পাঁচ জেলায় ছয়জন খুন

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২০, ১৯:৫৩

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

দেশের পাঁচ জেলায় নারীসহ ছয়জন খুন হয়েছে। শুক্রবার এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে যশোরে এক যুবক, বগুড়ায় নারী গার্মেন্টস কর্মী, শ্রীমঙ্গলে মা-মেয়ে এবং রংপুরে এক  আইনজীবীর লাশ রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ-

যশোরে যুবকের বস্তাবন্দি লাশ

যশোরের চৌগাছায় নিখোঁজের দুই দিন পর যুবক বিপুল হোসেনের (৪২) বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চৌগাছা থানা পুলিশ উপজেলার বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়ের নাটনার খাল এলাকা থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করে। নিহত বিপুল স্বরুপদাহ ইউনিয়নের ছোট কাকুরিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শামসুল হকের ছেলে।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজীব নিহত পরিবারের বরাত দিয়ে বলেন, বুধবার প্রতিবেশী সবুজ ও তার দুলাভাই রফিকুল গরু কিনতে যাওয়ার কথা বলে বিপুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে বিপুল নিখোঁজ ছিল। শুক্রবার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের খবর শুনে স্বজনরা ঘটনাস্থলে যান। মৃতদেহটি বিপুলের বলে তারা শনাক্ত করেন। 

ওসি বলেন, মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। খুনের সঙ্গে জড়িতদের আটকে অভিযান শুরু হয়েছে।

খুনের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মায়ের সঙ্গে পরকীয়ার জেরে সবুজ ও তার দুলাভাই রফিকুল মিলে বিপুলকে হত্যার পর মৃতদেহ বস্তায় ভরে ফেলে যায়। সবুজ ও রফিকুলকে আটকের পর খুনের মূল কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) তৌহিদুল ইসলাম বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷

বগুড়ায় গার্মেন্টস কর্মীকে ধর্ষণের পর হত্যা  

বগুড়ার শাজাহানপুরের গন্ডগ্রাম থেকে উদ্ধার হওয়া গার্মেন্টস কর্মী মিম আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মিম বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে বগুড়ায় মায়ের বাড়িতে ফিরছিলেন। এরপর মধ্যরাতে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ি যাবার জন্য রিকশাতে উঠে আর বাড়ি ফিরতে পারেনি মিম।

নিহত মিম আক্তারের মা খায়রুন্নাহার জানান, এক বছর আগে বড় মেয়ে মিম চলে যান ঢাকার আশুলিয়ায়। সেখানে একটি গার্মেন্টসে কাজ নিয়ে সংসারের হাল ধরেন। তখন পরিচয় হয় রংপুরের রিপনের সঙ্গে। দুজনের সম্পর্ক গড়ে উঠলে পাঁচ মাস আগে বিয়ে হয় তাদের। কিন্তু বিয়ের পর রিপন স্ত্রীকে চাকরি করতে দিবে না। আর স্ত্রী মিম চাকরি করতে চান বগুড়ায় থাকা মা ও দুই ভাইকে সহযোগিতা করার জন্য। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে তাদের সংসার ভেঙে যায়। গত বুধবার (৩ জুন) মিমকে তালাক দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন রিপন।

পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রংপুরগামী বাসে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন মিম। নিজের ফোনটি স্বামী কেড়ে নেয়ায় বাসের সুপারভাইজারের ফোনে মা খায়রুন্নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন মিম। রাত ১২টা পেরিয়ে গেলেও মেয়ে বাসায় না ফিরলে মা খায়রুন্নাহার ফোন দেন বাসের সুপারভাইজারকে। তিন জানান রাত ১২টার দিকে মিমকে বনানী মোড়ে বাস থেকে নামিয়ে রিকশায় তুলে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সারা রাতেও ফেরেনি মিম আক্তার। এরপর সকালে পুলিশের ফোনে মেয়ের সন্ধান পেয়ে ছুটে যান কয়েক কিলোমিটার দূরে শাজাহানপুর উপজেলার গন্ডগ্রাম বুড়িতলা ফাঁকা মাঠে। সেখানে মেয়ে মিম আক্তারের নিথর দেহ দেখে শনাক্ত করেন।

সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তবে হত্যার ঘটনাটি এখনো ক্লুলেস।

নিহত মিম আক্তারের বাড়ি কাহালু উপজেলার কচুয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মিন্টু। ঢাকার একটি গার্মেন্টসে সহকারি অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

শ্রীমঙ্গলে মা-মেয়ের লাশ
শ্রীমঙ্গলে মা-মেয়ে খুনের খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় উপজেলার আশিদ্রোণ ইউনিয়নের পূর্ব জামসী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন জায়েদা বেগম (৫৫) ও তার মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার(২৫)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন।
শুক্রবার সকালে ঘর থেকে কেউ বের না হওয়ায় পাশের বাড়ির এক নারী ওই বাসায় ডাকাডাকি করেন। কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরের পেছনে গিয়ে দেখা যায় বেড়া ভাঙা। ওই নারী আশেপাশের লোকজন ডেকে ঘরের ভিতর ঢুকে দেখেন মা ও মেয়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ।
নিহত জায়েদার ছেলে ওয়াহিদ মিয়া বলেন, আমি আমার শ্বশুর বাড়িতে ছিলাম। আমার খালা আমাকে ফোন করে এ ঘটনা জানালে আমি এসে দেখি আমার মা ও বোনকে খুন করা হয়েছে। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী ধারনা করছেন মেয়ের জামাই এ কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে। এলাকার কারো সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ ছিল না বলেন জানান এলাকার লোকজন।

শুক্রবার মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান, শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আব্দুছ ছালেক ও পরিদর্শক সোহেল রানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  

খাগড়াছড়িতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী খুন

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত মরিয়ম বেগম(৬০) উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের সোবহানপুর ২ নম্বর কলোনির মৃত সামসুদ্দীনের স্ত্রী। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে প্রতিবেশী লেবু মিয়ার ছেলে হানিফ মিয়া ঘরে গিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মরিয়ম বেগমের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে প্রতিবেশীদের জানান। এ সময় তাকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। শরীরের কয়েক জায়গায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগসহ ঘরের মেঝে রক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়।

নিহত মরিয়মের মেয়ে মাহফুজা বেগম বলেন, আমার মায়ের কাছে গ্রামের অনেকেই টাকা জমা রাখে। দুই মাস আগেও একবার শোকেস ভেঙে টাকা চুরির ঘটনা ঘটে।

দীঘিনালা থানার ওসি উত্তম চন্দ্র দেব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

রংপুরে আইনজীবী খুন

রংপুরে আসাদুল হক (৬০) নামে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এক আইনজীবীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ধর্মদাস বারো আউলিয়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় রতন (২৬) নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক রতন ওই এলাকার মৃত জাফর আলীর ছেলে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, নিহত আইনজীবীর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী। করোনা পরিস্থিতিতে ছোট মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী গ্রামের বাড়ি মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া ছড়ান এলাকায় অবস্থান করছিলেন। ধর্মদাসের ওই বাড়িতে আসাদুল হক একা থাকতেন। শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন রতন। এ সময় আসাদুল হকের গলায় এবং পেটে ছুরিকাঘাত করে দেয়াল টপকে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা রতনকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়।

মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রোকনুজ্জামান বলেন, রতন নামে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা‌। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড এবং ঘটনার সঙ্গে আরো কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/৫জুন/কেএম)