পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে নিন

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২০, ১৪:০৬

রিয়াদ রহমান

যারা নিজেকে পরিবর্তন করতে ভাবছে,সাথে এটাও ভাবছেন আশেপাশের মানুষজন কি বলবে? হঠাৎ করেই কিছু মানুষের পরিবর্তন দেখে অনেকে অবাক হওয়া? অনেকে আবার বলতে থাকে এসব লোক দেখানো ঢং। অনেকে বলে -আরে এ তো আগে এত খারাপ ছিল। আল্লাহ তো মাফই করবেনা এদের। অনেকের আবার ধারনা বেশি খারাপ বখে যাওয়া বাউন্ডুলে ছেলে-মেয়েগুলোই একসময় একদম লাইনে আসে আলিফের মতো সোজা হয়ে।

দুনিয়াবী হালে চলা ছেলে-মেয়েগুলোকে দেখে অনেকে আবার বলে বসে-এরা জীবনেও চেইন্জ হবেনা। পুরাই জাহান্নামী। আচ্ছা ! কোনো মানুষের পরিবর্তন কি আপনার হাতে? একটা বেপর্দা ফ্যাশনেবল মেয়ে হঠাৎ করেই নিজেকে ঢেকে নেয় বোরখা /পর্দার আড়ালে। কি এমন হলো হঠাৎ? কেন এমন হয়ে গেল মেয়েটা!

বড় বড় বিলবোর্ড সহ ফ্যাশন হাউসের ফোটোশুট এবং টিভি মিডিয়ার অভিনয় করা ছেলেটা অথবা একটা গীটার হাতে নেওয়া,বড় বড় চুলওয়ালা, হাতে চুড়ির মতো বয়লা/ব্রেসলেট পরা বা থ্রি-কোয়ার্টার প্যন্ট পরে বেড়ানো ছেলেটা হঠাৎ করেই গান-বাজনা,আড্ডা ছেড়ে নামাজ কালাম ও ধার্মিক হয়ে উঠা। কি? খুব সহজ মনে হচ্ছে?

এমন শত শত পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে হাজার রকম গল্প। এমন ফিরে আসার গল্পগুলো শুনতে চেয়েছেন? আপনি আপনার মতো করে সবাইকে ভাবছেন, কিন্তু হতেও পারে ঐ মানুষগুলোর এমন কোনো গোপন আমল/ ভাল কাজ আছে যা আল্লাহর কাছে এতটাই প্রিয় হয়েছে যে আল্লাহ তাদের কে সিরাতুল মুস্তাকিমের (সরল পথের) ঠিকানাা দেখিয়েছেন। তাই বাইরের রূপ/বাহ্যিকদিক দেখে কাউকে নিয়ে বাজে ধারনা বা মন্তব্য করা একদমই ঠিক নাহ।

পরিবর্তন যেকোনো সময় হতে পারে, যেকোনো মুহূর্তে বা বয়সে। কারন, হিদায়াত একমাত্র আল্লাহর হাতে।
“তিনি যাকে ইচ্ছা তাঁর রহমতে দাখিল করেন “ সূরা:আদ-দাহর-৩১। “তিনি যাকে চান বিপদগামী করেন এবং যাকে চান সঠিক ও সোজা পথে পরিচালিত করেন” - সূরা আল আনআম -৩৯। তাই মন্তব্য না করে কারও মাঝে খারাপ কিছু দেখলে তার জন্য দোআ করাই মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য, রাসূলের দেখানো পথ।

জেনারেল থেকে উঠে আসা একটি ছেলের প্রাকটিসিং মুসলিম হওয়া অনেক বড় ব্যাপার.প্রথম বাঁধা আসে পরিবার থেকে। কেমন যেন সন্দেহ, ছেলে বুঝি জঙ্গি হয়ে গেছে। আমাদের দেশের মিডিয়া অনেকটাই সফল, প্রথম প্রথম কেউ ইসলামকে ভালভাবে মানতে গেলে জঙ্গি তকমা লাগিয়ে দেয়।

ছেলেটির দাড়ি বড় হতে থাকে আর চারপাশ থেকে প্রেশার আসতে থাকে। এত ছোট বয়সে কেন দাড়ি রাখছো? দাড়ি যখন ছোট ছিল, বলতো, ছোট করে দাড়ি রাখছো কেন শিবির শিবির লাগে। যখন বড় হলো শুনলাম এত ছোট বয়সে দাড়ি বড় করলা? এখন ছোট রাখো, বিয়ে হয় কিনা কে জানে? টাকনুর উপরে প্যান্ট পড়াতে ক্ষ্যাত তকমা লাগতে পারে।

আপনি ইসলামে প্রবেশের সাথে সাথে চারপাশটা অনেকখানি সংকীর্ণ হয়ে যাবে। বন্ধুরা বাঁকা দৃষ্টিতে দেখবে, মেয়েদের থেকে এড়িয়ে চলাটা গেয়ো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকেও একটা ভ্রু কুঁচকানো ব্যবহার পাবেন।

এসময়ে ভেতর থেকে আলাদা একটা হেদায়েতের পরশ পাবেন। আশেপাশের কঠিন পরিস্থিতির সাথে লড়তে লড়তে ভেতরের ঈমান শক্ত হবে। (তবে অনেকেরই এ সময়ে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে ঈমান দূর্বল হয়ে ভেঙে যায়।) আল্লাহ আপনাকে প্রশস্ততা দান করবেন। আপনার চারপাশে ইসলামকে মানে এমন অনেককেই পেয়ে যাবেন।

যেহেতু এ সময়ে পরিবারের কেউ প্রাক্টিসিং না, আপনাকে পরিবারের বিশেষ সময়গুলো ধৈর্য ও কৌশলের সাথে মোকাবিলা করতে হবে। টিভি দেখা, গান শোনা, হলুদ জন্মদিনের অনুষ্ঠানগুলোতে এভয়েড করে চলা যথেষ্ট কঠিন কাজ। কিছুদিনের মধ্যেই অবশ্য পরিবারের সদস্যগণ আপনার এই ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং আপনার কোমল ব্যবহার ও বুঝানোতে হয়ত কেউ কেউ ইসলামকে মানার চেষ্টা করতে পারে।

চাকরির বাজারে এসে আপনি বিশাল শূন্যতার মধ্যে পড়বেন। আপনি আগের থেকে প্রাকটিসিং হলে কিছুটা ভালো। কিন্তু চাকরিতে এসে প্রাকটিসিং হলে আবার সঙ্কীর্নতায় পড়তে হবে। এতদিনের জব ফিল্ড পরিবর্তন করে নতুন হালাল রিযিকের সন্ধান করা ঈমানের প্রতি বিশাল ধাক্কা। আপনি এতদিনের জীবন যাত্রার মান নামাতে পারবেন না, আবার চাহিদা ভিত্তিক হালাল চাকরিও পাবেন না।

জীবন যেন দুঃসহ হয়ে যাচ্ছে। নতুন এ পরিবর্তন পরিবারের মানুষও ভালভাবে নিবে না। আপনি ধৈর্য ও আল্লাহর উপর ভরসা করে হালাল রিযিকের চেষ্টা করতে থাকলেন। কোনো সম্ভাবনা না দেখলেও আল্লাহ বিশেষ জায়গা থেকে হালাল উত্তম রিযিকের ব্যবস্থা করে দিবেন।

আপনি নিজেকে কিছুটা গোছালেও পরিবার বন্ধুদের জন্য সবসময় মন ছটফট করতে থাকে। আপনি দোয়া করছেন, সেই সাথে দাওয়াহ-র কাজও বিভিন্নভাবে করে যাচ্ছেন। আপনার স্বপ্ন কোন একদিন ফজরের জন্য ঘুম থেকে উঠে দেখবেন আপনার আগেই আপনার বাবা ভাই ছেলে ওজু করে রেডি হয়ে আছেন মসজিদে যাবে, মা বোন কন্যা নামাজ পড়ছেন।

আপনি ফজরের নামাজের জন্য ইমামের পেছনে দাঁড়িয়েছেন। আজ যেন অনেক সুমধুর লাগছে নামাজে কুরআন তিলাওয়াত। ভেতর থেকে কান্না চেপে আসছে। কত বছরের স্বপ্ন পরিবারের সবাই নামাজ পড়বে। বাবা ভাই সন্তান মসজিদে পাশাপাশি দাড়িয়ে ফজরে দীর্ঘ কুরআন তিলাওয়াত শুনবে। নামাজ শেষ হলো। বুক ভরা নিঃশাসে নিজেকে অনেক হালকা লাগছে। কত বছরের দোয়া স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিলো।

এমনই আরেকটি সকালের অপেক্ষায় আছি। সেই সকাল হবে আরাফার ময়দানে। পরিবারের সব সদস্য যেন হজ্জ করতে পারেন।। আল্লাহ তুমি কবুল করো। আরাফার ময়দানে নিঃশাস নেওয়ার মতো সৌভাগ্য দান করো। আমীন।

যদি প্রপারলি মানা হয় তাহলে ইসলাম এর মতো সহজ আর কিছু নেই। বাট আমরা ইসলাম থেকে দূরে,আমরা দাবি করি আমরা মুসলিম,আমরা আসলে কত টুক মানি? আমরাই ইসলামকে কঠিন করে রেখেছি। অতএব এসব থেকে বের হতে হলে ইসলাম প্রাকটিস অবশই দরকার। সেই সাথে দরকার ইসলামিক স্টাডি। মুসলিমরা তো মুখ খুলে দাওয়াত দিবে পারে। আহারে মুসলিমদের তো চলা ফেরাই হবে দাওয়াত। আমাদের গোল হবে আখিরাত,আমরা আখিরাতকে সামনে রেখে দুনিয়া করবো,বাট আমরা আজকে দুনিয়া করতে করতে হাফ ডেড হয়ে যাচ্ছি। আর বুড়ো হলে মসজিদ এ যাচ্ছি। কিন্তু আল্লাহ বলেন যুবক বয়সের এবাদত আল্লাহের কাছে বেশি প্রিয়। আর কেও কেও বলেন যে এতো ইসলামিক হয়ে লাভ কি?

আল্লাহ তো কারো আমাল দেখে জান্নাত দিবেন না। আল্লাহ মানুষের দিল আর মানবতা দেখেন, এবার বলি ভাই শুনেন,মানলাম আল্লাহ কাকে কোন কাজের বিনিময়ে জান্নাত দিবেন কেউ জানিনা। তাই বলে ইসলাম থেকে দূরে সরে শুধু বিড়াল / কুকুরকে পানি খাইয়ে যে আমিও জান্নাত পেয়ে যাবো। সেটাও আশা করা বোকামি, সুতরাং আপনি যখন পরিপূর্ণ মুসলিম হবেন আল্লাহ অটোমেটিক আপনার মধ্যে এইসব দিয়ে দেবেন। সেজন্য আল্লাহর রহমত এর আশা করুন ও দুআ করুন এবং কুরআন সুন্নাহের রুলস অনুযায়ী চলুন।

সুতরাং আমি আমার নিজের জায়গা থেকে নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে আমার প্রোফাইলে কিছু ইসলামিক পোস্ট শেয়ার দেখেই ভাববেন না যে আমি খুব দ্বীনদার এবং ধর্মপরায়ণ সাজছি। আমি ষ্টীল নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করছি এবং বিয়ের ক্ষেত্রে এমন কারো জীবনসঙ্গী হোন যে সবসময় আপনাকে আল্লাহর কথা স্বরণ করিয়ে দেয়। একজন পুরুষের জীবনে সবচেয়ে দামি উপহার হলো - একজন দ্বীনদার বিশ্বস্ত স্ত্রী। আর তাই নিজেকেও এখন থেকেই সেইভাবে তৈরি করুন। হালাল হারাম মেনে চলুন। You Don't Have To Beautiful Or Richman.You Have To Be Proper Religious Or Deendar.

দুনিয়ার সুন্দরী স্ত্রী পাওয়ার জন্য আপনাকে সুদর্শন হতে হবে না, হতে হবে ধনবান l আর দ্বীনদার স্ত্রী পাওয়ার জন্য আপনাকে ধনবান হতে হবে না, হতে হবে দ্বীনদার l একজন দ্বীনদার বিবি হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নেয়ামত। আপনি সেটা না পেলে আপনি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হলেন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ" গোটা দুনিয়াই হলো সম্পদ, আর দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ হল নেককার বিবি।"(মুসলিম শরীফ, মিশকাত- পৃষ্ঠা-২৬৭).

তাই দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদের মালিক হতে হলে বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই দ্বীনদারীতাকে প্রাধান্য দিন। আরেকটা কথা বলতে চাই. কাউকে পূর্বের গুনাহের জন্য খোটা দিওনা, হয়তো সে তওবা করে আল্লাহর কাছে তোমার চেয়ে উত্তম হয়ে গেছে.আল্লাহ সুবহানাহুতাআলা প্রথমে আমাকে এবং সবাইকে হিদায়াত দান করুন। আমিন।

ঢাকাটাইমস/৬জুন/এসকেএস