সৃষ্টিকর্তা তো তাদের অভিযোগও শোনেন

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২০, ২০:৫৯

পারভেজ হাসান

দিন যত যাচ্ছে আমাদের হিংস্রতা ততোই বাড়ছে। আমাদের এখন ভাবতে বাধ্য করছে আমরা কি আসলেই সৃষ্টির সেরা জীব নাকি অন্য কিছু। যদি সেরা জীব-ই হব তাহলে আমাদের আচরণ পৃথিবীর সব ভয়ংকর প্রাণীদের থেকেও এতো হিংস্র কেন?

গতকাল চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাগমারায় একটি মেছো বাঘটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। মেছো বাঘটির চোখ মুখ দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। আর দু’পায়ি হিংস্র মনুষ্য প্রজাতিগুলো মৃত মেছো বাঘটিকে নিয়ে উল্লাস করছে। চিন্তা করে দেখুন, মনের ভেতরে কতটা বিষ জমা থাকলে প্রকাশ হয় হিংসা আর হিংস্রতায়। মনে হচ্ছে উল্লাস করে হিংসা আর হিংস্রতার নিষ্টুর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। দীর্ঘদিন মুখোশের আড়ালে হিংসা-ঘৃণা পরিপূর্ণ রাখা মনোভাবকে সুযোগ বুঝে প্রকাশ করেছে।

বনে জঙ্গলের প্রাণীগুলো খাবারের জন্য শিকার করলেও, মানুষ প্রজাতির এই প্রাণীগুলোকে দেখেছি স্বার্থের কারনে অথবা বিনা স্বার্থেও অবলা প্রাণীর উপর হিংস্রতা দেখাতে।

গতকালই তো ভারতের কেরালায় একটি গর্ভবতী হাতিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার হৃদয় বিদারক দৃশ্য আমরা দেখলাম। যা সবাইকে কষ্ট দিয়েছে।

তাছাড়া অল্প কিছুদিন আগে আমরা নিশ্চয় দেখেছি মাদারীপুরে বিষপ্রয়োগে ১৫টি বানরের হত্যা দৃশ্য। তারপরে দেখলাম সিলেটের জৈন্তাপুরে ৬টা শেয়াল, ১টা বেজি, ২টি বড় বাঘডাশাকে পিটিয়ে হত্যার দৃশ্য।

এইভাবে চলতে থাকলে অবলা এই প্রাণীগুলোর অভিশাপে একদিন আমাদের দেশে আরো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ আসবে। কারণ পৃথীবিটা তো তাদেরও। সৃষ্টিকর্তা তো তাদের অভিযোগও শোনেন।

তাই এখনই সময় অন্যদেশের হাতি মরার করুণ চিত্র দেখে কান্নার পাশাপাশি নিজের দেশের প্রাণীদের প্রতি মানবিক উদার মনোভাব পোষণ করা।

কারণ পৃথিবীতে সকল সৃষ্টিই কোনো না কোনো ভাবে প্রয়োজনীয়। আজ অবধি মানুষ ছাড়া কোনো প্রাণীকেই দেখলাম না প্রকৃতির ক্ষতি চাইতে। মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা স্বেচ্ছায় প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে। তাইতো প্রকৃতিও সুযোগ বুঝে প্রতিশোধ নিয়ে ব্যালেন্স ধরে রাখে।

অতএব আমাদের উচিৎ বন্যপ্রাণীর উপকারে আসে এমন প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরো বেশি কাজ করা। সেই সঙ্গে মানুষের হিংস্রত্ব মনোভাবকে দমিয়ে রাখার জন্য যথাযথ আইন করা উচিৎ। যাতে অদূর ভবিষ্যতে ‘মানুষ’ শব্দটির সঠিক সম্মান টিকে থাকে। না হয়, সম্মান সংকটে ভুগবে মানুষ, আর পশু নামের দখলে থাকবে সে সম্মান।

পৃথিবীটা মানুষ প্রাণীর পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীর জন্যও নিরাপদ হোক।

লেখক: পারভেজ হাসান, প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, সহমর্মিতা ফাউন্ডেশন

ঢাকাটাইমস/৫জুন/এসকেএস