সাংবাদিকদের সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীকে পাঁচ সংগঠনের খোলা চিঠি

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০২০, ২২:৪৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি খোলা চিঠি লিখেছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সসহ (আরএসএফ) দেশ-বিদেশের পাঁচটি সংগঠন। চিঠিতে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিন দফা আহ্বান জানায় তারা।

আরএসএফের সঙ্গে খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী অন্য চার সংগঠন হলো— ফোরাম ফর ফ্রিডম এক্সপ্রেশন (মুক্ত প্রকাশ), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), কার্টুনিস্ট রাইটস নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল (সিআরএনআই) এবং কার্টুনিস্ট ফর পিস (সিএফপি)।

চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর সংকটে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করা একটি সংগঠনকে তহবিল প্রদানের সময় আপনি বলেছিলেন, ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।’ আপনি আরও বলেছিলেন, ‘কেউ বলতে পারবে না আমরা কখনও কারও কণ্ঠরোধ করেছি; আমরা কখনও তা করিনি এবং কখনও তা করবো না।’

তবু এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আপনার দাবির সঙ্গে তথ্য সাংঘর্ষিক। আপনার ওই বক্তব্যের পর আরএসএফ কর্তৃক প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশের পাঁচ ধাপ অবনতি হয়েছে। ২০২০ সালের সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১তম।

আর গত কয়েক সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ঘটনায় আমরা আশঙ্কা করছি, আগামী বছরে বাংলাদেশের আরও অবনতি হতে পারে।

শুধু মে মাসেই ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তত ১৬ সাংবাদিক ও ব্লগারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে গত ৬ মে বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমন সংস্থা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) কর্তৃক গ্রেপ্তার হন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর।

তার একমাত্র ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ ছিল ‘লাইফ ইন টাইম অব করোনা’ শিরোনামে রাজনীতিকদের নিয়ে একটি কার্টুন সিরিজ প্রকাশ করা। তিনি এখনও কারাবন্দি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে তার। এই আইনে গ্রেপ্তার হওয়া বেশিরভাগ সাংবাদিক শুধু এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা স্থানীয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে গেছে।

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি ছুটি শুরুর পর অন্তত ১৩ সাংবাদিক পরিকল্পিত সহিংসতার শিকার হয়েছেন। কয়েকটি ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন তারা।

গত ১ এপ্রিল শাহ সুলতান আহমদ নামের সাংবাদিককে লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয়। মহামারিতে সরকারের পাঠানো জরুরি খাদ্য সহায়তা বিতরণে অনিয়মের খবর প্রকাশের কারণে স্থানীয় এক রাজনীতিক প্রতিশোধ নিতে মারধরের নির্দেশ দেওয়ায় ঘটনাটি আরও ভয়ংকর রূপ নেয়।

আরএসএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মানবিক ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত জেলা কর্মকর্তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের কারণে আরও ছয় সাংবাদিক একই ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

জাতিসংঘ এই সময়কে ‘ভুল তথ্যের মহামারি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এমন সময়ে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা নাগরিকদের নির্ভরযোগ্য ও স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন তৈরিতে সামনে থেকে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের সহিংসতার শিকার হওয়া মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। সাংবাদিকোচিত স্বাধীনতা সুরক্ষা এবং শারীরিক বা বিচারিক প্রতিহিংসার আতঙ্ক ছাড়াই যেন সাংবাদিকরা কাজ করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আপনার সরকারের কর্তব্য রয়েছে।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক পাঁচটি সংগঠন প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে কয়েকটি আহ্বান জানিয়েছে।

১) সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলার ঘটনাগুলো যেন শাস্তি থেকে পার না পেয়ে যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে যেন তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয় এবং প্রয়োজনে হামলাকারী ও উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার ও বিচার করা হয়।

২) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক, ব্লগার ও কার্টুনিস্টদের অবমাননাকর ধারা বাদ দেয়ার অনুরোধ।

৩) সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আইন সংস্কার করুন, যেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ২০১৮ সালের ১৪ মে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতি মেনে চলা প্রমাণ হয়।

এক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার করা এবং সাংবাদিকদের সুরক্ষায় একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করা উচিত।

এসব লক্ষ্য অর্জনে সরকারের সঙ্গে সংলাপ শুরুর জন্য সংগঠনগুলো প্রস্তুত আছে বলে চিঠিতে জানানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/০৪জুন/এনআই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

গণমাধ্যম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা