করোনাকালে ঈদযাত্রায় প্রাণ গেছে ১৮৫ জনের: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২০, ১৯:০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গণপরিবহন বন্ধের মধ্যে সদ্য শেষ হওয়া এবারের ঈদযাত্রায় দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ১৫৬টি দুর্ঘটনায় ১৮৫ জন নিহত ও ২৮৩ জন আহত হয়েছেন।

শুক্রবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২০ প্রকাশকালে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর গণপরিহন বন্ধ থাকায় ঈদযাত্রা ব্যাক্তিগত পরিবহনে সীমিত ছিল। তবে ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনা ছিল অতীতের তুলনায় বেশি।

গত ১৯ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১৩ দিনে ১৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন নিহত ও ২৮৩ জন আহত হয়েছে। এ সময়ে রেলপথে ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষে ১টি ঘটনায় কোনো হতাহত হয়নি।

একই সময়ে নৌপথে ৬টি ছোট-বড় বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ৪৫ জন নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে।

এই সময়ে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ২৫ মে। এদিন ২০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়।

সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ২৪ মে। এদিন ৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়।

এই সময় একদিনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হয় গত ১৯ মে। এদিন ১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ৫৪ জন আহত হয়।

মূলত যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ৪৫ জন চালক, ৩৩ জন নারী, ২৮ জন পথচারী, ২৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ২৪ জন শিশু, ১৯ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৩ জন শিক্ষক, ৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৩ জন সাংবাদিক ও ১ জন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে।

এর মধ্যে নিহত হয়েছে ৩ জন পুলিশ সদস্য, ১৮ জন নারী, ১২ জন শিশু, ১৪ জন শিক্ষার্থী, ৩ জন শিক্ষক, ৩২ জন চালক, ৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ১ জন প্রকৌশলী ও ৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

এই সময়ে এক ঘটনায় অধিক প্রাণহানির ঘটনার মধ্যে উল্লেখ্য, গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে যাত্রীবাহী ট্রাক খাদে পরে ১৩ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়। সিরাজগঞ্জ সদরেও যাত্রীবাহী ট্রাক উল্টে ৪ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়। রাজধানীর কল্যাণপুরে প্রাভেইটকার-অটোরিকশা-প্রাইভেটকার ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়।

সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩৫.৭৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৮.৯৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১২.০৭ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৮.২১ শতাংশ অটোরিকশা, ৭.৭২ শতাংশ ব্যাটারি চালিত রিকমা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ৬.২৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা ও ০.৯৭ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ ছুটি বা লকডাউনে দেশে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। ৯০ শতাংশ যাত্রীর যাতায়াত বন্ধ থাকলেও সেই তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। এখন ব্যক্তিগত যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহনকে বিকশিত করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।’

এ সময় সড়ক দুর্ঘটনাকেও মহামারির মতো গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি  জানায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের সহকারি অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নুর নবী শিমু, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি, তাওহীদুল হক লিটন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, পাথওয়ের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহিন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির আমজাদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০৫জুন/এনআই/ইএস)