শিশুদের নিয়ে যার স্বপ্ন...

মো. শাহিন রেজা
| আপডেট : ০৫ জুন ২০২০, ১৬:৪১ | প্রকাশিত : ০৫ জুন ২০২০, ১৬:৩৮

উচ্চ শিক্ষা লাভের পর সবারই ইচ্ছা থাকে ভালো চাকরিতে প্রবেশ করার। বাংলাদেশে সরকারি চাকরি যেন সোনার হরিণ! পরিবারেরও প্রত্যাশা থাকে তার সন্তান চাকরিক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করবে। ফলে বর্তমানে অনার্স/ মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নিজের একাডেমিক লেখা পড়া বাদ দিয়ে চাকরির পড়ায় বেশি মনোযোগী।

নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই বলি, তখন আমি প্রথম বর্ষের ছাত্র আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পড়তে যাওযা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল কম। কিন্তু বর্তমানে লাইব্রেরীতে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করেও শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত যায়গার ব্যবস্থা করতে প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যারা লাইব্রেরিতে যায় তাদের প্রায় সবাই চাকরির লেখা পড়া করেন। এমনকি লাইব্রেরিতে যায়গা পাওয়ার জন্য অনেকে ফজরের ওয়াক্ত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন।

বিসিএস, ব্যাংকসহ সরকারি বিভিন্ন ধরনের চাকরি লাভই তাদের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু আজ শোনাবো ব্যতিক্রমধর্মী এক মানুষের কথা। যার স্বপ্ন অন্য দশ জনের থেকে আলাদা। যিনি স্ব-উদ্যোগে কাজ করছেন প্রকৃতি ও শিশুদের নিয়ে।

বলছি সাদিয়া জাফরিন- এর কথা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে ২০১৪ সালে বিএসসি পাশ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগ থেকে ২০১৬ সালে 'Masters of Arts in Governance & Development studies' এ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। শুধু লেখা পড়ার মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে তিঁনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হন, ছিলেন দক্ষ সংগঠকও । কৃতিত্বের সাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক সাংগঠন জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সহসাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

লেখালেখি জগতেও তার বিচরণ রয়েছে। ২০১৬ সালের বই মেলাতে তাঁর 'স্বর্গের সরাব' নামে কবিতার বই প্রকাশিত হয়। এছাড়াও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ' Post Graduate Diploma in Educational Leadership and School Improvement - এর উপরে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়েছেন, অংশগ্রহণ করেছেন দেশ- বিদেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায়। বক্তা হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে দেশে ও বিদেশে। টিচিং ফেলো হিসাবে ২ বছর কাজ করেছেন Teach for Bangladesh নামক নামকরা প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া Teach for All, USA থেকে করেছেন Global girls education fellowship।

২০১৬ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন ' Grow Your Reader' নামক একটি সংগঠনের। তার সাথে আছে তার আরেক সহকর্মী আমিনা আজাদ। বর্তমানে এটাকে নিয়েই তিনি ব্যস্ত সময় পার করছেন। যার মূল উদ্যেশ্য শিশুদের মাঝে সঠিক শিক্ষার পরিবেশ এবং শিক্ষা পোঁছে দেওয়া। মানুষের স্বপ্ন থাকে ভালো চাকরি লাভের, আমাদের সমাজে সরকারি চাকরিজীবীদের একটু অন্য চোখে দেখা হয়। কিন্তু এত ডিগ্রি ও দক্ষতা নিয়েও কেন তিনি শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চান?

চলুন শুনি তার মুখ থেকেই- আমার লক্ষ্য হলো শিশুদের মাঝে সঠিক শিক্ষার আলো পোঁছে দেওয়া। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া শিশুদের মধ্যে। অনেকেই জানে না কী পড়তে হয়, কী ভাবে পড়তে হয়। সে যে বিষয়টাই শিখুক না কেন যেন সঠিক ভাবে শিখতে পারে। আমি এখন ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের দেশের স্কুলের বাচ্চারা নানান কারণে ইংরেজি ভালোভাবে রিডিং পরতে পারে না। আমার উদ্দেশ্য শিশুদের ভালোভাবে ইংরেজিতে দক্ষ করে তোলা ফলে তারা সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। যাতে তারা সুনাগরিক, সুশিক্ষিত ও দেশপ্রেমের শিক্ষা অর্জন করতে পারে।

তারা যেন বুঝতে পারো কোন কাজটি করা দরকার যা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বর্তমানে আমরা গ্লোবাল ভিলেজে বাস করছি তাই মাতৃভাষা শেখার সাথে সাথে ইংরেজি শেখাটাও বেশ প্রয়োজন। এ জন্যই আমি Grow Your Reader প্রতিষ্ঠা করি শিশুদের প্রতি এক ধরনের ভালোলাগা এবং সমাজের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা থেকে।

শিশুদের মাঝে পরিবেশ বিষয়েও সচেতনতা তৈরি করছেন তিনি। তার মতে পৃথিবীর পরিবেশের উপর যত্ন নিতে হবে। প্রকৃতির ক্ষতি করা মানে আমাদের নিজেদেরই ক্ষতি করা, কারণ প্রকৃতির ক্ষতির প্রভাব আমাদের উপর এসেই পড়ে। তিনি বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ দূষণ, ইকোসিস্টেম, জীবের প্রতি দায়িত্ববান হওয়া সহ সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছেন এবং এই বিষয়গুলো শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সচেতনতা তৈরি করছেন।

গতানুগতিক কর্মজীবনে প্রবেশ না করে শিশু ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করার ফলে সমাজ ও দেশের মানুষের কিছুটা উন্নয়ন করতে পারলেও তার স্বস্তির যায়গাটা তৈরি হবে এমনটাই জানালেন সাদিয়া জাফরিন। সৃজনশীল শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০১৭ সালে তিনি অর্জন করেন ' Inspiration Award-2017'।

মুক্ত চিন্তার এই মানুষটি অবসর সময়ে বাচ্চাদের নিয়ে লেখালেখি, বাগান করাসহ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন।

ঢাকাটাইমস/৫জুন/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :