জীবনের উদ্দেশ্য না থাকলে মানুষের মৃত্যু আগে হয়

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২০, ১২:৩৬

রাজুব ভৌমিক

শরীর থেকে আত্মাত্যাগে শুধু মানুষের মৃত্যু হয় না। স্বপ্নভঙ্গ হয়ে স্বপ্নহীন জীবন-যাপন বা জীবনের উদ্দেশ্য না থাকলে মানুষের মৃত্যু অনেক আগেই হয়ে যায়। মানুষের দেহ থেকে আত্মা চলে গেলে আমরা তাকে মৃত বলে থাকি। কেন? কারণ আত্মা ছাড়া দেহ চলতে পারে না। আমাদের শরীরের আত্মাটি একটি গাড়ির ইঞ্জিনের মতো যা ছাড়া একটি গাড়ি চলতে পারে না।

উপরন্তু একটি ইঞ্জিন চলতে হলে তার গ্যাস বা পেট্রোলের প্রয়োজন। গ্যাস বা পেট্রোল ছাড়া একটি গাড়ির ইঞ্জিন বেশিক্ষণ টিকে না। একসময় ইঞ্জিনটি বিকল হয়ে যায়। তেমনি মানুষের শরীর বেঁচে থাকার জন্য আত্মার প্রয়োজন কিন্তু আত্মা চলতে দরকার নানা ধরনের স্বপ্ন এবং উদ্দেশ্য। স্বপ্ন এবং উদ্দেশ্য ছাড়া মানুষের আত্মা বিকল হয়ে যায়। তথাপি তার অপমৃত্যু হয়ে যায়। তখন মানুষের বেঁচে থাকার কোন মূল্য নেই। যেমনটি নেই পেট্রোল বা গ্যাস বিহীন একটি গাড়ির।

মানুষ মানে স্বপ্নের মৌচাক- যেমন মৌমাছি মানে মধুর মৌচাক। আপনি যদি হঠাৎ একটি মৌমাছি দেখেন তাহলে অবশ্যই নিশ্চিত করে বলতে পারেন যে আশেপাশেই মৌমাছির মৌচাক আছে। ঠিক তেমনি আপনি যখন একটি মানুষকে দেখেন তখন বোঝা যায় যে তার মধ্যে আছে এক স্বপ্নপুরী। যার তাড়নায় সে দিনের পর দিন পরিশ্রম করে যায়। কিন্তু মানুষের সব স্বপ্ন পূরণ হয় না। এটাই স্বাভাবিক।

তাই বলে স্বপ্নভঙ্গে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। হায় হুতাশ করলে চলবে না। আবার উঠে বসতে হবে। নতুন করে স্বপ্নের বীজ বপন করতে হবে। সে স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য লড়তে হবে। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নের সময় জানা উচিত যে এই স্বপ্নও ভেঙে যেতে পারে। তাতে নিকট ভবিষ্যতে স্বপ্নভঙ্গ হলে মানসিকভাবে বড় আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবে। মানুষের অধিকাংশ স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় তাই বলে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কম পরিশ্রম করলে হবে না। বরং যতবেশি সম্ভব নিজের সর্বস্য উজাড় করে দিতে হবে।

স্বপ্নের পিছনে এমনভাবে দৌড়তে হবে যেমনটি আমরা আমাদের জীবনের প্রথম ভালবাসার মানুষকে পেতে চাই। তাতে আপনি আপনার ভালবাসার মানুষকে না পেলেও স্বপ্ন বাস্তবায়ন প্রায় নিশ্চিত। আপনার জীবনের স্বপ্নটি আপনার কাছ থেকে পূর্ণ সমর্পণ চায় আর কিছু না। নিজকে স্বপ্নের কাছে পুরোপুরিভাবে সমর্পণ করলে সে স্বপ্ন আপনার কাছে এসে ধরা দিতে বাধ্য হবে।

অযথা হাতের কেটে রক্ত দিয়ে ভালবাসার মানুষকে চিঠি দিয়ে মন জয় করার চেষ্টা করবেন না। এতে যদি আপনার ভালবাসার মানুষটি আপনার কাছে ধরা দেয় তাহলে সে একজন রক্তপিপাসু। আর রক্ত-পিপাসু কখনো ভাল জীবনের সঙ্গী হতে পারে না। স্বপ্নের কাছে নিজেকে সমর্পণ করলে সে আপনার জাত, ধর্ম, বর্ণ, বা বিত্ত বিচার করবে না। ভালবাসার মানুষকে পেতে নিজেকে সমর্পণ করলে সে আপনার দোষ খুঁজতে পারে। কিন্তু স্বপ্নে সমর্পণ করলে সে আপনার দোষ খুঁজবে না।

অধিকাংশ স্বপ্নভঙ্গের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। কারণ আমরা স্বপ্নে তাড়নায় আমরা নানা ভুল করে থাকি। তাতে বিচলিত না হওয়াটাই উত্তম। মানুষ মাত্রই ভুল করে। আর ভুল করলে সে ভুলের দায়িত্ব আপনি সাথে সাথে নিন এবং নিজেকে দ্রুত শোধরে নিন। ভুল থেকে শিক্ষা নিন। কিন্তু ভুলেও অন্যের দোষ দিবেন না। নিজের ভুলের জন্য অন্যকে দোষী করলে আপনি কখনোই নিজের ভুল শোধরাতে পারবেন না। আর ভুল শোধরাতে না পারলে ভবিষ্যতে জীবনের লক্ষ্য বা স্বপ্ন পূরণ করা অসম্ভব হয়ে যায়।

যেহেতু আপনার স্বপ্ন বা লক্ষ্য পূরণে অন্যরা জড়িত থাকবে কারণ মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব এবং সে সমাজব্যতীত চলতে পারে না। তাই বলে আপনার ভুলের জন্য অন্যের দোষ দিলে চলবে না। নিজের ভুল স্বীকার করে আবার স্বপ্ন রোপনে লেগে যেতে হবে। কিন্তু একবার স্বপ্নভঙ্গে যদি হতাশ হয়ে ঘরে বসে থাকেন বা জীবনের আশা হারিয়ে ফেলেন তাহলে ধীরে ধীরে আপনার মৃত্যু হবে।

যেমন ধরুন, আপনি আপনার জীবনের একটি স্বপ্ন (সৌদি যাবেন) বাস্তবায়নের জন্য সব কিছু উজাড় (জায়গা সম্পত্তি/বাড়ি ভিটা সব বিক্রী) করে দিলেন কিন্তু কোনও কারনে (জাল ভিসা বা দালাল) আপনার স্বপ্ন পূরণ হলো না। এখন কি করবেন? একটু কেঁদে নিন। কাঁদলে মন ভাল থাকে। তারপর আবার একই স্বপ্ন বা ভিন্ন স্বপ্ন দেখা শুরু করুন এবং সেইজন্য পরিশ্রম করে যান। অযথা ঘরে বসে হায় হুতাশ করলে মানসিক চাপে ভুগবেন। আর মানসিক চাপই সকল রোগের কারণ এবং ধীরে ধীরে রোগাক্রান্ত হয়ে আপনার শারীরিক মৃত্যুও হয়ে যাবে। তাই জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজেন, স্বপ্ন দেখেন, এবং তার জন্য পরিশ্রম করে যান। সফলতা একদিন আপনার কাছে এসে ধরা অবশ্যই দিবে।

লেখক:  লেখক ও পুলিশ কর্মকর্তা, নিউইয়র্ক

ঢাকাটাইমস/৬জুন/এসকেএস