ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের বিকল্প কিছু দেখছি না

আসাদুজ্জামান
 | প্রকাশিত : ০৫ জুন ২০২০, ২১:২১

আজ পৃথিবী বড্ড বেশী অসুস্থ। করোনা নামক এক অদৃশ্য শক্তির কাছে দুর্বল হয়ে পড়েছে পৃথিবীটা। স্বাভাবিক জীবন আজ স্থবির। করোনার ভয়াল ছোবল থেকে আমাদের বাংলাদেশ রক্ষা পায়নি। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।

জীবিকার প্রয়োজনে তাই বলে আমাদের জীবনের কাজ থেমে নেই। সব আতংক আর উৎকন্ঠাকে পেছনে ফেলে ছুটে যেতে হয় সম্মুখ পানে।

দেশের অর্থনীতি খাতকে চাঙা রাখতে ব্যাংকারদের সব আতঙ্ক, উৎকণ্ঠাকে পদদলিত করে অবিরাম ছুটে চলা করোনাকালীন সময়ে সত্যিই প্রশংসনীয়। ইতিমধ্যে ১০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিজেদের জীবন দিয়েছেন। ব্যাংকারদের মাঝে আক্রান্তের সংখ্যাও কয়েকশো ছাড়িয়েছে। তবুও থেমে নেই ব্যাংকিং কার্যক্রম।

আমরা দেখেছি লকডাউন এর এই সময়েও ব্যাংকে উপচে পড়া ভিড়। শারিরীক দূরত্ব মেনে চলা কঠিন। মাত্র ৫০০ টাকা উত্তলনের জন্যও ব্যাংকে এই সময়েও গ্রাহকের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব নিয়ে আরও বেশী ভাবিয়ে তুলেছে। তাই করোনা নামক এই অদেখা শত্রু আমাদের বুঝিয়ে দিল ডিজিটাল ব্যাংকিং এর বিকল্প কিছু নেই।

গত এক দশকে ডিজিটাল ব্যাংকিং এর সেবা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সম্প্রতি সময়ে ব্যাংক তার সেই পুরাতন নিয়ম নীতি থেকে বেড়িয়ে এসেছে। হয়ে উঠেছে আধুনিক ব্যাংকিং। কিন্তু কতটা সফল? ব্যাংকের একার পক্ষে ডিজিটাল ব্যাংকিং গড়ে তোলা সম্ভব নয়। গ্রাহকদের সঠিক ব্যবহার এই ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার পরিধি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি, চাকরির আবেদন ফি-সহ নানান বিল জমা দিতে এখন ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সেবা নিচ্ছে অনেক গ্রাহক। কিন্তু সেই সংখ্যাটা খুবই কম।

যে মানুষটি ফেসবুক আর ইন্টারনেট নির্ভর তার জীবনের নানান প্রয়োজন মেটাতে, ঠিক এই মানুষটি নিজের ব্যাংকিং প্রয়োজন মেটাতে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা নিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আর অন্যদিকে সব ব্যাংক এখনো আসতে পারিনি সম্পূর্ণরুপে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার আওতায়। আর তাই আন্তঃব্যাংকিং কাজ মেটাতে গ্রাহকদের ব্যাংকের শাখার ভিড় করতে হচ্ছে। যার ফলে একদিকে সময় আর শ্রম দিতে হচ্ছে অন্যদিকে এই কঠিন সময়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে।

সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করার সময় এখনই। এই করোনা কালীন সময়ে দি সিটি ব্যাংকের "সিটি টাচ " ডিজিটাল ব্যাংকিং দারুণ সাড়া ফেলেছে গ্রাহকদের কাছে। একটা স্মার্ট ফোন আর সাথে "সিটি টাচ" ব্যাংকিং ব্যবস্থা হাতের মুঠোয়। সিটি ব্যাংকের আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ডের বিল ইন্সট্যান্ট জমা দেওয়া যায় বিকাশ থেকে তাদের এই সেবা অনেক গ্রাহকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

এছাড়াও ব্রাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ডাচবাংলা ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক তাদের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা করোনাকালীন এই সময়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং এর গুরুত্ব বুঝিয়েছে।

অধিকাংশ গ্রাহকদের বিকল্প ব্যাংকিং সেবা নিতে নিরাপত্তা বিষয়টি নিয়েই ভাবে। তাই ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে বড় শত্রু দুইটি বলে আমি মনে করি- নিরাপত্তা আর আমাদের সদিচ্ছার অভাব। নিরাপত্তার বিষয়টি ব্যাংক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে আরও আধুনিক, সহজলভ্য করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বিকল্প ব্যাংকিং সেবা। কিন্তু গ্রাহকদের সদিচ্ছা জোড়দার হবে কিভাবে?

নিজ নিজ ব্যাংকের উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবহারের সুবিধা, তাদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম এসবের উপর ভারচুয়াল প্রচারণা জোড়দারের পাশাপাশি, ব্যাংক কর্মকর্তাদের আরও আন্তরিকতার সাথে গ্রাহকদের বোঝাতে হবে। সর্বোপরী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচারণা, নিরদেশনা গ্রাহকদের আরও বেশী আস্থা রাখতে সক্ষম হবে ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা।

বিশ্ব এখন প্রতিদিন আধুনিক হচ্ছে। ব্যাংকের শাখা কমে যাচ্ছে, বাড়ছে ঘরে বসে হাতের মুঠোয় ব্যাংকিং কাজ করার আধুনিক ব্যবস্থা। আগামী দিনে হয়তো ঋণ সংক্রান্ত কাজ আর বড় বড় লেনদেন মেটাতে মানুষ ব্যাংকে যাবে। গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ হবে ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে, চালু হবে ই-সিগনেচার। গড়ে উঠবে আধুনিক সব বিকল্প ব্যাংকিং সেবা।

তাই এখনই সময় ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আরও জোড়দার হওয়া। ডিজিটাল প্রতারণার দিকে নজর দিয়ে ব্যাংকগুলোতে অঞগ, ঈউগ (ঈধংয উবঢ়ড়ংরঃ গধপযরহব), র নধহশরহম, ড়হষরহব নধহশরহম সহ বিকল্প ব্যাংকিং ব্যবস্থা আরও নিরাপত্তা ও সহজলভ্য করে তোলা উচিৎ।

করোনা নামক এই অচেনা ভাইরাস আমাদের অনেক কিছু চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। তাই আমরা যারা নিজেরা এখনো ডিজিটাল ব্যাংকিং এর সেবা নিতে চাই না। তাদের উচিত নিজ নিজ ব্যাংকের বিকল্প ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেয়া। সময় এখন পাল্টে যাচ্ছে। হয়তো সামনে আরও বেশী পাল্টে যাবে। ব্যাংকার আর গ্রাহক উভয়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরাপত্তার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের বিকল্প কিছু ভাবা বোকামি।

আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা এগিয়ে যাবে আরও বহুদূর। আমরা হবো আরও আধুনিক ও দক্ষ। করোনার শিক্ষা আমরা সঠিক কাজে লাগিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবো। ইনশাল্লাহ।

লেখক: ব্যাংকার ও তরুণ লেখক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :