিনের এমন আচরণ আলাদা করে আর চোখে পড়েনি দীর্ঘদিন। সবই ন্যাচারাল হয়ে গেছে। ধরেই নিয়েছি এনাদের আচরণ এমনি। তবে আজ খুব চোখে পড়েছে, মনেও লেগেছে।

একটা কাজ শেষে বাসার দিকে ফিরছিলাম। বাসার কাছাকাছি রোডে ঢুকতেই দেখি পুরো রাস্তা কাদা। কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি হয়েছে। সরু রাস্তা, দুইটা মিনি ট্রাক পাশাপাশি চলতে পারেনা। তার উপর এদিক সেদিক গর্ত আর পানি। স্পীড ৩০-৩৫ এ করে আমি এগিয়ে যাচ্ছি। সামনে থেকে একটা মিনি ট্রাক আসতেছে। তাকে দেখে আমি রাস্তার সর্বশেষ সাইডে চেপে গাড়ি আগাচ্ছি আর গতি কমিয়ে দিয়েছি। ট্রাক খুব সহজেই আমাকে পাস করতে পারে। কিন্তু হঠাত কাছে এসেই ট্রাক তার গতি বাড়িয়ে দিয়ে আমার দিকে আসা শুরু করে দিছে। আমি কোনো উপায় না দেখে গাড়ি ব্রেক করে বসে আছি, তার পরেও ট্রাকটা আমার সামনের চাকা ছুয়ে একটা ব্রেক কষলো, দেন শুয়োরের মতো খিলখিল করে ট্রান নিয়ে চলে গেলে৷ এক সেকেন্ডের জন্য মনে হচ্ছিলো ট্রাকটা আমাকে উড়ায় দিবে।

আমি শক্ত হয়ে ওই জায়গাটাতেই মিনিট পাচেক বসে ছিলাম। সাইকেলে থাকা এক ভদ্রলোক যেতে যেতে বললো, এজন্যই সন্ধ্যার পরে মেয়েদের বের হতে হয়না। আর একটু হলেই তো বিপদ হয়ে যেতো।

এই বিপদ থেকে মনে পড়লো, যারা চিৎকার করে চিল্লায়ে দাবি করেন সময় এসেছে পুরুষবাদী হওয়ার, তাদের জন্য কিছু কথা। হে এটা সত্যি এবং অস্বীকারের কিছু নেই যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরুষরাও ঘরে নির্যাতিত, মিথ্যে মামলায় অনেক পুরুষকে হেনস্তা হতে হয়৷ আর তার জন্য আমি একজন নারী হয়ে খুবই লজ্জিত।

তবে আমার প্রশ্ন হলো, পুরুষরা কি নিত্যদিন হেনস্তার শিকার হন? যেটা একজন নারী হন?

ঢাকার রাস্তায় অনেক নারীই স্কুটি কিংবা প্রাইভেট কার চালান। একটা এক্সাম্পল দিতে পারবেন যে, বাইক চালক নারী পাশের কোনো বাইকের পুরুষকে দেখে শিশ বাজাইছেন, বাজে কমেন্ট করছেন? নাকি এসকল শুয়োরপনা অধিকার শুধু পুরষের?

কিংবা কোনো বাসচালককে দেখছেন কোনো পুরুষ বাইকারকে দেখে শিশ বাজাইতে?

শুধু এক্ষেত্রেও না, একজন নারীকে চলতে ফিরতে প্রতিটা পদে পদে হেনস্তা হতে হয়৷ কখনো আবার সেই হেনস্তার জন্য সেই নারীর কাপড় দায়ী হয়৷ এখানেও প্রশ্ন আছে। বর্তমানে এই শহরে ৫০ শতাংশ ছেলের প্যান্ট এমন পজিশনে পরিধান করে রাখে যেন বাথরুমে বসার আগে প্যান্ট অর্ধেক নামায় রাখছে, কি বুঝাতে চাইলাম তা মোটামুটি সবাই বুঝতে পারছেন। আমার আয়ত্বে নেই এমন কোনো খবর যে, এমন ছেলেদের দেখে মেয়েরা টিজ করেছে। তাহলে কোনো মেয়ের পোশাককে দায়ী করে তাকে বাজে কমেন্ট করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?

একটা ছেলে যদি এভাবে নিত্যদিন হেনস্তার মধ্যে না পড়ে তাহলে কিসের পুরুষ বাচাঁও আন্দোলনের কথা বলে বলে মুখে ফেনা তুলেন আপনারা। ঘরে নির্যাতন তো মেয়েরাও হয়, আপনাদের তুলনায় দশগুন। অথচ আপনারা তর্কে জেতার লক্ষে বেহুদা জিদ নিয়ে বসে আছেন।

তবুও আমার মনে হয় শহরে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি বিপদে রয়েছে। কারণ যেকোনো পরিস্থিতিতে একটা মেয়ে নিজেকে সামলাতে পারলেও একটা মেয়ের ওড়না শুধুমাত্র দু'পাশের জায়গায় এক পাশ বলেই সে ছেলে আর নিজেকে সামলাতে পারেনা। নিজের ইমেজ ধরে রাখতে পারেনা। ব্যক্তিত্বহীন হয়ে যায় মুহুর্তের মধ্যেই৷

পুরুষরা এই মহাবিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে শিখুক। নয়তো, এমন একটা সময় আসবে যে, শহরের মেয়েরা দুনিয়ার কোনো পুরুষকেই আর সহ্য করতে পারবেনা। বাবার উপদেশ, ভাইয়ের শাসন, স্বামীর আদর কোনোটায় আর ইতিবাচক মনে হবেনা একটা মেয়ের জন্য।

ঝড় বলেন করোনা বলেন। আজ নয় কাল চলেই যাবে৷ এই পুরুষ নামক ট্র্যাজেডি ঠিক কবে যাবে বলতে পারেন? এমন না হয়, পুরুষরা তার এই পুরুষ শব্দটাকেই ভয় পাওয়া না শুরু করে দেয়!

লেখক: মেরিনা মিতু, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগ

ঢাকাটাইমস/ ৪জুন/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :