পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ১০ জন নিহত
প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২০, ১৮:০১ | আপডেট: ০৬ জুন ২০২০, ২২:৪২
দেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ভোলা ও হবিগঞ্জে এসব ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ-
মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের বজ্রপাতে এক কৃষকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে পৃথক এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন বড়লেখা উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউপির গল্লাসাঙ্গন গ্রামের ইসহাক আলীর ছেলে আব্দুল মতিন (৫৫), বর্ণি ইউনিয়নের কাজিরবন্দ গ্রামের মৃত রমিজ আলীর ছেলে রুবেল আহমদ (২৫) এবং কমলগঞ্জ উপজেলার আব্দুল লতিফ (১২)।
থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ১০টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে আব্দুল মতিন বাড়ির পাশে সবজি ক্ষেতে কাজ করতে যান। এ সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলে তিনি প্রাণ হারান। পরে স্থানীয় লোকজন আব্দুল মতিনের লাশ জমিতে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। স্থানীয় ইউপি সদস্য রশিদ আহমদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রুবেল আহমদ কাজিরবন্দ এলাকার একটি খালে ঠেলাজাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান। পরে আশপাশের লোকজন রুবেলের লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বজ্রপাতে আব্দুল লতিফ (১২) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সে কমলগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গোলেরহাওর গ্রামের ওলিউর রহমানের ছেলে। শনিবার দুপুর ২টার দিকে ঝড়-বৃষ্টির সময় দক্ষিণ গোলেরহাওড় গ্রামে জমি থেকে গরু আনতে গেলে বজ্রাঘাতে আহত হয় সে।
পরে স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম মঞ্জু মিয়া (৩৫)। তিনি উপজেলার সেলবরস ইউনিয়নের সলফ গ্রামের ফুলচান মিয়ার ছেলে। শনিবার সকাল ৯টার দিকে বজ্রপাতে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহতের বাড়ির পাশে জলধরা হাওরে নৌকা দিয়ে মাছ ধরতে যান ওই কৃষক। এমন সময় বজ্রপাত হলে তিনি আহত হন। তাকে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মরদেহ পরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বজ্রপাতে সেলিম মিয়া (৩০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর গ্রামের আহসান উল্লার ছেলে এবং পেশায় জেলে। শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মেন্দিপুর মেঘনা নদী সংলগ্ন স্থানে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ার সময় সেলিম নিজের বাড়ি থেকে ছাতা মাথা দিয়ে রাস্তায় বের হন। হঠাৎ বজ্রপাতের বিকট শব্দে ঘটনাস্থলেই লুটে পড়েন তিনি। পরে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল থেকে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ভৈরব থানার পুলিশ পরির্দশক (তদন্ত) বাহালুল আলম খান বলেন, বজ্রপাতে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এই বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।
ভোলা:
ভোলায় ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে আব্দুল মালেক (৬০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এসময় মোহাম্মদ আলী (৪৫) ও মো. কাসেম (৫০) নামে দুই কৃষক আহত হয়েছেন। নিহত আব্দুল মালেক ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরকালি গ্রামের মৃত মুকবুল আহম্মেদের ছেলে। আহতরা একই গ্রামের বাসিন্দা।
এলাকাবাসী জানান, সকাল থেকেই বাড়ির পাশের বিলে ধান ক্ষেতে কাজ করছিলেন আব্দুল মালেকসহ আলী ও কাসেম। দুপুর দেড় টার দিকে বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। এ সময় বজ্রপাত আব্দুল মালেকের গায়ে পরলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। তার সঙ্গে থাকা মোহাম্মদ আলী ও মো. কাসেম আহত হন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়।
ভেলুমিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. আরমান হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
হবিগঞ্জ:
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জে বজ্রপাতে বৃদ্ধসহ তিনজন নিহতের পর এবার চুনারুঘাটে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১০ জন। শনিবার বেলা ১১টার থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার আজমিরীগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ ও চুনারুঘাটে পৃথক তিন ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- আজমিরীগঞ্জ উপজেলার রনিয়া গ্রামের মৃত মালিক মিয়ার ছেলে মারফত আলী (১৭), একই গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে রবিন (১৬), শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর গ্রামের তুতা মিয়ার ছেলে আছকির মিয়া এবং চুনারুঘাট উপজেলার দোহা লালচাঁন এলাকার শহীদ মিয়ার ছেলে শাহজাহান মিয়া (৪৫)।
(ঢাকাটাইমস/৬জুন/কেএম)