দ.কোরিয়ার বেলুন প্রচারণা নিয়ে উ.কোরিয়ার ক্ষোভ
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণামূলক বেলুন বার্তা পাঠানোর বহু পুরনো প্রথা বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। উত্তর কোরিয়া হুমকি দিয়েছে যে, এই বেলুন পাঠানো বন্ধ না হলে বৈরিতা বন্ধের লক্ষ্যে নেয়া সামরিক চুক্তি তারা খারিজ করে দেবে। খবর বিবিসির।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আন্দোলনকর্মীরা বহু বছর ধরেই উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার রেকর্ড এবং দেশটির পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার সমালোচনা করে সীমান্তের অপর পারে বেলুনে বাঁধা বার্তা পাঠিয়ে আসছে। অবশ্য অতীতে অনেকে আবার বেলুনে বেঁধে ডলারের নোট এবং চকোলেটও পাঠিয়েছে।
কিন্তু উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের ছোট বোন কিম ইয়ো জং হুমকি দিয়ে বলেছেন, উত্তর কোরিয়া থেকে দেশত্যাগী, তার ভাষায় সেই 'নিকৃষ্ট মানুষগুলো' সম্প্রতি এই বেলুনগুলো ছাড়ছে এবং দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের উচিত হবে এটা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
অনেক বছর ধরেই দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাকটিভিস্টরা এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে পালানো ব্যক্তিরা উত্তর কোরিয়ার ও নেতা কিম জং উনের সমালোচনা করতে এই পথ ব্যবহার করত।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকার বলছে এই বেলুন দুই অংশের মধ্যে 'উত্তেজনা' বাড়াচ্ছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি গোষ্ঠী বিবিসিকে বলেছে তারা এ কাজ থামাবে না।
২০১৪ সালে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা গুলি করে ওই বেলুনগুলো নামানোর চেষ্টা করত, যার ফলে সীমান্তে দু'পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়েরও ঘটনা ঘটেছে।
উত্তর কোরিয়াও অতীতে হিলিয়াম বেলুনে তাদের লিফলেট পাঠিয়েছে দক্ষিণে যেসব লিফলেটের মাধ্যমে তারা 'বৈরি আচরণ বা নির্বোধের মত পদক্ষেপ' বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উত্তর কোরিয়া সরকারে বেশ প্রভাবশালী অবস্থান কিম জং উনের ছোট বোন কিম ইয়ো জং এর। সম্প্রতি এক বিবৃতি জারি করে তিনি বলেন সম্প্রতি তার দেশে পুস্তিকা পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া থেকে দেশত্যাগী ব্যক্তিরা। জানি না বিশ্বের মানুষ জানে কি না এই নির্বোধ দেশত্যাগীরা কি ধরনের নিকৃষ্ট মানুষ'।
কিম ইয়ো জং বলেন, 'নিকৃষ্ট মানুষ- বুনো পশুর চেয়ে ভাল কিছু না- এই মানুষগুলো তাদের স্বদেশভূমির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে- এখন তারা অভব্য আচরণে জড়িয়েছে- এদের নিশ্চিতভাবে বেজন্মা কুকুরও বলা চলে, যারা জানে না কোথায় ঘেউ ঘেউ করতে হয়। এই বেজাতের কুকুরগুলোর মালিককে অর্থাৎ দক্ষিণ কোরিয়া সরকারকে এর দায় নিতে হবে।'
তিনি হুমকি দেন যে দক্ষিণ কোরিয়া পদক্ষেপ না নিলে বৈরিতা বন্ধের যে সামরিক চুক্তি হয়েছে তা বাতিল করা হবে, উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে যোগাযোগের যে দপ্তর খোলা হয়েছে তা বন্ধ করে দেয়া হবে এবং যৌথ উদ্যোগে কেসং শিল্প এলাকা গড়ে তোলার প্রকল্প থেকেও উ. কোরিয়া সরে আসবে।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকার বলেছে এধরনের বেলুন ছাড়ার ব্যাপারে তারা আ্ইন প্রণয়নের পরিকল্পনা নিয়েছেন। তারা এই বেলুন ওড়ানোকে 'উত্তেজনা সৃষ্টিকারী' বলে আখ্যা দিয়েছেন। দেশটির সংযুক্তিকরণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইও সাং-কি বলেন, 'আসলে এধরনের বেশিরভাগ পুস্তিকা, লিফলেট আমাদের অংশে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে, যা পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে এবং সেগুলোর জঞ্জাল পরিস্কার স্থানীয়দের জন্য বাড়তি ঝামেলা সৃষ্টি করছে। মানুষের জীবন ও সম্পত্তির জ্ন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে এমন যে কোন পদক্ষেপ বন্ধ হওয়া উচিত।'
মুক্ত উত্তর কোরিয়ার জন্য সংগ্রামী সংস্থা ফ্রি নর্থ কোরিয়ার সভাপতি পার্ক সাং-হাক বলছেন তারা তাদের কার্যক্রম থেকে নড়বেন না । তিনি বলছেন তারা বেলুনে বেঁধে পাঠানোর জন্য সম্প্রতি আরও ১০ লাখ নতুন পুস্তিকার অর্ডার দিয়েছেন।
তাদের সংগঠন গত বছর ১১বার উত্তর কোরিয়ায় পুস্তিকা পাঠিয়েছিল। এ বছর এখন পর্যন্ত তিনবার তারা পুস্তিকা পাঠিয়েছে- সবশেষ পাঠিয়েছিল ৩১শে মে। এর পরেই কিম ইয়ো জং এই ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেন।
ঢাকা টাইমস/০৫জুন/একে